কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা ২০২২
প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ ১৪
সূরা নূর (২১-২৬)
কুরআনের ২৪ তম সূরা। মোট ৬৪ আয়াত, রুকু সংখ্যা ৬। সূরার নামের বাংলা অর্থ আলো। এটি মাদানী সূরা। এ সূরায় হযরত আয়েশা রা. এর উপর দেওয়া অপবাদ খন্ডন করা হয়েছে।
সূরার বিষয়বস্তু
এ সূরায় ব্যভিচারের শাস্তি ঘোষণা করা হয়। কারো বিরুদ্ধে অহেতুক ব্যাভিচারের অপবাদ দেবার শাস্তি ঘোষিত হয়। ১১ নং আয়াতে হযরত আয়েশা রা. এর বিরুদ্ধে আনা অপবাদের জবাব দেওয়া হয়। ২৭ নং আয়াতে অনুমতি ছাড়া অপরের ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করে আইন করা হয়। ৩০ ও ৩১ নং আয়াতে যথাক্রমে পুরুষ ও নারীদের জন্যে পর্দার বিধান দিয়ে দৃষ্ঠি নিচু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩১ নং আয়াতে গাইরে মাহরামদের (যাদের সাথে বিয়ে জায়েয কিন্তু দেখা দেওয়া হারাম) তালিকা দেওয়া হয়। ৩৫ আয়াতে আল্লাহ একটি উপমার দ্বারা নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। পরবর্তী আয়াতগুলোতে সৃষ্ঠিজগতের প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক কিছু নিদর্শনের প্রতি ইঙ্গিত করে পরকালের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
সূরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য : এ সূরায় আল্লাহ পাকের বিধি-নিষেধ, শাসন-শৃঙখলা এবং তাওহীদের বিবরণ স্থানপেয়েছে। চরিত্রের পবিত্রতা অর্জন এবং নৈতিক মান উন্নয়য়ের উপর এ সূরায় বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এ সূরা সম্পর্কে হযরত ওমর (রা.) কুফাবাসীর নামে একটি ফরমান জারি করেছিলেন। তোমাদের স্ত্রী লোকদেরকে সূরা নূর শিক্ষা দাও, যাতে করে তারা অবহিত হয় যে, চরিত্রের পবিত্রতাই হলো নূর এবং চরিত্রের অপবিভ্রতা হলো অন্ধকার ।
সায়ীদ ইবনে মনসূর, ইবনুল মুনজির, বায়হাকী মুজাহিদ (র.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, প্রিয়নবী ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পুরুষদেরকে সূরা মায়েদা শেখাও; আর তোমাদের স্ত্রী লোকদেরকে সূরা নূর শেখাও।
হারেসা ইবনে মেজরাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, তোমরা তোমাদের স্ত্রী লোকদেরকে সূরা নিসা, সূরা আহযাব এবং সূরা নূর শেখাও। -[রূহুল মা’আনী ]
আগের ও পরের সূরার সাথে সম্পর্ক : পূর্ববর্তী সূরা মু’মিনূন –এর প্রথমে মুমিনগণের গুণাবলি এবং বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে একটি গুণের উল্লেখ করা হয়েছিল, যে গুনাবলীর কারণে মুমিনগণের নৈতিক মান উন্নীত থাকে। তারা চরিত্র মাধূর্যের অধিকারী হয়।
আর এ সূরার প্রথমে সেসব লোকদের শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে যারা চারিত্রিক দুর্বলতার পরিচয় দেয়, যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে মানবতার অবমাননা করে এবং যারা এ পর্যায়ে সীমালঙ্ঘন করে । যারা এমনি অন্যায় অনাচারে লিপ্ত হয়, তাদের অন্তর থেকে নূর দূরীভূত হয়ে যায় । আর যারা অনাচার, ব্যভিচার থেকে আত্মরক্ষা করে, তাদের অন্তরে নূর সৃষ্টি হয়। তত্জ্ঞানীগণ লিখেছেন এ নূরই কাল কিয়ামতের কঠিন দিনে পুলসিরাত পার হওয়ার ব্যাপারে সহায়ক হবে । এজন্যে হাদীস শরীফে একথার উল্লেখ রয়েছে যে, পুলসিরাতে পৌঁছার পর মুনাফিকদের নূর বিদায় নেবে, তারা আর পুলসিরাতের পথ দেখবে না । এজন্যে মুমিনগণ ভীত সন্ত্রস্ত হবে যেন মুনাফিকদের ন্যায় মুমিনদের নূরও দূরীভূত না হয়। এ কারণেই মুমিনগণ আল্লাহ পাকের দরবারে তাদের নূরকে পরিপূর্ণ করার জন্যে মুনাজাত করে বলে,
