Notes 26- Sura Kahf 60 to 83

কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা ২০২২

প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ ২৬

সূরা কাহাফ (৬০-৮২)

এ ঘটনায় মূসা’ নামে প্রসিদ্ধ নবী মূসা ইবনে ইমরান আলাইহিস সালাম-কে বোঝানো হয়েছে। فتى এর শাব্দিক অর্থ যুবক। শব্দটিকে কোন বিশেষ ব্যক্তির সাথে সম্বন্ধ করা হলে অর্থ হয় খাদেম। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, এই খাদেম ছিল ইউশা ইবনে নূন। (مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ) এর শাব্দিক অর্থ দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থল। বলাবাহুল্য, এ ধরনের স্থান দুনিয়াতে অসংখ্য আছে। এখানে কোন জায়গা বোঝানো হয়েছে, কুরআন ও হাদীসে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তাই ইঙ্গিত ও লক্ষণাদী দৃষ্টি তাফসীরবিদদের উক্তি বিভিন্নরূপ।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ একদিন মূসা ‘আলাইহিস সালাম বনী-ইসরাঈলের এক সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলঃ সব মানুষের মধ্যে অধিক জ্ঞানী কে? মূসা আলাইহিস সালাম-এর জানামতে তার চাইতে অধিক জ্ঞানী আর কেউ ছিল না। তাই বললেনঃ আমিই সবার চাইতে অধিক জ্ঞানী। আল্লাহ তা’আলা তাঁর নৈকট্যশীল বান্দাদেরকে বিশেষভাবে গড়ে তোলেন। তাই এ জবাব তিনি পছন্দ করলেন না। এখানে বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়াই ছিল আদব। অর্থাৎ একথা বলে দেয়া উচিত ছিল যে, আল্লাহ তা’আলাই ভাল জানেন, কে অধিক জ্ঞানী। এ জবাবের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে মূসা আলাইহিস সালাম-কে তিরস্কার করে ওহী নাযিল হল যে, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে অবস্থানকারী আমার এক বান্দা আপনার চাইতে অধিক জ্ঞানী। একথা শুনে মূসা ‘আলাইহিস সালাম প্রার্থনা জানালেন যে, তিনি অধিক জ্ঞানী হলে তার কাছ থেকে জ্ঞান লাভের জন্য আমার সফর করা উচিত।

তাই বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাকে তার ঠিকানা বলে দিন। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে নিন এবং দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলের দিকে সফর করুন। যেখানে পৌঁছার পর মাছটি নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে, সেখানেই আমার এই বান্দার সাক্ষাত পাবেন। মূসা ‘আলাইহিস সালাম নির্দেশমত থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তার সাথে তার খাদেম ইউশা ইবনে নূনও ছিল। পথিমধ্যে একটি প্রস্তর খণ্ডের উপর মাথা রেখে তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। এখানে হঠাৎ মাছটি নড়াচড়া করতে লাগল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেল। (মাছটি জীবিত হয়ে সমুদ্রে যাওয়ার সাথে সাথে আরো একটি মু’জিযা প্রকাশ পেল যে,) মাছটি সমুদ্রের যে পথ দিয়ে চলে গেল, আল্লাহ তা’আলা সে পথে পানির স্রোত বন্ধ করে দিলেন। ফলে সেখানে পানির মধ্যে একটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল। ইউশা’ ইবনে নূন এই আশ্চর্যজনক ঘটনা নিরীক্ষণ করছিল।

মূসা আলাইহিস সালাম নিদ্রিত ছিলেন। যখন জাগ্রত হলেন, তখন ইউশা ইবনে নুন মাছের এই আশ্চর্যজনক ঘটনা তার কাছে বলতে ভুলে গেলেন এবং সেখান থেকে সামনে রওয়ানা হয়ে গেলেন। পূর্ণ একদিন একরাত সফর করার পর সকাল বেলায় মূসা ‘আলাইহিস সালাম খাদেমকে বললেনঃ আমাদের নাশ্‌তা আন। এই সফরে যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। নাশতা চাওয়ার পর ইউশা ইবনে নুনের মাছের ঘটনা মনে পড়ে গেল। সে ভুলে যাওয়ার ওযর পেশ করে বললঃ শয়তান আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। অতঃপর বললঃ মৃত মাছটি জীবিত হয়ে আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রে চলে গেছে। তখন মূসা আলাইহিস সালাম বললেনঃ সে স্থানটিই তো আমাদের লক্ষ্য ছিল। (অৰ্থাৎ মাছের জীবিত হয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার স্থানটিই ছিল গন্তব্যস্থল।) সে মতে তৎক্ষণাৎ তারা ফিরে চললেন এবং স্থানটি পাওয়ার জন্য পূর্বের পথ ধরেই চললেন।

