Notes 5: Sura Zilzal

কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা

প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ ৫

সূরা যিলযাল

কুরআন মাজীদের ৯৯ তম সূরা। এতে রয়েছে ৮টি আয়াত এবং ১টি রুকু। সূরাটি মাদানী সূরা। যিলযাল শব্দের অর্থ ভুকম্পন,ভুমিকম্প ইত্যাদি।

নামকরণ

প্রথম আয়াতে (  اِذَا زُلۡزِلَتِ الۡاَرۡضُ زِلۡزَالَهَا ) যিলযালাহা শব্দ থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে।

 

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

এর বিষয়বস্তু মৃত্যুর পরবর্তী জীবন এবং সেখানে দুনিয়ায় করা সমস্ত কাজের হিসেব মানুষের সামনে এসে যাওয়া । সর্বপ্রথম তিনটি ছোট ছোট বাক্যে বলা হয়েছে , মৃত্যুর পর মানুষের দ্বিতীয় জীবনের সূত্রপাত কিভাবে হবে এবং মানুষের জন্য তা হবে কেমন বিস্ময়কর। তারপর দু’টি বাক্যে বলা হয়েছে , মানুষ এই পৃথিবীর বুকে অবস্থান করে নিশ্চিন্তে সব রকমের কাজ করে গেছে । সে কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি যে , এই নিষ্প্রান জিনিস কোনদিন তার কাজকর্মের পক্ষে – বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহর হুকুমে সেদিন সে কথা বলতে থাকবে। প্রত্যেকটি লোকের ব্যাপারে সে বলবে , কোন সময় কোথায় সে কি কাজ করেছিল । তারপর বলা হয়েছে , সেদিন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষের নিজেদের কবর থেকে বের হয়ে দলে দলে আসতে থাকবে । তাদের কর্মকাণ্ড তাদেরকে দেখানো হবে। এমন পূর্ণাংগ ও বিস্তারিতভাবে এই কর্মকাণ্ড পেশ করা হবে যে , সামান্য বালুকণা পরিমাণ নেকী বা পাপও সামনে এসে যাবে।

সূরার ফযীলত

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- সূরা ইখলাসকে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ। সূরা নাসরকে কুরআনের এক-চতুর্থাংশ। সূরা কাফিরুনকে কুরআনের এক-চতুর্থাংশ। সূরা যিলযালকে কুরআনের অর্ধেক বলে উল্লেখ করেছে। (জামে তিরমিযী আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান।)  অন্য হাদীসে যিলযালকে কুরআনের এক-চতুর্থাংশ উল্লেখ করা হয়েছে।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ রসূল! আমাকে কুরআন পড়া শিখান। তিনি বললেন, ‘আলিফ-লাম-রা’ বিশিষ্ট তিনটি সূরাহ পাঠ করো। সে বললো, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আমার অন্তর শক্ত হয়ে গেছে এবং আমার জিহবা ভারী হয়ে গেছে। তিনি বললেনঃ তাহলে ‘হা-মীম’ বিশিষ্ট তিনটি সূরাহ পাঠ করো। সে পূর্বের ন্যায় উক্তি করলো। অতঃপর তিনি বললেনঃ এমন তিনটি সূরাহ পাঠ করো যেগুলোর শুরুতে ‘সাব্বাহা’ বা ইউসাব্বিহু’ আছে। সে এবারও অনুরূপ উক্তি করে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটি সূরাহ শিক্ষা দিন যা সর্বদিক হতে পরিপূর্ণ। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সূরাহ ‘‘ইযা যুলযিলাতিল আরদু যিলযালাহা’’ শেষ পর্যন্ত পাঠ করালেন। লোকটি বললো, ঐ সত্ত্বার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন! আমি এর অতিরিক্ত করবো না। অতঃপর লোকটি চলে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটি সফলকাম হয়েছে, লোকটি কামিয়াব হয়েছে। (আবু দাউদ ১৩৯৯)