পবিত্র কুরআনের ভাষা “হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদের নূরকে পরিপূর্ণ করে দিও এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান । “ আর এই নূর কোথায় পাওয়া যায়? এ কথার জবাবও রয়েছে আলোচ্য সূরায়, অর্থাৎ মসজিদ সমূহে, আল্লাহ জিকিরের মাধ্যমে তথা তার বন্দেগীর মাধ্যমে । পক্ষান্তরে অন্ধকার সৃষ্টি হয় অন্যায়-অনাচার ও ব্যভিচার এবং জুলুম অত্যচারের মাধ্যমে। আর এ নূর হলো হেদায়েতের নূর। এ নুরের প্রাণকেন্দ্র লেন স্বয়ং আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন, তাই পরবর্তী আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- আর আল্লাহ পাকই আসমান জমিনের নূর ।
সূরা নূরের শেষে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ভালোভাবেই জানেন যে তোমরা কোন অবস্থায় আছো অর্থাৎ তোমাদের আকিদা বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা এবং কার্যকলাপ সম্পর্কে আল্লাহ্ সম্পূর্ণ অবগত এবং কাফিরদের প্রতি সতর্কবানী উচ্চারণ করেছেন। পরের সূরা ফুরকানে প্রথমে আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন- কত বরকতময় তিনি! যিনি তাঁর বান্দার উপর ফুরকান নাযিল করেছেন, সৃষ্টিজগতের জন্য সতর্ককারী হওয়ার জন্য। (সূরা ফুরকান ১)।
এই সূরা নাযিলের বিশেষ ঘটনাঃ
সূরা আন-নূরের অধিকাংশ আয়াত চারিত্রিক নিষ্কলুষতা ও পবিত্ৰতা সংরক্ষণের জন্য প্রবর্তিত বিধানাবলীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এর বিপরীতে চারিত্রিক নিষ্কলুষতা ও পবিত্রতার উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ ও এর বিরুদ্ধাচরণের জাগতিক শাস্তি ও আখেরাতের মহা বিপদের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তাই পরম্পরায় প্রথমে ব্যভিচারের শাস্তি, তারপর অপবাদের শাস্তি ও পরে লি’আনের কথা বর্ণিত হয়েছে। অপবাদের শাস্তি সম্পর্কে চার জন সাক্ষীর অবর্তমানে কোন পবিত্ৰা নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করাকে মহাপাপ সাব্যস্ত করা হয়েছে। এরূপ অপবাদ আরোপকারীর শাস্তি আশিটি বেত্ৰাঘাত প্রবর্তন করা হয়েছে। এ বিষয়টি সাধারণ মুসলিম পবিত্ৰা নারীদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
ষষ্ট হিজরীতে কতিপয় মুনাফেক উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি এমনি ধরণের অপবাদ আরোপ করেছিল এবং তাদের অনুসরণ করে কয়েকজন মুসলিমও এ আলোচনায় জড়িত হয়ে পড়েছিলেন। ব্যাপারটি সাধারণ মুসলিম সচ্চরিত্রা নারীদের পক্ষে অত্যাধিক গুরুতর ছিল। তাই কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা’আলা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার পবিত্রতা বর্ণনা করে এ স্থলে উপরোক্ত দশটি আয়াত নাযিল করেছেন। [ইবন কাসীর]