প্রস্তরখণ্ডের নিকট পৌছে দেখলেন, এক ব্যক্তি আপাদমস্তক চাদরে আবৃত হয়ে শুয়ে আছে। মূসা আলাইহিস সালাম তদাবস্থায় সালাম করলে খিযির ‘আলাইহিস সালাম বললেনঃ এই (জনমানবহীন) প্রান্তরে সালাম কোথা থেকে এল? মূসা ‘আলাইহিস সালাম বললেনঃ আমি মূসা। খিযির ‘আলাইহিস সালাম প্রশ্ন করলেনঃ বনী-ইসরাঈলের মূসা? তিনি জবাব দিলেনঃ হ্যাঁ, আমিই বনী-ইসরাঈলের মূসা। আমি আপনার কাছ থেকে ঐ বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে এসেছি, যা আল্লাহ তা’আলা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। খিযির বললেনঃ যদি আপনি আমার সাথে থাকতে চান, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি নিজে তার স্বরূপ বলে দেই।

একথা বলার পর উভয়ে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। ঘটনাক্রমে একটি নৌকা এসে গেলে তারা নৌকায় আরোহণের ব্যাপারে কথাবার্তা বললেন। মাঝিরা খিযিরকে চিনে ফেলল এবং কোন রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই তাদেরকে নৌকায় তুলে নিল। নৌকায় চড়েই খিযির কুড়ালের সাহায্যে নৌকার একটি তক্তা তুলে ফেললেন। এতে মূসা আলাইহিস সালাম (স্থির থাকতে না পেরে) বললেনঃ তারা কোন প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়াই আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিয়েছে। আপনি কি এরই প্রতিদানে তাদের নৌকা ভেঙ্গে দিলেন যাতে সবাই ডুবে যায়? এতে আপনি অতি মন্দ কাজ করলেন। খিযির বললেনঃ আমি পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরতে পারবেন না। তখন মূসা আলাইহিস সালাম ওযর পেশ করে বললেনঃ আমি ওয়াদার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমার প্রতি রুষ্ট হবেন না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনা বর্ণনা করে বললেনঃ মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এর প্রথম আপত্তি ভুলক্রমে, দ্বিতীয় আপত্তি শর্ত হিসেবে এবং তৃতীয় আপত্তি ইচ্ছাক্রমে হয়েছিল। (ইতিমধ্যে) একটি পাখি উড়ে এসে নৌকার এক প্রান্তে বসল এবং সমুদ্র থেকে এক চঞ্চ পানি তুলে নিল। খিযির ‘আলাইহিস সালাম মূসা ‘আলাইহিস সালাম-কে বললেনঃ আমার জ্ঞান এবং আপনার জ্ঞান উভয়ের মিলে আল্লাহ তা’আলার জ্ঞানের মোকাবিলায় এমন তুলনাও হয় না, যেমনটি এ পাখির চঞ্চর পানির সাথে রয়েছে সমুদ্রের পানি।

অতঃপর তারা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। হঠাৎ খিযির একটি বালককে অন্যান্য বালকের সাথে খেলা করতে দেখলেন। খিযির স্বহস্তে বালকটির মস্তক তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। বালকটি মারা গেল। মূসা আলাইহিস সালাম বললেনঃ আপনি একটি নিষ্পাপ প্রাণকে বিনা অপরাধে হত্যা করেছেন। এ যে বিরাট গোনাহর কাজ করলেন। খিযির বললেনঃ আমি তো পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরতে পারবেন না। মূসা ‘আলাইহিস সালাম দেখলেন, এ ব্যাপারটি পূর্বের চাইতেও গুরুতর। তাই বললেনঃ এরপর যদি কোন প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে পৃথক করে দেবেন। আমার ওযর-আপত্তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে।