আগের সূরা ও পরের সূরার সাথে সম্পর্কঃ

আগের ৯৮ তম সূরা আল বায়্যিনাহ এর শেষের দিকে (আয়াত ৬ এবং ৭) সবচেয়ে খারাপ ও সবচেয়ে ভাল সৃষ্টি এর কথা বর্নিত হয়েছে। এই ৯৯ তম সূরা আল ঝিলঝাল এর শেষে ক্ষুদ্রতম ভাল ও ক্ষুদ্রতম খারাপ এর কথা বর্নিত হয়েছে। ৯৯ তম সূরা আল যিলযালের শেষ ২ আয়াতে মানুষের কর্মের খুটিনাটি বিষয় প্রকাশ পাবে তা বলা হয়েছে, এই সূরা আল আদিয়াতের শেষ ২ আয়াতে মানুষের চিন্তা/পরিকল্পনার খুটিনাটি বিষয় প্রকাশ পাবে তা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ২ টা সূরা মিলিয়ে মানুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন সবই প্রকাশ পাবে তা বলা হয়েছে।

৯৯-১০২ এই ৪ টি সূরায় আখিরাত ও দুনিয়ার কথা পরপর এসেছে। ৯৯ তম সূরা আল যিলযালে আখিরাতের কথা ১০০ তম সূরা আল আদিয়াতে দুনিয়া বিষয়ক। তেমনি ১০১ তম সূরা আল ক্বরিয়াহ  তে আবার আখিরাতের কথা১০২ তম সূরা আত তাকাসুর আবার দুনিয়া বিষয়ক। এভাবে আখিরাত, দুনিয়া, আবার আখিরাত, আবার দুনিয়া এর বিষয় নিয়ে এসে মানুষকে বারবার সাবধান করেছেন এবং দুনিয়ার সাথে যে আখিরাত অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত তা বোঝাতে চেয়েছেন।

মূল শব্দগুলো হচ্ছে, زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا ‘যালযালাহু’ মানে হচ্ছে, একাদিক্রমে পরপর জোরে জোরে ঝাড়া দেয়া। কাজেই زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ বলতে ধাক্কার পর ধাক্কা দিয়ে এবং ভূমিকম্পের পর ভূমিকম্পের মাধ্যমে পৃথিবীকে ভীষণভাবে কাঁপিয়ে দেয়া হবে। আর যেহেতু পৃথিবীকে নাড়া দেবার কথা বলা হয়েছে তাই এ থেকে আপনা-আপনিই এই অর্থ বের হয়ে আসে যে, পৃথিবীর কোন একটি অংশ কোন একটি স্থান বা অঞ্চল নয় বরং সমগ্র পৃথিবীকে কম্পিত করে দেয়া হবে। তারপর এই নাড়া দেবার এই ভূকম্পনের ভয়াবহতা আরো বেশী করে প্রকাশ করার জন্য তার সাথে বাড়তি زِلْزَالَهَا শব্দটিও বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এ শব্দটির শাব্দিক মানে হচ্ছে, “কম্পিত হওয়া।” অর্থাৎ তার মতো বিশাল ভুগোলককে যে ভাবে ঝাঁকানি দিলে কাঁপে অথবা যেভাবে ঝাঁকানি দিলে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে ভীষণভাবে কাঁপে ঠিক সেভাবে তাকে ঝাঁকানি দেয়া হবে। কোন কোন মুফাসসির এই কম্পনকে প্রথম কম্পন ধরে নিয়েছেন। তাদের মতে কিয়ামতের প্রথম পর্বের সূচনা হবে যে কম্পন থেকে এটি হচ্ছে সেই কম্পন। অর্থাৎ যে কম্পনের পর দুনিয়ার সব সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার সমগ্র ব্যবস্থাপনা ওলট-পালট হয়ে যাবে। কিন্তু মুফাসসিরগণের একটি বড় দলের মতে যে কম্পনের মাধ্যমে কিয়ামতের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে অর্থাৎ যখন আগের পিছের সমস্ত মানুষ পুনর্বার জীবিত হয়ে উঠবে, এটি সেই কম্পন। এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি বেশী নির্ভুল। কারণ পরবর্তী সমস্ত আলোচনায় এই বিষয়টির প্রকাশ ঘটেছে।

আল্লাহ এখানে ‘যদি’ না বলে (اِذَا) ‘যখন’ বলেছেন। অর্থাৎ পৃথিবী যে ধ্বংস হবেই এটা নিশ্চিত, কোন সন্দেহ নাই। এই ভূমিকম্পনের ফলে পৃথিবী তাঁর বোঝাসমূহ বের করে দিয়ে মুক্তি পেয়ে যাবে; যা বর্নিত হয়েছে ২য় আয়াতে।

 

এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. মরা মানুষ মাটির বুকে যেখানে যে অবস্থায় যে আকৃতিতে আছে দ্বিতীয় ফুঁৎকারের পরে তাদের সবাইকে বের করে এনে সে বাইরে ফেলে দেবে এবং যাবতীয় মৃতকে বের করে হাশরের মাঠের দিকে চালিত করবে। মানুষের শরীরের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অংশগুলো এক জায়গায় জমা হয়ে নতুন করে আবার সেই একই আকৃতি সহকারে জীবিত হয়ে উঠবে যেমন সে তার প্রথম জীবনের অবস্থায় ছিল। এই বিষয়টি অন্যত্র এভাবে বলা হয়েছে, “হে মানুষ! তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর; কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার!” [সূরা আল-হাজ্জ: ১] আরও এসেছে, “আর পৃথিবীকে যখন সম্প্রসারিত করা হবে এবং পৃথিবী তার অভ্যন্তরে যা আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করবে ও শূন্যগর্ভ হবে।” [সূরা আল-ইনশিকাক: ৩-৪] দুই. এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, কেবলমাত্র মরা মানুষদেরকে সে বাইরে নিক্ষেপ করে ক্ষান্ত হবে না বরং তাদের প্রথম জীবনের সমস্ত কথা ও কাজ এবং যাবতীয় আচার-আচরণের রেকর্ড ও সাক্ষ্য-প্রমাণের যে স্তুপ তার গর্ভে চাপা পড়ে আছে সেগুলোকেও বের করে বাইরে ফেলে দেবে।

পরবর্তী বাক্যটিতে একথারই প্ৰকাশ ঘটেছে। তাতে বলা হয়েছে, যমীন তার ওপর যা কিছু ঘটেছে তা বর্ণনা করবে। তিন. কোন কোন মুফাসসির এর তৃতীয় একটি অর্থও বর্ণনা করেছেন। সেটি হচ্ছে, সোনা, রূপা, হীরা, মণি-মাণিক্য এবং অন্যান্য যেসব মূল্যবান সম্পদ ভূ-গর্ভে সঞ্চিত রয়েছে সেগুলোর বিশাল বিশাল স্তুপও সেদিন যমীন উগলে দেবে। আর যদি দুনিয়ার জীবনের শেষভাগে কিয়ামতের আলামত হিসেবে এ সম্পদ বের করা বোঝায় তবে এতদসংক্রান্ত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “পৃথিবী তার কলিজার টুকরা বিশালাকার স্বর্ণ খণ্ডের আকারে উদগীরণ করে দেবে। তখন যে ব্যক্তি ধনসম্পদের জন্যে কাউকে হত্যা করেছিল, সে তা দেখে বলবে, এর জন্যেই কি আমি এতবড় অপরাধ করেছিলাম? যে ব্যক্তি অর্থের কারণে আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিল, সে বলবে, এর জন্যেই কি আমি এ কাণ্ড করেছিলাম? চুরির কারণে যার হাত কাটা হয়েছিল, সে বলবে, এর জন্যেই কি আমি নিজের হাত হারিয়েছিলাম? অতঃপর কেউ এসব স্বর্ণখণ্ডের প্রতি ভ্ৰক্ষেপও করবে না। [মুসলিম: ১০১৩]

মানুষ অর্থ প্রত্যেকটি মানুষ হতে পারে। কারণ পুনরায় জীবন লাভ করে চেতনা ফিরে পাবার সাথে সাথেই প্রত্যেক ব্যক্তির প্রথম প্রতিক্রিয়া এটিই হবে যে, এসব কি হচ্ছে? এটা যে হাশরের দিন একথা সে পরে বুঝতে পারবে। আবার মানুষ অর্থ আখেরাত অস্বীকারকারী মানুষ ও হতে পারো। কারণ যে বিষয়কে অসম্ভব মনে করতো তা তার সামনে ঘটে যেতে থাকবে এবং সে এসব দেখে অবাক ও পেরেশান হবে। তবে ঈমানদারদের মনে এ ধরনের বিস্ময় ও পেরেশানি থাকবে না। কারণ তখন তাদের আকীদা-বিশ্বাস ও প্রত্যয় অনুযায়ীই সবকিছু হতে থাকবে। সূরা ইয়াসিনের ৫২ আয়াতটি এই দ্বিতীয় অর্থটি কতকটা সমর্থন করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে সময় আখেরাত অস্বীকারকারীরা বলবেঃ  مِنْ مَرْقَدِنَا بَعَثَنَا مَنْ “কে আমাদের শয়নাগার থেকে আমাদের উঠালো? ” এর জবাব আসবেঃ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ الرَّحْمَنُ هَذَا مَا وَعَدَ “এটি সেই জিনিস যার ওয়াদা করুণাময় করেছিলেন এবং আল্লাহর পাঠানো রসূলগণ সত্য বলেছিলেন।” ঈমানদাররাই যে কাফেরদেরকে এই জবাব দেবে, এ ব্যাপারে এই আয়াতটি সুস্পষ্ট নয়। কারণ আয়াতে একথা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। তবে ঈমানদারদের পক্ষ থেকে তারা এই জবাব পাবে, এ সম্ভাবনা অবশ্যি এখানে আছে।