এসব আয়াতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার পবিত্ৰতা ঘোষণা করতঃ তার ব্যাপারে যারা কুৎসা রটনা ও অপপ্রচারে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের সবাইকে হুশিয়ার করা হয়েছে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের বিপদ বর্ণনা করা হয়েছে। এই অপবাদ রটনার ঘটনাটি কুরআন ও হাদীসে ‘ইফকের ঘটনা’ নামে খ্যাত। ইফক শব্দের অর্থ জঘন্য মিথ্যা অপবাদ। এসব আয়াতের তাফসীর বুঝার জন্য অপবাদের কাহিনীটি জেনে নেয়া অত্যন্ত জরুরী। তাই প্রথমে সংক্ষেপে কাহিনীটি বর্ণনা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে এই ঘটনাটি অসাধারণ দীর্ঘ ও বিস্তারিত আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এই যে, ষষ্ঠ হিজরীতে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী মুস্তালিক নামান্তরে মুরাইসী যুদ্ধে গমন করেন, তখন স্ত্রীদের মধ্য থেকে আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সাথে ছিলেন। ইতিপূর্বে নারীদের পর্দার বিধান নাযিল হয়েছিল। তাই আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার উটের পিঠে পর্দাবিশিষ্ট আসনের ব্যবস্থা করা হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা প্ৰথমে পর্দাবিশিষ্ট আসনে সওয়ার হয়ে যেতেন। এরপর লোকেরা আসনটিকে উটের পিঠে বসিয়ে দিত। এটাই ছিল নিত্যকার নিয়ম।
যুদ্ধ সমাপ্তির পর মদীনায় ফেরার পথে একদিন একটি ঘটনা ঘটল। এক মনযিলে কাফেলা অবস্থান করার পর শেষ রাতে প্রস্থানের কিছু পূর্বে ঘোষণা করা হল যে, কাফেলা কিছুক্ষণের মধ্যেই এখান থেকে রওয়ানা হয়ে যাবে। তাই প্ৰত্যেকেই যেন নিজ নিজ প্রয়োজন চলে গেলেন। সেখানে ঘটনাক্রমে তার গলার হার ছিড়ে কোথাও হারিয়ে গেল। তিনি সেখানে হারটি খুঁজতে লাগলেন। এতে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। অতঃপর স্বস্থানে ফিরে এসে দেখলেন যে, কাফেলা রওয়ানা হয়ে গেছে। রওয়ানা হওয়ার সময় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার আসনটি যথারীতি উটের পিঠে সওয়ার করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং বাহকরা মনে করেছে যে, তিনি ভেতরেই আছেন। এমনকি উঠানোর সময়ও সন্দেহ হল না।
কারণ, তিনি তখন অল্পবয়স্কা ক্ষীণাঙ্গিণী ছিলেন। ফলে আসনটি যে শূণ্য এরূপ ধারণাও কারো মনে উদয় হল না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ফিরে এসে যখন কাফেলাকে পেলেন না, তখন অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও স্থিরচিত্ততার পরিচয় দিলেন এবং কাফেলার পশ্চাতে দৌড়াদৌড়ি করা কিংবা এদিক-ওদিক খুঁজে দেখার পরিবর্তে স্বস্থানে চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে রইলেন। তিনি মনে করলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সঙ্গীগণ যখন জানতে পারবেন যে, আমি আসনে অনুপস্থিত তখন আমার খোঁজে তারা এখানে আসবেন। কাজেই আমি এদিক-সেদিক চলে গেলে তাদের জন্য আমাকে খুঁজে বের করা মুশকিল হয়ে যাবে। সময় ছিল শেষ রাত, তাই তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই নিদ্রার কোলে ঢলে পড়লেন।
অপরদিকে সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন যে, তিনি কাফেলার পশ্চাতে সফর করবেন এবং কাফেলা রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর কোন কিছু পড়ে থাকলে তা কুড়িয়ে নেবেন। তিনি সকাল বেলায় এখানে পৌছলেন। তখন পর্যন্ত প্রভাত-রশ্মি ততটুকু উজ্জ্বল ছিল না। তিনি শুধু একজন মানুষকে নিদ্রামগ্ন দেখতে পেলেন। কাছে এসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে চিনে ফেললেন। কারণ, পর্দা সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে তিনি তাকে দেখেছিলেন। চেনার পর অত্যন্ত বিচলিত কণ্ঠে তার মুখ থেকে “ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন” উচ্চারিত হয়ে গেল।