অতঃপর আবার চলতে লাগলেন। এক গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তারা গ্রামবাসীদের কাছে খাবার চাইলেন। ওরা সোজা অস্বীকার করে দিল। খিযির এই গ্রামে একটি প্রাচীরকে পতনোন্মুখ দেখতে পেলেন। তিনি নিজ হাতে প্রাচীরটি সোজা করে দিলেন। মূসা আলাইহিস সালাম বিস্মিত হয়ে বললেনঃ আমরা তাদের কাছে খাবার চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করলো। অথচ আপনি তাদের এত বড় কাজ করে দিলেন; ইচ্ছা করলে এর পারিশ্রমিক তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতেন। খিযির বললেনঃ (هَٰذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ) অর্থাৎ এখন শর্ত পূর্ণ হয়ে গেছে। এটাই আমার ও আপনার মধ্যে বিচ্ছেদের সময়।

এরপর খিযির উপরোক্ত ঘটনাত্ৰয়ের স্বরূপ মূসা আলাইহিস সালাম-এর কাছে বর্ণনা করে বললেনঃ (ذَٰلِكَ تَأْوِيلُ مَا لَمْ تَسْطِعْ عَلَيْهِ صَبْرًا) অর্থাৎ এ হচ্ছে সেসব ঘটনার স্বরূপ; যেগুলো আপনি দেখে ধৈর্য ধরতে পারেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করে বললেনঃ মূসা আলাইহিস সালাম যদি আরো কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরতেন, তবে আরো কিছু জানা যেত ৷ [বুখারীঃ ১২২, মুসলিমঃ ২৩৮০] এই দীর্ঘ হাদীসে পরিস্কার উল্লেখ রয়েছে যে, মূসা বলতে বনী-ইসরাঈলের নবী মূসা ‘আলাইহিস সালাম ও তার যুবক সঙ্গীর নাম ইউশা ইবন নুন এবং দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে যে বান্দার কাছে মূসা আলাইহিস সালাম-কে প্রেরণ করা হয়েছিল, তিনি ছিলেন খিযির ‘আলাইহিস সালাম।

মাছের সমুদ্রে চলে যাওয়ার কথাটি প্রথমবার سَرَبًا শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ সুড়ঙ্গ। পাহাড়ে রাস্তা তৈরী করার জন্য অথবা শহরে ভূগর্ভস্থ পথ তৈরী করার উদ্দেশ্যে সুড়ঙ্গ খনন করা হয়। এ থেকে জানা গেল যে, মাছটি সমুদ্রের যেদিকে যেত, সেদিকে একটি সুড়ঙ্গের মত পথ তৈরী হয়ে যেত। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] উপরোক্ত হাদীস থেকে তা-ই জানা যায়। দ্বিতীয় বার যখন ইউশা ইবন নূন দীর্ঘ সফরের পর এ ঘটনাটি উল্লেখ করেন, তখন (وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا) শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে عَجَبًا শব্দের অর্থ: আশ্চর্যজনকভাবে। উভয় বর্ণনার মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা, পানিতে সুড়ঙ্গ তৈরী হওয়া স্বয়ং একটি অভ্যাসবিরুদ্ধ আশ্চর্য ঘটনা।

অর্থাৎ আমাদের গন্তব্যের এ নিশানীটিই তো আমাকে বলা হয়েছিল। এ থেকে স্বতঃস্ফৰ্তভাবে এ ইংগিতই পাওয়া যায় যে, আল্লাহর ইংগিতেই মূসা আলাইহিস সালাম এ সফর করছিলেন। তার গন্তব্য স্থলের চিহ্ন হিসেবে তাকে বলে দেয়া হয়েছিল যে, যেখানে তাদের খাওয়ার জন্য নিয়ে আসা মাছটি অদৃশ্য হয়ে যাবে সেখানে তারা আল্লাহর সেই বান্দার দেখা পাবেন, যার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছিল।

কুরআনুল করীমে ঘটনার মূল ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি; বরং (عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا) (আমার বান্দাদের একজন) বলা হয়েছে। বুখারীর হাদীসে তার নাম “খিযির” উল্লেখ করা হয়েছে। খিযির অর্থ সবুজ-শ্যামল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নামকরণের কারণ প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি যেখানে বসতেন, সেখানেই ঘাস উৎপন্ন হয়ে যেত, মাটি যেরূপই হোক না কেন। [বুখারীঃ ৩৪০২] খিযির কি নবী ছিলেন, না ওলী ছিলেন, এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য আলেমদের মতে, খিযির ‘আলাইহিস সালামও একজন নবী।

