নোট ২ঃ উলুমুল কুরআন পর্ব-২

কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা ২০২২

প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ

কুরআনের সাত মঞ্জিল: সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের অনেকেই সপ্তাহে অন্তত এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন।এ উদ্দেশ্যে তাঁরা দৈনন্দিন তিলাওয়াতের একটা পরিমাণ নির্ধারণ করেছিলেন।এ নির্দিষ্ট পরিমাণকেই ‘হিযব বা মনযিল’ বলা হয়।এভাবে পূর্ণ কুরআনে কারীমকে মোট সাতটি মানযিলে বিভক্ত করা হয়েছে।

* কোরআনের রুকু: পবিত্র আল কোরাআনে পৃষ্ঠার পার্শ্বে আরবী ‘ع’ অক্ষর দিয়ে রুকুর চিহ্ন দেওয়া থাকে। অর্থের দিকে লক্ষ্য করে মূলত রুকু ঠিক করা হয়। অর্থাৎ যেখানে একটি বিষয়ের আলোচনা শেষ হয়েছে, সেই জায়গা বরাবর পার্শ্বে রুকুর আলামত ‘ع’ বসানো হয়। অনেক গবেষণার পরও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, কখন কে এই রুকুগুলো ঠিক করেছেন। সম্ভবত এর উদ্দেশ্য ছিলো, এমন একটি পরিমাণ ঠিক করে দেয়া, যতটুকু এক রাকাতে পড়া দরকার। পবিত্র আল কোরআনের এই রুকুকে, রুকু বলার কারণ হলো, সাধারণত এখানে পৌঁছে নামাজের রুকুতে যাওয়া হয়।  মোট “রুকু” ৫৪০ টি, মতান্তরে ৫৫৪টি।

* পারা বা জুয : পারা বা জুয কুরআনের ত্রিশ খন্ডের প্রত্যেকটিকে বলা হয়। এই ত্রিশ খন্ড ত্রিশ পারা বলে পরিচিত। আরবিতে একে বলা হয় জুয। দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের মধ্যে পারা শব্দটি প্রচলিত।

* আয়াত:  আরবী ‘আয়াত’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ নিদর্শন। ইসলামী পরিভাষায় আয়াত হচ্ছে আল কোরআনের সূরার একটি অংশ, যা তার পূর্বের অংশ ও পরের অংশ থেকে পৃথক এবং উভয় অংশের মধ্যে অর্থ ও মর্মের সংযোগ রক্ষাকারী হিসেবে সন্নিবেশিত।

*আরবীতে ওহী (وحی) শব্দটি বাবে ضرب এর মাসদার। এটির আভিধানিক অর্থ হলোঃ গোপনে জানিয়ে দেয়া, ইঙ্গিত করা, প্রেরণ করা – ইত্যাদি।

পরিভাষায়, নবী-রাসূলদের ওপর আল্লাহ তা’য়ালার অবতারিত বাণীকে ওহী বলে। কিংবা, গোপনে আল্লাহ প্রদত্ত নবী-রাসূলদেরকে কোনকিছু জানানোর নামই ওহী।

* শানে নুযূল  বলতে বুঝায় কুরআনের কোন একটি সূরা বা এর অংশবিশেষ অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট বা ইতিহাসকে।

সূরার নামকরণঃ কুরআনের সূরার নামকরণ তিনভাবে হয়ে থাকে-

  • কিছু তাদের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু অনুযায়ী নামকরণ করা হয়েছিল, এইশব্দ এই সূরায় উল্লেখ নাই। যেমন আল-ফাতিহা (উদ্বোধনী) এবং সূরা ইখলাস, এবং
  • কিছু অধ্যায়ের শুরুতে প্রথম শব্দের জন্য নামকরণ করা হয়েছিল, যেমন কাফ, ইয়া-সিন এবং আর-রহমান।
  • কিছু সূরার বিশেষ কোনো ঘটনা বা বিশেষ/গুরুত্বপূর্ণ শব্দ অনুসারে নামকরণ করা হয়েছিল, যেমন আল-বাকারাহ (গরু), আন-নুর (আলো), আল-নাহল (মৌমাছি), আয্‌-যুখরুফ (সোনার অলঙ্কার), আল-হাদিদ (লোহা), এবং আল-মাউন (ছোট দয়া)।