এই বাক্য আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কানে পৌঁছার সাথে সাথে তিনি জাগ্রত হয়ে গেলেন এবং মুখমণ্ডল ঢেকে ফেললেন। সফওয়ান নিজের উট কাছে এনে বসিয়ে দিলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাতে সওয়ার হয়ে গেলেন এবং সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজে উটের নাকের রশি ধরে পায়ে হেঁটে চলতে লাগলেন। অবশেষে তিনি কাফেলার সাথে মিলিত হয়ে গেলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ছিল দুশ্চরিত্র, মুনাফেক ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের শত্রু। সে একটা সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেল। এই হতভাগা আবোলতাবোল বকতে শুরু করল। কিছুসংখ্যক সরল-প্রাণ মুসলিমও কানকথায় সাড়া দিয়ে এ আলোচনায় মেতে উঠল। পুরুষদের মধ্যে হাসসান ইবনে সাবিত, মিস্তাহ ইবনে আসাল এবং নারীদের মধ্যে হামনাহ বিনতে জাহাশ ছিল এ শ্রেণীভুক্ত।
যখন এই মুনাফেক-রটিত অপবাদের চর্চা হতে লাগল, তখন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে খুবই মর্মাহত হলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার তো দুঃখের সীমাই ছিল না। সাধারণ মুসলিমগণও তীব্ৰভাবে বেদানাহত হলেন। একমাস পর্যন্ত এই আলোচনা চলতে লাগল। অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলা উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার পবিত্রতা বর্ণনা এবং অপবাদ রটনাকারী ও এতে অংশগ্রহণকারীদের নিন্দা করে উপরোক্ত আয়াতসমূহ নাযিল করলেন। অপবাদের হদ-এ বর্ণিত কুরআনী-বিধান অনুযায়ী অপবাদ আরোপকারীদের কাছ থেকে সাক্ষ্য তলব করা হল। তারা এই ভিত্তিহীন খবরের সাক্ষ্য কোথা থেকে আনবে? ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরীয়তের নিয়মানুযায়ী তাদের প্রতি অপবাদের হদ প্রয়োগ করলেন। প্রত্যেককে আশিটি বেত্ৰাঘাত করা হল। আবু দাউদের বর্ণনায়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন জন মুসলিম মিসতাহ, হামানাহ ও হাসসানের প্রতি হদ প্রয়োগ করেন। [আবু দাউদঃ ৪৪৭৪]
অতঃপর মুসলিমরা তাওবাহ করে নেয় এবং মুনাফেকরা তাদের অবস্থানে কায়েম থাকে। তবে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাস্তি দিয়েছেন প্রমাণিত হয়নি। যদিও তাবরানী কয়েকজন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শাস্তি দিয়েছেন। [দেখুন: মু’জামুল কাবীর ২১/১৪৬ (২১৪), ২৩/১৩৭ (১৮১), ২৩/১২৫ (১৬৪), ২৩/১২৪ (১৬৩)]
তাফসীর শুরু করার আগে এটা স্মরণ রাখার দরকার যে, সূরা নূরের ১১-২৬ নং আয়াত ইফকের ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে।
এখানে শয়তানের অনুসরণ করতে বাধা দেওয়ার পর এ কথা বলা যে, যদি আল্লাহর অনুগ্রহ না হত, তাহলে তোমাদের কেউ পবিত্র হতে পারত না। এর উদ্দেশ্য এই বুঝা গেল যে, যারা উক্ত মিথ্যারোপের ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়া হতে নিজেদের মুক্ত রেখেছে, তাদের প্রতি তা একমাত্র মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। তা না হলে তারাও তাতে জড়িয়ে পড়ত; যেমন কিছু মুসলমান জড়িয়ে পড়েছিল। সেই কারণে প্রথমতঃ শয়তানের চক্রান্ত হতে বাঁচার জন্য সর্বদা মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা ও তাঁর দিকে রুজু করতে থাক এবং দ্বিতীয়তঃ যারা মনের দুর্বলতার কারণে শয়তানের চক্রান্তের শিকার হয়ে গেছে, তাদেরকে অধিকাধিক ধিক্কার দিয়ো না, বরং হিতাকাঙ্ক্ষী মন নিয়ে তাদেরকে সংশোধনের চেষ্টা কর।