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) রেওয়ায়াত করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ এ আয়াতটি পড়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “জানো তার সেই অবস্থা কি? ” লোকেরা জবাব দেয়, আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূল ভালো জানেন। রসূল ﷺ বলেনঃ “সেই অবস্থা হচ্ছে, যমীনের পিঠে প্রত্যেক মানব মানবী যে কাজ করবে সে তার সাক্ষ্য দেবে। সে বলবে, এই ব্যক্তি অমুক দিন অমুক কাজ করেছিল। এই হচ্ছে সেই অবস্থা, যা যমীন বর্ণনা করবে।” (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে জারীর, আবদ ইবনে হুমাইদ, ইবনুল মুনযির, হাকেম, ইবনে মারদুইয়া এবং বায়হাকী ফিশশু’আব) হযরত রাবআহ আল খারাশী রেওয়ায়াত করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “যমীন থেকে তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করে চলবে। কারণ এ হচ্ছে তোমাদের মূল ভিত্তি। আর এমনকোন ব্যক্তি নেই যে এর ওপর ভালো মন্দ কোনো কাজ করে এবং সে তার খবর দেয় না।” (মু ’জামুত তাবরানী) হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন যমীন এমন প্রতিটি কাজ নিয়ে আসবে। যা তার পিঠের ওপর করা হয়েছে।” তারপর তিনি এই আয়াতটি তেলাওয়াত করেন। (ইবনে মারদুইয়া, বায়হাকী) হযরত আলী (রা.) সংক্রান্ত জীবনীগ্রন্থে লিখিত হয়েছেঃ বায়তুলমালের সমুদয় সম্পদ যখন তিনি হকদারদের মধ্যে বণ্টন করে সব খালি করে দিতেন তখন সেখানে দু’রাকাত নফল নামায পড়তেন। তারপর বলতেনঃ “তোকে সাক্ষ্য দিতে হবে, আমি তোকে সত্য সহকারে ভরেছি এবং সত্য সহকারে খালি করেছি।” যমীনের ওপর যা কিছু ঘটে গেছে তার সবকিছু সে কিয়ামতের দিন বলে দেবে, যমীন সম্পর্কে একথাটি প্রাচীন যুগে মানুষকে অবাক করে দিয়ে থাকবে, এতে সন্দেহ নেই। কারণ তারা মনে করে থাকবে, যমীন আবার কেমন করে কথা বলবে? কিন্তু আজ পদার্থবিদ্যা সংক্রান্ত নতুন নতুন জ্ঞান-গবেষণা, আবিষ্কার–উদ্ভাবন এবং সিনেমা, লাউড স্পীকার, রেডিও, টেলিভিশন, টেপ রেকর্ডার ও ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদির আবিষ্কারের এ যুগে যমীন তার নিজের অবস্থা ও নিজের ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী কিভাবে বর্ণনা করবে একথা অনুধাবন করা মোটেই কঠিন নয়। মানুষ তার মুখ থেকে যা কিছু উচ্চারণ করে তার পূর্ণঅবয়ব বাতাসে, রেডিও তরঙ্গে, ঘরের দেয়ালে, মেঝে ও ছাদের প্রতি অণু-পরমাণুতে এবং কোন পথে, ময়দানে বা ক্ষেতে কোন কথা বলে থাকলে সেখানকার প্রতিটি অণু কণিকায় তা গেঁথে আছে। আল্লাহ‌ যখনি চাইবেন একথাগুলোকে এসব জিনিসের মাধ্যমে তখনই হুবহু ঠিক তেমনিভাবে শুনিয়ে দিতে পারবেন যেভাবে সেগুলো একদিন মানুষের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল। সে সময় মানুষ নিজের কানেই নিজের এই আওয়াজ শুনে নেবে। তার পরিচিতিজনেরাও তার এই আওয়াজ চিনে নেবে এবং তারা একে তারই কন্ঠধ্বনি ও বাকভঙ্গীমা বলে সণাক্ত করবে। তারপর মানুষ যমীনের যেখানেই যে অবস্থায় যেকোনো কাজ করেছে তার প্রতিটি নড়াচড়া ও অঙ্গভঙ্গীর প্রতিচ্ছবি তার চারপাশের সমস্ত