বেশ কয়েকটি একাধিক নামে পরিচিত: যেমন সূরা আল-মাসাদ ওপর নাম সূরা আল-লাহাব। সূরা ফুসিলাত হলো সূরা হা-মীম সাজদা ওপর নাম।

* হুরুফে মুকাত্তাআত, বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর যেমন (الّمص ـ حم ـ الّم) -হল কুরআনের ১১৪ টি সুরার মধ্যে ২৯ সুরার শুরুর দিকে এক থেকে পাঁচটি আরবি বর্ণের সংমিশ্রণ রয়েছে। এগুলো ‘মুতাশাবিহাত’ বা অস্পষ্ট বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর অর্থ আছে কিনা তা আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন, আমরা এগুলোর অর্থ সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আমরা শুধুমাত্র তিলাওয়াত করবো।

* মুসাব্বিহাত সূরা বলা যে সকল সূরা শুরু ‘সাব্বাহা বা ইউসাব্বিহু’ দিয়ে। সাত টি সূরা কে মুসাব্বিহাত বলে, সেগুলো হলো- সূরা বনী ঈসরাইল, সূরা হাদীদ, সূরা ছ-ফ, সূরা হাশর, সূরা জুমআ, সূরা তাগাবুন, সূরা আ’লা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ঘুমের পূর্বে ‘মুসাব্বিহাত’ পাঠ করতেন এবং তিনি বলতেন: “এগুলোর মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যা এক হাজার আয়াতের সমান।”

* হাওয়ামীম বলা হয় হামীমযুক্ত সুরাহ সমূহ বা যেসব সূরা শুরু হামীম দিয়ে ৭টি সূরাকে হাওয়ামীম বলা হয় সেগুলো হলো-  সূরা আল মুমিন,  সূরা হা-মীম আস সাজাদাহ, সূরা আশ শূরা, সূরা আয্ যুখরুফ, সূরা আদ দুখান, সূরা আল জাসিয়াহ, সূরা আল আহক্কাফ। কোরআনের সূরার ক্রম অনুযায়ী এগুলো ধারাবাহিকভাবে ৪০ থেকে ৪৬।

*নাসিখ মানসুখ: কোরআনেই উল্লেখ করা আছে যে, তার মধ্যে কিছু আয়াত পরবর্তীকালে রহিত বা বাতিল করা হয়েছে এবং তার পরিবর্তে উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত নাজিল করা হয়েছে। আরবিতে এই একটি আয়াতের বদলে অন্য আয়াত নাজিল হওয়ার তত্ত্বকে বলে نسخ (উচ্চারণ না-স-খ)। যে আয়াতটি বাতিল হয়ে যায় তাকে বলে মানসুখ, ও তার জায়গায় নতুন যে আয়াত নাজিল করা হয় তাকে বলে নাসিখ।

* পবিত্র কোরআনের সূরা মুজাদালার প্রতিটি আয়াতে আল্লাহ শব্দটি রয়েছে

এক নজরে আল কুরআন :
রুকু : ৫৫৪টি। মতান্তরে ৫৪০টি।
সিজদা : ১৪টি
পারা : ৩০টি
কুরআনের সূরা সংখ্যা : ১১৪টি।
আয়াত সংখ্যা : ৬৬৬৬টি মতান্তরে ৬২৩৬টি।
কুরআনে কুরআন শব্দ এসেছে : ৬১ বার।
সর্বপ্রথম নাযিলকৃত পূর্ণাঙ্গ সূরা : আল-ফাতিহা।
সর্বপ্রথম নাযিলকৃত আয়াত/ওহী : আল-আলাক (১-৫)।
সর্বশেষ নাযিলকৃত পূর্ণাঙ্গ সূরা : আন-নসর।
সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত বা ওহী : আল-বাকারাহ ২৮১।
সবচেয়ে বড় সূরা : আল-বাকারাহ।
সবচেয়ে ছোট সূরা : আল-কাউসার।
কুরআনে উল্লেখিত সাহাবীর নাম : যায়েদ ইবনে হারেসা (রা.)।
কোরআনে রুহুল আমীন/কুদস কাকে বলেঃ হযরত জিব্রাঈল (আঃ)।
কোরআনে বর্ণিত নবীর সংখ্যাঃ ২৫ জন।
কোন্ সূরায় বিসমিল্লাহ নেই ও কোন্ সূরায় ২বার বিসমিল্লাহ আছেঃ সূরা তাওবায় বিসমিল্লাহ নেই ও সূরা নমলে ২ বার বিসমিল্লাহ আছে।