 

এখানে মূসা ‘আলাইহিস সালাম আল্লাহর নবী ও শীর্ষস্থানীয় রাসূল হওয়া সত্বেও খিযির ‘আলাইহিস সালাম-এর কাছে সবিনয় প্রার্থনা করেছিলেন যে, আমি আপনার জ্ঞান শিক্ষা করার জন্য আপনার সাহচর্য কামনা করি। এ থেকে বোঝা গেল যে, ছাত্রকে অবশ্যই উস্তাদের সাথে আদব রক্ষা করতে হবে।

খিদির ‘আলাইহিস সালাম মূসা (আলাইহিস সালাম-কে বললেনঃ আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না। আসল তথ্য যখন আপনার জানা নেই, তখন ধৈর্য ধরবেনই বা কেমন করে? উদ্দেশ্য এই যে, আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি, তা আপনার জ্ঞান থেকে ভিন্ন ধরণের। তাই আমার কাজকর্ম আপনার কাছে আপত্তিকর ঠেকবে। আসল তথ্য আপনাকে না বলা পর্যন্ত আপনি নিজের কর্তব্যের খাতিরে আপত্তি করবেন।

মূসা (আঃ) যেহেতু এই বিশেষ জ্ঞানের খবর রাখতেন না, যে জ্ঞানের ভিত্তিতে খিযির (আঃ) নৌকা ছিদ্র করে দিয়েছিলেন, তাই তিনি ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে নিজের জানা ও বুঝার আলোকে এটাকে একটি গুরুতর মন্দ কাজ গণ্য করেন। إِمْرًا এর অর্থ হল, الدَّاهِيَةُ الْعَظِيْمَةُ বড়ই ভয়াবহ কাজ।

 

মূসা (আঃ) যেহেতু এই বিশেষ জ্ঞানের খবর রাখতেন না, যে জ্ঞানের ভিত্তিতে খিযির (আঃ) নৌকা ছিদ্র করে দিয়েছিলেন, তাই তিনি ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে নিজের জানা ও বুঝার আলোকে এটাকে একটি গুরুতর মন্দ কাজ গণ্য করেন। إِمْرًا এর অর্থ হল, الدَّاهِيَةُ الْعَظِيْمَةُ বড়ই ভয়াবহ কাজ।

 

একবার নাজদাহ হারুরী (খারেজী) ইবনে আব্বাসের কাছে পত্র লিখল যে, খিযির ‘আলাইহিস সালাম নাবালেগ বালককে কিরূপে হত্যা করলেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাবালেগ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন? ইবনে আববাস জবাব লিখলেনঃ কোন বালক সম্পর্কে যদি তোমার ঐ জ্ঞান অর্জিত হয়ে যায়, যা খিযির ‘আলাইহিস সালাম-এর অর্জিত হয়েছিল, তবে তোমার জন্যও নাবালেগ হত্যা করা জায়েয হয়ে যাবে। [মুসলিম: ১৮১২] উদ্দেশ্য এই যে, খিযির ‘আলাইহিস সালাম নবুওয়াতের ওহীর মাধ্যমে এই জ্ঞান লাভ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর নবুওয়াত বন্ধ হয়ে যাবার কারণে এখন এই জ্ঞান আর কেউ লাভ করতে পারবে না।

একবার নাজদাহ হারুরী (খারেজী) ইবনে আব্বাসের কাছে পত্র লিখল যে, খিযির ‘আলাইহিস সালাম নাবালেগ বালককে কিরূপে হত্যা করলেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাবালেগ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন? ইবনে আববাস জবাব লিখলেনঃ কোন বালক সম্পর্কে যদি তোমার ঐ জ্ঞান অর্জিত হয়ে যায়, যা খিযির ‘আলাইহিস সালাম-এর অর্জিত হয়েছিল, তবে তোমার জন্যও নাবালেগ হত্যা করা জায়েয হয়ে যাবে। [মুসলিম: ১৮১২] উদ্দেশ্য এই যে, খিযির ‘আলাইহিস সালাম নবুওয়াতের ওহীর মাধ্যমে এই জ্ঞান লাভ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর নবুওয়াত বন্ধ হয়ে যাবার কারণে এখন এই জ্ঞান আর কেউ লাভ করতে পারবে না।

