কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা ২০২২
প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ ১
কুরআন শব্দের অর্থ : পাঠ করা, বেশি বেশি পড়া, অধিক পঠিত।
আলোচ্য বিষয় : মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণের পথ নির্দেশ করা।
বিষয় বস্তু : মানুষ।
কুরআনের অপর কয়েকটি নাম :
আল-হুদা, আল-ফুরকান, আন-নূর, আয-যিকর, কিতাবুল-মুবিন, আল-কালাম, কিতাবুল মাসানী, আল-হিকমত, কিতাবুল হাকীম, সিরাতুল-মুস্তাকিম, আল হাদি, আল বোরহান
সূরা ফাতিহার অপর কয়েকটি নাম
উম্মুল কুরআন, উমমূল কিতাব, সুরাতুত দোয়া, সুরাতুল মুনাযাত, সুরাতুস শিফা, সুরাতুল হামদ, সুরাতুশ শোকর, মোনাযাত, সালাত, সিজদাহ সিফাহ
কোরআন কিভাবে নাযিল হয়েছেঃ পবিত্র কুরআন একসাথে আল্লাহর রাসুল (সঃ) এর উপর নাযিল করা হয়নি, বিভিন্ন অবস্থা এবং ঘটনার পরিপেক্ষিতে আয়াত ও সূরা নাযিল হয়। নাযিলের সময়কাল ২৩ বছর।
ওহী নাযিলের পদ্ধতিঃ ৮ টি
১। ঘন্টাধনির সাহায্যে ২। সত্য-স্বপ্নযোগে ৩। হযরত জিব্রাইল (আঃ) স্বয়ং নিজ আকৃতিতে উপস্থিত হয়ে ৪। মানুষের আকৃতিতে (হযরত দাহিয়াতুল ক্বালবী (রাঃ)), ৫। পর্দার অন্তরাল হতে আল্লাহর বাণী শ্রবণ ৬। মৌমাছির গুণগুণ শব্দের ন্যায় ৭। অন্তরে কোনকিছু ঢেলে দেয়া (ইলহামের মাধ্যমে) ৮। ইসরাফিলের ওহী
কুরআনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যঃ
সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ, শেষ ঐশী গ্রন্থ, মানব জাতির ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির সনদ, ভারসাম্যপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, শ্বাশত আইন, অন্যতম সাহিত্য, রাসুলের (সঃ) শ্রেষ্ঠ মোজেযা।
কুরআনের সূরা ও আয়াতের প্রকারভেদঃ
* বিষয়ভিত্তিক/ হুকুমের দিক থেকে আয়াত ৩ প্রকার : যথা_ ১. হালাল ২. হারাম ৩. আমছাল
* শব্দগত দিক থেকে আয়াত দুই প্রকার। যথা, ১. মুহকামাত, যার অর্থ ও মর্ম সহজেই অনুধাবন করা যায়। ২. মুতাশাবিহাত, যার অর্থ ও মর্ম অনুধাবনে চিন্তা, গবেষণার প্রয়োজন হয়।
* কোরআনের সূরা সমূহ চার প্রকার৷ তেওয়াল; মাউন; মাছানি; মুফাছ্ছাল.