বস্তুতে পড়েছে এবং সেগুলোর মধ্যে সেসব চিত্রায়িত হয়ে রয়েছে। একেবারে নিকষ কালো আঁধারের বুকে সে কোনো কাজ করে থাকলেও আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধীন এমনসব রশ্মি রয়েছে যেগুলোর কাছে আলো-আঁধার সমান, তারা সকল অবস্থায় তার ছবি তুলতে পারে। এসব ছবি কিয়ামতের দিন একটি সচল ফিল্মের মতো মানুষের সামনে এসে যাবে এবং সারাজীবন সে কোথায় কি করেছে তা তাকে দেখিয়ে দেবে। আসলে প্রত্যেক মানুষের কর্মকাণ্ড আল্লাহ‌ সরাসরি জানলেও আখেরাতে যখন তিনি আদালত কায়েম করবেন তখন সেখানে যাকেই শাস্তি দেবেন ইনসাফ ও ন্যায়নীতির দাবী পুরোপুরি পালন করেই শাস্তি দেবেন। তাঁর আদালতে প্রত্যেকটি অপরাধী মানুষের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করা হবে তার সপক্ষে এমনসব অকুটিল সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা হবে যার ফলে তার অপরাধী হবার ব্যাপারে কারো কোন কথা বলার অবকাশ থাকবে না। সর্বপ্রথম পেশ করা হবে তার আমলনামা। সবসময় তার সাথে লেগে থাকা কেরামান কাতেবীন ফেরেশতাদ্বয় তার প্রত্যেকটি কথা ও কাজ রের্কড করছেন। (সূরা কাফ-১৭ আয়াত, সূরা ইনফিতার ১০-১২ আয়াত) এ আমলনামা তার হাতে দিয়ে দেয়া হবে। তাকে বলা হবে, তোমার জীবনের এই কার্যবিবরণী পড়ো। নিজের হিসেবে নেবার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট। (বনি ইসরাঈল ১৪) মানুষ তা পড়ে অবাক হয়ে যাবে। কারণ ছোট বড় এমন কোন বিষয় নেই যা তাতে যথাযথভাবে সংযোজিত হয়নি। (আল কাহাফ ৪৯) এরপর হচ্ছে মানুষের নিজের শরীর। দুনিয়ায় এই শরীরের সাহায্যে সে সমস্ত কাজ করেছে। আল্লাহর আদালতে তার জিহবা সাক্ষ্য দেবে, সে দুনিয়ায় কি কি কথা বলে‌ছে, তার নিজের হাত পা সাক্ষ্য দেবে তাদেরকে দিয়ে সে কোন্‌ কোন্‌ কাজ করিয়েছে। (আন নূর ২৪) তার চোখজোড়া সাক্ষ্য দেবে। তার কান সাক্ষ্য দেবে, তার সাহায্যে সে কি কি কথা শুনেছে। তার শরীরের গায়ে লেপ্টে থাকা চামড়া তার যাবতীয় কাজের সাক্ষ্য দেবে। সে পেরেশান হয়ে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলবে, তোমরাও আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছো? তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জবাব দেবে, আজ যে আল্লাহর হুকুমে সমস্ত জিনিস চলছে তাঁরই হুকুমে আমরাও চলছি। (হা-মীম সাজদাহ ২০ থেকে ২২) এরপরে আছে আরো অতিরিক্ত সাক্ষ্য। এই সাক্ষ্যগুলো পেশ করা হবে যমীন ও তার চারপাশের সমগ্র পরিবেশ থেকে। সেখানে নিজের আওয়াজ মানুষ নিজের কানে শুনবে। নিজের প্রতিটি কাজকর্মের প্রতিচ্ছবি নিজের চোখেই দেখবে। এর চাইতেও অগ্রসর হয়ে দেখা যাবে, মানুষের মনে যেসব চিন্তা, ইচ্ছা, সংকল্প ও উদ্দেশ্য লুকিয়ে ছিল এবং যেসব নিয়তের মাধ্যমে সে নিজের সমস্ত কাজ করেছিল তাও সব সামনে এনে রেখে দেয়া হবে। যেমন সামনে সূরা আদিয়াতে এ বিষয়ে আলোচনা আসছে। এ কারণে এবং এ ধরনের চূড়ান্ত ও জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ সামনে এসে যাবার পর মানুষ অবাক ও নির্বাক হয়ে যাবে। নিজের পক্ষ থেকে ওজর পেশ করার কোন সুযোগই তার থাকবে না। (আল মুরসালাত ৩৫-৩৬)