এই গ্রামটি ছিল কৃপণ ও হীন লোকদের যারা অতিথিদের আপ্যায়ন করতে অস্বীকার করল। অথচ মুসাফিরদেরকে খাদ্য দান করা এবং অতিথিদের আতিথেয়তা করা প্রত্যেক ধর্মের সৎচরিত্রতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে পরিচিত। মহানবী (সাঃ)ও মেহমানদের আপ্যায়ন করা ও তাদের সম্মান করা ঈমানের দাবী বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন নিজ মেহমানদের সম্মান করে।’’ (বুখারী, মুসলিম)

খিযির (আঃ) দেওয়ালটাতে হাত দিয়ে স্পর্শ করলেন আর আল্লাহর আদেশে অলৌকিকভাবে তা সোজা হয়ে গেল। যেমন সহীহ বুখারীর বর্ণনায় এ কথা স্পষ্ট হয়।

মূসা (আঃ) যিনি প্রথম থেকেই গ্রামের মানুষের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন, তিনি খাযির (আঃ)-এর বিনা পারিশ্রমিকে কাজটি করে দেওয়ায় চুপ থাকতে পারলেন না; বরং বলে ফেললেন যে, যারা আমাদের মুসাফিরী অবস্থা, আহারের প্রয়োজনীয়তা, মান-সম্মান প্রভৃতি কিছুরই খেয়াল রাখল না তারা অনুগ্রহ পাওয়ার যোগ্য হয় কি করে?

খিযির (আঃ) বললেন, মূসা তুমি তৃতীয়বারও ধৈর্য্য ধারণ করতে পারলে না, এবার তোমার কথামত তোমাকে আমি সাথে নিতে অপারগ। কিন্তু খিযির (আঃ) পৃথক হওয়ার আগে উক্ত তিনটি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা জরুরী মনে করলেন। যাতে মূসা (আঃ) বিভ্রান্তির শিকার না হন এবং বুঝতে পারেন যে, নবুঅতের জ্ঞান আলাদা যা তাঁকে দান করা হয়েছে এবং সৃষ্টিগত কিছু বিষয়ের জ্ঞান আলাদা যা আল্লাহর হিকমত ও ইচ্ছায় খাযিরকে দেওয়া হয়েছে। আর সেই অনুযায়ী তিনি এমন কিছু কাজ করেছেন, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয। যার কারণে মূসা (আঃ)ও চুপ থাকতে পারেননি।

উক্ত প্রকার সৃষ্টিগত কর্ম সম্পাদনের কারণেই কিছু বিদ্বানদের ধারণা যে, খাযির মানুষ ছিলেন না। আর এই জন্যই তাঁরা এ বিতর্কের ঝামেলায় যান না, তিনি রসূল ছিলেন, নবী ছিলেন, নাকি ওলী ছিলেন। কারণ এ সকল মর্যাদা কেবল মানুষের সাথে সম্পৃক্ত। তাঁরা বলেন, তিনি ফিরিশতা ছিলেন। কিন্তু যদি আল্লাহ কোন নবীকে সৃষ্টিগত কিছু বিষয়ের জ্ঞান দান করে ওই শ্রেণীর কোন কাজ করিয়ে নেন, তাহলে তা অসম্ভব কিছুই নয়। যখন অহীপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজেই তা পরিষ্কার করে দেন যে, আমি এটা আল্লাহর আদেশে করেছি। সুতরাং যদিও তা শরীয়ত-বিরোধী বলে মনে হয়, তবুও যেহেতু এর সম্পর্ক সৃষ্টিগত বিষয়ীভূত জ্ঞানের সাথে, সেহেতু জায়েয-নাজায়েযের বিতর্ক ওঠার কথা নয়। যেমন সৃষ্টিগত নিয়মানুসারে কেউ অসুস্থ হয়, কেউ মৃত্যু বরণ করে, কারো ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে যায়, কোন জাতির উপর আযাব আসে; এ সবের মধ্যে কিছু কিছু কাজ কোন কোন সময় আল্লাহর আদেশে ফিরিশতারা করে থাকেন। যেভাবে এ সমস্ত কাজ আজ পর্যন্ত কারো শরীয়ত-বিরোধী বলে মনে হয়নি, সেইভাবে খাযির দ্বারা সংঘটিত কাজগুলো শরীয়তের দাঁড়িপাল্লায় মাপা উচিত নয়। তবে বর্তমানে নবুঅত ও অহীর পরম্পরা শেষ হয়ে যাওয়ার পর কারো পক্ষে এ সমস্ত জিনিসের দাবী কোনক্রমেই সত্য বলে মেনে নেওয়ার মত নয়; যেমন খাযির কর্তৃক প্রমাণিত। কারণ খাযিরের কর্মসমূহ কুরআন হতে সাব্যস্ত; আর সেই কারণে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু এখন কেউ এ রকম কর্মকান্ড ঘটালে বা ঘটাবার দাবী করলে তার প্রতিবাদ করা জরুরী। কারণ তার দাবীর প্রমাণে সেই নিশ্চিত সত্য জ্ঞান আজ অবর্তমান; যার দ্বারা তার দাবীর বাস্তবিকতা প্রমাণ হতে পারে ।