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার প্রতি অপবাদের ঘটনায় মুসলিমদের মধ্যে মিসতাহ ও হাসসান জড়িয়ে পড়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াত নাযিল হওয়ার পর তাদের প্রতি অপবাদের শাস্তি প্রয়োগ করেন। তারা উভয়েই বিশিষ্ট সাহাবী এবং বদর-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট সাহাবীদের অন্যতম ছিলেন। কিন্তু তাদের দ্বারা একটি ভুল হয়ে যায় এবং তারা খাঁটি তাওবাহর তাওফীক লাভ করেন। আল্লাহ্ তা’আলা যেমন আয়েশার দোষমুক্ততা প্রকাশ্যে আয়াত নাযিল করেন, এমনিভাবে এই মুসলিমদের তাওবাহ কবুল করা ও ক্ষমা করার কথাও ঘোষণা করে দেন।
মিসতাহ আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আত্মীয় ও নিঃস্ব ছিলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে আর্থিক সাহায্য করতেন। যখন অপবাদের ঘটনার সাথে তার জড়িত থাকার কথা প্রমাণিত হল, তখন কন্যা-বৎসল পিতা আবু বকর সিদ্দীক কন্যাকে এমন কষ্টদানের কারণে স্বাভাবিকভাবেই মিসতাহর প্রতি ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি কসম করে বসলেন, ভবিষ্যতে তাকে কোনরূপ আর্থিক সাহায্য করবেন না। বলাবাহুল্য, কোন বিশেষ ফকীরকে আর্থিক সাহায্য নির্দিষ্টভাবে কোন বিশেষ মুসলিমের উপর ওয়াজিব নয়।
কেউ কাউকে আর্থিক সাহায্য করার পর যদি বন্ধ করে দেয়, তবে গোনাহর কোন কারণ নেই। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের দলকে আল্লাহ তা’আলা বিশ্বের জন্য একটি আদর্শ দিলরূপে গঠন করতে ইচ্ছক ছিলেন। তাই একদিকে বিচ্যূতিকারীদেরকে খাঁটি তাওবাহ এবং ভবিষ্যত সংশোধনের নেয়ামত দ্বারা ভূষিত করেছেন এবং অপরদিকে যারা স্বাভাবিক মনোকষ্টের কারণে গরীবদের সাহায্য ত্যাগ করার কসম করেছিলেন, তাদেরকেও আদর্শ চরিত্রের শিক্ষা আলোচ্য আয়াতে দান করেছেন। তাদেরকে বলা হয়েছে, তারা যেন কসম ভঙ্গ করে কাফফারা দিয়ে দেয়। গরীবদের আর্থিক সাহায্য থেকে হাত গুটিয়ে নেয়া তাদের উচ্চমর্যাদার পক্ষে সমীচীন নয়। আল্লাহ তা’আলা যেমন তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তেমনি তাদেরও ক্ষমা ও মার্জনা প্রদর্শন করা উচিত। [দেখুন: কুরতুবী]
আয়াতের শেষ বাক্যে বলা হয়েছেঃ তোমরা কি পছন্দ করা না যে, আল্লাহ্ তা’আলা। তোমাদের গোনাহ মাফ করবেন? আয়াত শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তৎক্ষণাৎ বলে উঠলেনঃ بَلىٰ وَاللهِ يَا رَبَّنَا إنَّا لَنُحِبُّ أنْ تَغْفِرَ لَنَا অর্থাৎ আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে মাফ করুন, আমি অবশ্যই তা পছন্দ করি। এরপর তিনি মিসতাহর আর্থিক সাহায্য পুনর্বহাল করে দেন এবং বলেনঃ এ সাহায্য কোনদিন বন্ধ হবে না। [বুখারীঃ ৪৭৫৭, মুসলিম ২৭৭০]
মূলে (গাফেলাত) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, সরলমনা ও ভদ্র মহিলারা, যারা ছল-চাতুরী জানে না, যাদের মন নির্মল,কলুষমুক্ত ও পাক-পবিত্র, যারা অসভ্যতা ও অশ্লীল আচরণ কি ও কিভাবে করতে হয় তা জানে না এবং কেউ তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেবে একথা যারা কোনদিন কল্পনাও করতে পারে না। হাদীসে বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিষ্কলুষ মহিলাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া সাতটি সর্বনাশা কবীরাহ গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। [দেখুন: বুখারীঃ ২৭৬৬, মুসলিমঃ ৮৯]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার এমন কতিপয় বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো অন্য কোন মহিলার ভাগ্যে জোটেনি। তিনি নিজেও আল্লাহর নেয়ামত প্ৰকাশার্থে এসব বিষয় গর্বভরে বর্ণনা করতেন।