মু’জামে তিবরানীতে হযরত রাবীআ’হ হাদাসী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জমীনের ব্যাপারে সাবধান থেকো । ওটা তোমাদের মা। ওর উপর যে ব্যক্তি যে পাপ বা পুণ্য কাজ করবে সে তো খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করে দিবে ।” এখানে অহী দ্বারা আদেশ করা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা জমীনকে বলবেনঃ “বলে দাও” তখন সে বলে দিবে । সেদিন মানুষ হিসাবের জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের দলে বিভক্ত হয়ে ফিরবে । কেউ হবে পুণ্যবান এবং কেউ হবে পাপী । কেউ জান্নাতী হবে, আবার কেউ জাহান্নামী হবে। এ অর্থও করা হয়েছে যে, এখান থেকে তারা পৃথক হবে, আর তারা মসবেত হবে না। এর কারণ হলো এই যে, তারা নিজেদের আমলসমূহ জেনে নিবে এবং ভালমন্দের প্রতিফল পেয়ে যাবে । এজন্যেই শেষেও একথাই বলে দেয়া হয়েছে।

সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে, এর দু’টো অর্থ হতে পারে। এক, প্রত্যেক ব্যক্তি একাকী তার ব্যক্তিগত অবস্থায় অবস্থান করবে। পরিবার, গোষ্ঠী, জোট, দল, সম্প্রদায় ও জাতি সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানেও একথা বলা হয়েছে। যেমন সূরা আন’আমে রয়েছে, সেদিন মহান আল্লাহ‌ লোকদের বলবেনঃ “নাও, এখন তুমি এমনিতেই একাকী আমার সামনে হাজির হয়ে গেছো, যেমন আমি প্রথমবার তোমাকে সৃষ্টি করেছিলাম।” (৯৪ আয়াত) আর সূরা মারয়ামে বলা হয়েছেঃ “একাকী আমার কাছে আসবে।” (৮০ আয়াত) আরো বলা হয়েছেঃ “তাদের মধ্য থেকে প্রত্যেকে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে একাকী হাযির হবে।” (৯৫ আয়াত) দুই, এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, বিগত হাজার হাজার বছরে সমস্ত মানুষ যে যেখানে মরেছিল সেখান থেকে অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে চলে আসতে থাকবে। যেমন সূরা নাবায় বলা হয়েছেঃ “যে দিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তোমার দলে দলে এসে যাবে। (১৮ আয়াত) এছাড়া বিভিন্ন তাফসীরকার এর যে অর্থ বর্ণনা করেছেন তার অবকাশ এখানে উল্লেখিত “আশতাতান” (أَشْتَاتًا) শব্দের মধ্যে নেই। তাই আমার মতে সেগুলো এই শব্দটির অর্থগত সীমাচৌহদ্দীর বাইরে অবস্থান করছে। যদিও বক্তব্য হিসেবে সেগুলো সঠিক এবং কুরআন ও হাদীস বর্ণিত কিয়ামতের অবস্থা ও ঘটনাবলীর সাথে সামঞ্জস্য রাখে।

 

لِّیُرَوۡا اَعۡمَالَهُمۡ – যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখান যায়,