হাদীসে এসেছেঃ যে বালককে খিযির ‘আলাইহিস সালাম হত্যা করেছিলেন, সে কাফের হিসেবে লিখা হয়েছিল। যদি বড় হওয়ার সুযোগ পেত তবে পিতা-মাতাকে কুফরী ও সীমালংঘনের মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে ছাড়ত। [মুসলিমঃ ২৬৬১]

এখানে আল্লাহ্ তা’আলা সে প্রাচীরের নীচে খনি আছে বলেছেন। এর অতিরিক্ত কোন তাফসীর করেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও সহীহ কোন তাফসীর বর্ণিত হয়নি। তাই এ ব্যাপারে সঠিক কোন মতামত দেয়া যায় না। তবে কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে গচ্ছিত খনি বলতে সম্পদ বোঝানো হয়েছে। আর আয়াতের ভাষ্য থেকেও এ অর্থই বেশী সুস্পষ্ট। [দেখুন, তাবারী]।

এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, খিযির  ‘আলাইহিস সালাম-এর মাধ্যমে ইয়াতীম বালকদের জন্য রক্ষিত গুপ্তধনের হেফাযত এজন্য করানো হয় যে, তাদের পিতা একজন সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন। তাই আল্লাহ তা’আলা তার সন্তান-সন্ততির উপকারার্থে এ ব্যবস্থা করেন। [ইবন কাসীর]

খিযির  ‘আলাইহিস সালাম জীবিত আছেন, না ওফাত হয়ে গেছেঃ এ বিষয়ের সাথে কুরআনে বর্ণিত ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই। তাই কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টতঃ এ সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ ব্যাপারে সর্বকালেই আলেমদের বিভিন্নরূপ মতামত পরিদৃষ্ট হয়েছে। যাদের মতে তিনি জীবিত আছেন, তাদের প্রমাণ হচ্ছে একটি বর্ণনা। যাতে বলা হয়েছেঃ ‘যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওফাত হয়ে যায়, তখন সাদা-কালো দাড়িওয়ালা জনৈক ব্যক্তি আগমন করে এবং ভীড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে কান্নাকাটি করতে থাকে। এই আগন্তুক সাহাবায়ে কেরামের দিকে মুখ করে বলতে থাকেঃ আল্লাহর দরবারেই প্রত্যেক বিপদ থেকে সবর আছে, প্রত্যেক বিলুপ্ত বিষয়ের প্রতিদান আছে এবং তিনি প্রত্যেক ধ্বংসশীল বস্তুর স্থলাভিষিক্ত। তাই তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন কর এবং তাঁর কাছেই আগ্রহ প্রকাশ কর। কেননা, যে ব্যক্তি বিপদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়, সে-ই প্রকৃত বঞ্চিত। আগন্তুক উপরোক্ত বাক্য বলে বিদায় হয়ে গেলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেনঃ ইনি খিযির  আলাইহিস সালাম। [মুস্তাদরাকঃ ৩/৫৯, ৬০] তবে বর্ণনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।