* নাজিলের দিক দিয়ে সূরাগুলো ২ প্রকার : ১. মাক্কী ২. মাদানী।
মাক্কী সূরা সংখ্যা : ৮৬টি। মাদানী সূরা সংখ্যা : ২৮টি।
মাক্কী সূরা : যে সমস্ত সূরা রাসূলের (সা.) মাক্কী জীবনে অর্থাৎ হিজরতের পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে তাদেরকে মাক্কী সূরা বলে।
মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্য :
* রাসুলকে (সঃ) দেয়া বিরাট দায়িত্ব পালনের উপযোগী উপদেশ
* জীবন ও জগত সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা অপনোদন ও সঠিক বিশ্বাস সৃষ্টির চেষ্টা, ইসলামের বুনিয়াদী ভিত্তিকে বিভিন্নভাবে পেশ করা, তাওহীদ, রেসালাত ও আখিরাতের বেশি চর্চা।
* মানুষের ঘুমন্ত বিবেক ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করে চিন্তা শক্তিকে সত্য গ্রহণে আগ্রহী করা।
* প্রাথমিকভাবে সবগুলোর ভাষা স্বচ্ছ ঝর্না ধারার মত ঝরঝরে, ছোটছোট, ছন্দময়, সহজে মুখস্থ হবার উপযোগী।
* মাক্কী সূরা ব্যক্তি গঠনে হেদায়াত পূর্ণ।
* মাক্কী সূরায় ধৈর্যের উপদেশ, বিরোধিতার জবাব ও মোকাবেলা করার পথ দেখানো হয়েছে।
* হিজরতের পূর্বে নাজিল হয়েছে।
* অধিকাংশ সূরা ছোট ছোট।
মাদানী সূরা : যে সমস্ত সূরা রাসূলের (সা.) মাদানী জীবনে অর্থাৎ হিজরতের পরে অবতীর্ণ হয়েছে তাদেরকে মাদানী সূরা বলে।
মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্যঃ
* অধিকাংশ দীর্ঘ সূরা।
* হিজরতের পরে নাযিল
* সমাজ গঠনে বিধান
* ফৌজদারী আইন, মিরাসী বিধান, বিয়ে-তালাক, যাকাত-উশর ইত্যাদীর নিয়ম কানুন।
* দল, রাষ্ট্র, সভ্যতা ও সামাজিকতার ভিত্তি
* মুনাফিক, কাফির, জিম্মি, আহলে কিতাব যুদ্ধমান শত্রু, সন্ধিসুত্রে আবদ্ধ জাতির প্রতি আচরন।
* জয় পরাজয়, বিপদ-শানত্দি, নিরাপত্তা ও ভীতি ইত্যাদী অবস্থায় মুসলমানদের কর্তব্য।
কোরআন সংকলনঃ ৩ টি পন্থা
* লিখিত অংশ
* সাহাবায়ে কেরামদের নিকট থেকে
* হাফেজদের নিকট থেকে
কোরআন সংকলন ও সংরক্ষণের ইতিহাসঃ
মহানবী (সঃ) এর জীবিত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সাহাবীরা কোরআন মুখস্থ করে নিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে লিখে রেখে নিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে হযরত আবুবকর (রাঃ) এর আমলে যখন ইয়ামামার যুদ্ধে ৭০ জন হাফেজে কুরআন শাহাদাত বরণ করেন তখন হযরত ওমর (রাঃ) এর পরামর্শক্রমে যায়েদ বিন সাবিত (রাঃ) এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন ও সংকলনের কাজ করেন। এর কপি প্রথমে আবু বকর রা এর কাছে রাখেন পরবর্তীতে উমর রা কাছে এবং এরপর এর মূল এক কপি হযরত হাফসা (রাঃ) এর কাছে রাখেন।
আরও পরে হযরত উসমান (রাঃ) এর আমলে এসে সাতটি ভাষায় কুরআন রচিত ও প্রচলিত ছিল। তিনি একত্রিত করে সবগুলো পুড়িয়ে দেন ও কুরাইশ ভাষা ব্যতীত সব ভাষার তেলাওয়াত লুপ্ত করেন। পরবর্তীতে একটি কপি আবার হযরত হাফসা (রাঃ) এর নিকট রাখেন এবং তার কয়েকটি কপি করে বিভিন্ন দেশের প্রধানদের কাছে পাঠান।
কুরআন সংরক্ষনের মাধ্যম–
* সাহাবীদের মুখস্থ করে অন্তকরনের মাধ্যমে
* গাছের পাতায় লিখে
* গাছের ছালে লিখে
* পশুর চামড়ায় লিখে
* পশুর হাড়ে লিখে
* পাথরের গায়ে লিখে।