এর দুটি অর্থ হতে পারে। এক, তাদের আমল তাদেরকে দেখানো হবে। অর্থাৎ প্রত্যেকে দুনিয়ায় কি কাজ করে এসেছে তা তাকে বলা হবে। দুই, তাদেরকে তাদের কাজের প্রতিফল দেখানো হবে। যদিও لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ বাক্যটির জন্য এই দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করা যেতে পারে তবুও যেহেতু আল্লাহ‌ এখানে لِيُرَوْا جزاء أَعْمَالَهُمْ (তাদের কাজের প্রতিফল দেখাবার জন্য) না বলে বলেছেন لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ (তাদের কাজগুলো দেখানো হবে) তাই সঙ্গতভাবেই প্রথম অর্থটি এখানে অগ্রাধিকার পাবে। বিশেষ করে যখন কুরআন মজীদের বিভিন্নস্থানে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কাফের ও মুমিন, সৎকর্মশীল ও ফাসেক, আল্লাহর হুকুমের অনুগত ও নাফরমান সবাইকে অবশ্যি তাদের আমলনামা দেয়া হবে। (উদাহরণস্বরূপ দেখুন সূরা আল হাক্কার ১৯ ও ২৫ এবং সূরা আল ইনশিকাকের ৭১০ আয়াত) একথা সুস্পষ্ট, কাউকে তার কার্যাবলী দেখিয়ে দেয়া এবং তার আমলনামা তার নিজের হাতে সোপর্দ করার মধ্যে কোন তফাত নেই। তাছাড়া যমীন যখন তার ওপর অনুষ্ঠিত ঘটনাবলী পেশ করবে তখন হক ও বাতিলের যে দ্বন্দ্ব ও বিরোধ শুরু থেকে চলে আসছিল এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে, তার সম্পূর্ণ চিত্রও সবার সামনে এসে যাবে। সেখানে সবাই দেখবে, সত্যের জন্য যারা কাজ করেছিল তারা কি কি কাজ করেছে এবং মিথ্যার সমর্থকরা তাদের মোকাবেলায় কি কি কাজ করেছে। হিদায়াতের পথে আহ্বানকারী ও গোমরাহী বিস্তারকারীদের সমস্ত শুনবে, এটা কোন অসম্ভব কথা নয়। উভয় পক্ষের সমগ্র রচনা ও সাহিত্যের রেকর্ড অবিকল সবার সামনে এনে রেখে দেয়া হবে। হকপন্থীদের ওপর বাতিল পন্থীদের জুলুম এবং উভয় পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বন্দ্ব ও সংঘাত সমূহের দৃশ্যাবলী হাশরের ময়দানে উপস্থিত লোকেরা নিজেদের চোখেই দেখে নেবে।

 

এ আয়াতে خير বলে শরীয়তসম্মত সৎকর্ম বোঝানো হয়েছে; যা ঈমানের সাথে সম্পাদিত হয়ে থাকে। কেননা, ঈমান ব্যতীত কোন সৎকর্মই আল্লাহর কাছে সৎকর্ম নয়। কুফর অবস্থায় কৃত সৎকর্ম আখেরাতে ধর্তব্য হবে না যদিও দুনিয়াতে তার প্রতিদান দেয়া হয়। তাই এ আয়াতকে এ বিষয়ের প্রমাণস্বরূপ পেশ করা হয় যে, যার মধ্যে অণু পরিমাণ ঈমান থাকবে, তাকে অবশেষে জাহান্নাম থেকে বের করে নেয়া হবে। কেননা, এ আয়াতের ওয়াদা অনুযায়ী প্রত্যেকের সৎকর্মের ফল আখেরাতে পাওয়া জরুরী। কোন সৎকর্ম না থাকলেও স্বয়ং ঈমোনই একটি বিরাট সৎকর্ম বলে বিবেচিত হবে। ফলে মুমিন ব্যক্তি যতবড় গোনাহগারই হোক, চিরকাল জাহান্নামে থাকবে না। কিন্তু কাফের ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন সৎকর্ম করে থাকলে ঈমানের অভাবে তা পণ্ডশ্রম মাত্র। তাই আখেরাতে তার কোন সৎকামই থাকবে না।

এ প্রসংগে কুরআন মজীদ নীতিগতভাবে কয়েকটি কথা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বর্ণনা করে :