পক্ষান্তরে যারা খিযির  ‘আলাইহিস সালাম-এর জীবদ্দশা অস্বীকার করে, তাদের বড় প্রমাণ হচ্ছে-

এক) আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “আমরা আপনার আগেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি”। [সূরা আল-আম্বিয়ঃ ৩৪] সুতরাং খিযির  আলাইহিস সালামও অনন্ত জীবন লাভ করতে পারেন না। তিনি নিশ্চয়ই অন্যান্য মানুষের মত মারা গেছেন।

দুই) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ দিকে এক রাতে আমাদেরকে নিয়ে এশার সালাত আদায় করেন। সালাত শেষে তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং নিম্নোক্ত কথাগুলো বলেনঃ “তোমরা কি আজকের রাতটি লক্ষ্য করছ? এই রাত থেকে একশ’ বছর পর আজ যারা পৃথিবীতে আছে, তাদের কেউ জীবিত থাকবে না।’ [মুসলিমঃ ২৫৩৭]

তিন) অনুরূপভাবে, খিযির  আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলে জীবিত থাকলে তার কাছে উপস্থিত হয়ে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করা তার জন্য অপরিহার্য ছিল। কেননা, হাদীসে বলা হয়েছে “মূসা জীবিত থাকলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তারও গত্যন্তর ছিল না।” [মুসনাদে আহমাদঃ ৩/৩৩৮] (কারণ, আমার আগমনের ফলে তার দ্বীন রহিত হয়ে গেছে।)

চার) বদরের প্রান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ “যদি আপনি এ ক্ষুদ্র দলটিকে ধ্বংস করেন তবে যমীনের বুকে আপনার ইবাদতকারী কেউ থাকবে না”। [মুসলিমঃ ১৭৬৩] এতে বোঝা যাচ্ছে যে, খিযির  নামক কেউ জীবিত নেই।

এ সব দলীল-প্রমাণ দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে, খিযির  ‘আলাইহিস সালাম জীবিত নেই। সুতরাং যারাই তার সাথে সাক্ষাতের দাবী করবে, তারাই মিথ্যার উপর রয়েছে। এটাও অসম্ভব নয় যে, শয়তান তাদেরকে খিদিরের রূপ ধরে বিভ্রান্ত করছে। কারণ, শয়তানের পক্ষে খিদিরের রূপ ধারণ করা অসম্ভব নয়।

ফুটনোট 

মুসা (আ.) এবং হযরত খিজির (আ.) এর পারস্পারিক এই সাক্ষাত থেকে আমরা আমাদের জন্য শিক্ষনীয় বিভিন্ন বিষয়বস্তু বাছাই করে নিতে পারি। এখানে আমাদের জন্য শিক্ষনীয় আটটি বিষয় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। 

১. আপনার জ্ঞানের জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করুন

বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূল (সা.) তার সাহাবীদের বলেন, ‘একবার নবী মুসা (আ.) বনী ইসরাইলের এক সমাবেশে কথা বলছিলেন। এসময় তাকে প্রশ্ন করা হল, “মানুষের মধ্যে বর্তমানে কে সর্বাধিক জ্ঞানী?” মুসা (আ.) উত্তরে বলেন, “আমিই সর্বাধিক জ্ঞানী।” আল্লাহ মুসা (আ.) কে এর জন্য তিরস্কার করলেন কেননা তিনি সমগ্র জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন না। আল্লাহ তাকে বললেন, “দুই সাগরের সংযোগস্থলে আমার এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার থেকেও জ্ঞানী।” মুসা (আ.) তখন তার সাথে দেখা করতে আগ্রহী হলেন।….’

কোন ব্যক্তিই সম্পূর্ণভাবে জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে না। আল্লাহ তার ইচ্ছানুসারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জ্ঞানের বিশেষ বিশেষ অংশ প্রদান করেন। আমাদের এই জ্ঞানের জন্য আমাদের উচিত আল্লাহর শোকর আদায় করা।

২. লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া

হযরত মুসা (আ.) যখন জানলেন, তার থেকেও অধিক জ্ঞানের অধিকারী লোক রয়েছে, তখন তিনি তার সাথে সাক্ষাতের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন। তিনি বলেন, খিজির (আ.) এর সাথে সাক্ষাত না হওয়া পর্যন্ত তিনি চলতেই থাকবেন। জ্ঞানের অনুসন্ধান সহ আমাদের যেকোন লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আমাদের উচিত এরূপ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া। (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৬০)

৩. জ্ঞানার্জনের পথে উপযুক্ত সঙ্গীর গুরুত্ব অনুধাবন

জ্ঞানার্জনের পথে উপযুক্ত সঙ্গীর গুরুত্ব অনুধাবন করুন এবং জ্ঞানার্জনের পথে একে অপরকে সহায়তা করুন। (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৬২)

৪. শয়তানের বাধা সম্পর্কে সচেতন থাকুন

জ্ঞানার্জনের পথে চলা সহজ কোন কাজ নয়। এই পথে চলতে অনেক সময় অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আপনার জ্ঞান অর্জনের পথে শয়তান সর্বদাই চেষ্টা করে আপনাকে বাধা দেওয়ার। সুতরাং, শয়তানের প্ররোচনা থেকে সতর্ক থাকুন। (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৬৩)

৫. শিক্ষার্থীর উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া

জ্ঞানের অন্বেষণকারী শিক্ষার্থীর উচিত তার জ্ঞান অন্বেষণের পথে বিনয়ী হওয়া। হযরত মুসা (আ.) তার জ্ঞানান্বেষণের জন্য তার শিক্ষকের কাছে বিনয়ের সাথে আবেদন করেছেন। আপনারও উচিত কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি বা শিক্ষকের কাছে কোন প্রশ্ন থাকলে তা বিনয়ের সাথে উত্থাপন করা।(সূরা কাহাফ, আয়াত: ৬৬)

৬. শিক্ষকের উত্তম ব্যবহার

একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে উত্তমরূপে জানেন। এমনকি ছাত্রের নিজের চেয়েও শিক্ষক তার সম্পর্কে অধিক ধারনা রাখতে পারেন। একারনে শিক্ষক উত্তমভাবে বলতে পারেন, তার ছাত্রের জন্য কোন কাজটি উত্তম হবে।

হযরত খিজির (আ.) তার ছাত্র তথা মুসা (আ.) এর অবস্থা সম্পর্কে ধারনা অর্জণ করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি তাকে তার অপারগতার কথা প্রকাশ করেছেন। এরজন্য তিনি মুসা (আ.) কে ছোট না করে বরং উত্তম ভাষায় তার বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৬৭-৬৮)

৭. ধৈর্যশীলতা ও অনুগত থাকা

মুসা (আ.) খুব সহজেই তার প্রচেষ্টা ছেড়ে দেননি এবং তিনি ধৈর্যধারনের জন্যও নিয়ত করেছিলেন।

শিক্ষার্থীদের এক বড় সমস্যা তাদের তাড়াহুড়া করার মানসিকতা। কোন বিষয় তারা এক ধাক্কাতেই আয়ত্ত্ব করতে চায়, কিন্তু এটি কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।

জ্ঞান অন্বেষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ধৈর্য এবং শিক্ষকের অনুগত হওয়া। শিক্ষকের প্রদর্শিত পথে ধৈর্যের সাথে ধীরে ধীরে পথ চলার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।  (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৬৯-৭০)

৮. জ্ঞানকে কাজে লাগানো

তিরমিযিতে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, “কল্যাণহীন জ্ঞান এমন সম্পদের ন্যায় যার থেকে কিছুই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হয়না।”

জ্ঞান আপনার জন্য এমন একটি হাতিয়ার, যার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি সমাজের এবং নিজের জন্য যেরূপ কল্যান করতে পারেন আবার একইভাবে তার মাধ্যমে নিজের ও সমাজের ক্ষতি করতে পারেন। অথবা তা ব্যবহার না করে অকেজো করে ফেলে রাখতে পারেন। জ্ঞানকে উত্তম ভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি যদি নিজের ও সমাজের জন্য উপকার করতে পারেন, তবে তা আপনাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করতে সক্ষম করবে। সুতরাং, জ্ঞান অর্জন করুন এবং একে উত্তমভাবে ব্যবহার করুন। (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৮২)

আল্লাহ আমাদের উত্তম কল্যানকর জ্ঞান অর্জনের এবং তা উত্তমভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে তার নিকটবর্তী হওয়ার তৌফিক দান করুন।