  • এক : কাফের , মুশরিক ও মোনাফেকের কর্মকাণ্ড ( অর্থাৎ এমনসব কর্মকাণ্ড যেগুলোকে নেকী মনে করা হয়) নষ্ট করে দেয়া হয়েছে৷ আখোরাতে তারা এর কোন প্রতিদান পাবে না৷ এগুলোর যা প্রতিদান , তা তারা দুনিয়াতেই পেয়ে যাবে৷ এ জন্য উদাহরণ স্বরূপ দেখুন আল আরাফ ১৪৭ , আত তাওবা ১৭, ৬৭ – ৬৯ , হুদ ১৫- ১৬ , ইবরাহীম ১৮ , আল কাহফ ১০৪- ১০৫ , আন নূর ৩৯ , আল ফুরকান ২৩, আল আহযাব ১৯ , আয যুমার ৬৫ এবং আল আহকাফ ২০ আয়াত )
  • দুই : পাপের শাস্তি ততটুকু দেয়া হবে যতটুকু পাপ করা হয়৷ কিন্তু নেকীর পুরস্কার মূল কাজের তুলনায় বেশী দেয়া হবে৷ বরং কোথাও বলা হয়েছে , আল্লাহ নিজের ইচ্ছেমতো নেকীর প্রতিদান বাড়িয়ে দেবেন৷ দেখুন আল বাকারাহ ২৬১ , আল আনআম ১৬০ , ইউনুস ২৬- ২৭ , আন নূর ৩৮ , আল কাসাস ৮৪ , সাবা ৩৭ এবং আল মু’মিন ৪০ আয়াত৷
  • তিন : মু’মিন যদি বড় বড় গোনাহ থেকে দূরে থাকে তাহলে তার ছোট গোনাহগুলো মাফ করে দেয়া হবে৷ দেখুন আন নিসা ৩১ , আশ শূরা ৩৭ এবং আন নাজম ৩২ আয়াত ৷
  • চার : সৎ মু’মিনের কাছ থেকে হালকা হিসেব নেয়া হবে ৷ তার গোনাহগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হবে ৷ তার ভালো ও উত্তম আমলগুলোর দৃষ্টিতে বিচার করে তাকে প্রতিদান দেয়া হবে৷ দেখুন আনকাবুত ৭ , আযযুমার ৩৫ , আল আহকাফ ১৬ এবং আল ইনশিকাক ৮ আয়াত ৷

প্রত্যেকটি সামান্যতম ও নগণ্যতম সৎকাজেরও একটি ওজন ও মূল্য রয়েছে এবং অনুরূপ অবস্থা অসৎকাজেরও। অসৎকাজ যত ছোটই হোক না কেন অবশ্যি তার হিসেব হবে এবং তা কোনক্রমেই উপেক্ষা করার মতো নয়। তাই কোন ছোট সৎকাজকে ছোট মনে করে ত্যাগ করা উচিত নয়। কারণ এই ধরনের অনেক সৎকাজ মিলে আল্লাহর কাছে একটি অনেক বড় সৎকাজ গণ্য হতে পারে। অনুরূপভাবে কোন ছোট ও নগণ্য অসৎকাজও না করা উচিত; কারণ এই ধরনের অনেকগুলো ছোট গোনাহ একত্র হয়ে একটি বিরাট গোনাহের স্তুপ জমে উঠতে পারে। [দেখুন: কুরতুবী, সা’দী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো-তা এক টুকরা খেজুর দান করার বা একটি ভালো কথা বলার বিনিময়েই হোক না কেন” [বুখারী: ৬৫৪০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ “কোন সৎকাজকেও সামান্য ও নগণ্য মনে করো না, যদিও তা কোন পানি পানেচ্ছু ব্যক্তির পাত্রে এক মগ পানি ঢেলে দেয়াই হয় অথবা তোমার কোন ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করাই হয়।” [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৬৩]

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়েদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, হে মুসলিম মেয়েরা! কোন প্রতিবেশী তার প্রতিবেশিনীর বাড়ীতে কোন জিনিস পাঠানোকে সামান্য ও নগণ্য মনে করো না, তা ছাগলের পায়ের একটি খুর হলেও।” [বুখারী: ৬০১৭, মুসলিম: ১০৩০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেন, “হে আয়েশা! যেসব গোনাহকে ছোট মনে করা হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকো। কারণ আল্লাহর দরবারে সেগুলো সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [মুসনাদে আহমাদ: ৬/৭০, ৫/১৩৩, ইবনে মাজাহ: ৪২৪৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ “সাবধান, ছোট গোনাহসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষা করো। কারণ সেগুলো সব মানুষের ওপর একত্র হয়ে তাকে ধ্বংস করে দেবে।” [মুসনাদে আহমাদ: ১/৪০২] [ইবন কাসীর]

 

ফুটনোট

  • হাদীসে সূরা যিলযালকে কুরআনের অর্ধেক/এক-চতুর্থাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • যমীন তার ভার হিসাবে ২টি বিষয় বের করে দেবে,
    • মানুষ
    • মানুষের কৃতকর্ম
  • কিয়ামতের দিন মানুষ দুইভাগে ভাগ হবে তার কৃতকর্মের আলোকে
  • অনু পরিমাণ ছোট খারাপ কাজ কিংবা ভালো কাজ হউক। প্রতিটি কৃতকর্ম সে দিন গণনা করা হবে।
  • যমীন সেদিন মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে।
  • কিয়ামতের সবকিছুই হবে আল্লাহর হুকুমে