প্রথম- হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিয়ে হওয়ার পূর্বে ফিরিশতা জিবরীল আলাইহিস সালাম একটি রেশমী কাপড়ে আমার ছবি নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করেন এবং বলেনঃ এ আপনার স্ত্রী। তিরমিযী: ৩৮৮০]
দ্বিতীয়- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছাড়া কোন কুমারী বালিকাকে বিয়ে করেননি।
তৃতীয়- তার কোলে মাথা রেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন।
চতুর্থ-আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার গৃহেই তিনি সমাধিস্থ হন।
পঞ্চম- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তখনো ওহী নাযিল হত, যখন তিনি আয়েশার সাথে একই লেপের নীচে শায়িত থাকতেন। অন্য কোন স্ত্রীর এরূপ বৈশিষ্ট্য ছিল না। [তিরমিযীঃ ৩৮৭৯]
ষষ্ট- আসমান থেকে তার নির্দোষিতার বিষয় নাযিল হয়েছে।
সপ্তম- তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলীফার কন্যা এবং সিদ্দীকা ছিলেন। আল্লাহ্ তা’আলা যাদেরকে দুনিয়াতেই ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকার ওয়াদা দিয়েছেন, তিনি তাদেরও অন্যতমা।
অষ্টম- সাহাবাগণ কোন ব্যাপারে সমস্যায় পড়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে আসলে তার কাছে কোন না কোন ইলম পেতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ফকীহ ও পণ্ডিতসুলভ জ্ঞানানুসন্ধান এবং বিজ্ঞজনোচিত বক্তব্য দেখে মূসা ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ আমি আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহার চাইতে অধিক শুদ্ধভাষী ও প্রাঞ্জলভাষী কাউকে দেখিনি। [তিরমিযীঃ ৩৮৮৪] কোন কোন মুফাস্সির বলেনঃ ইউসুফ ‘আলাইহিস সালামের প্রতি অপবাদ আরোপ করা হলে আল্লাহ তা’আলা একটি কচি শিশুকে বাকশক্তি দান করে ওর সাক্ষ্য দ্বারা তার দোষমুক্ততা প্রকাশ করেন। মারইয়ামের প্রতি অপবাদ আরোপ করা হলে আল্লাহ্ তা’আলা তার শিশু পুত্ৰ ঈসা ‘আলাইহিস সালামের সাক্ষ্য দ্বারা তাকে দোষমুক্ত করেন। আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার প্রতি অপবাদ আরোপ করা হলে আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনের দশটি আয়াত নাযিল করে তার দোষমুক্ততা ঘোষণা করেন, যা তার গুণ ও জ্ঞানগরিমাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
যেদিন তাদের বিরুদ্ধে স্বয়ং তাদের জিহবা ও হস্তপদাদী কথা বলবে ও তাদের অপরাধসমূহের সাক্ষ্য দেবে। হাদীসে এসেছে, কেয়ামতের দিন যে গোনাহগার তার গোনাহর স্বীকার করবে, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে মাফ করে দেবেন এবং হাশরের মাঠে সবার দৃষ্টি থেকে তার গোনাহ গোপন রাখবেন। [দেখুন- বুখারীঃ ৬০৭০, মুসলিমঃ ২৭৬৮, মুসনাদে আহমাদঃ ২/৭৪]
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সেখানেও অস্বীকার করে বলবে যে, আমি এ কাজ করিনি; পরিদর্শক ফিরিশতারা ভুল করে এটা আমার আমলনামায় লিখে দিয়েছে, তখন তার মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে এবং হস্তপদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। তখন তারা বলবে এবং সাক্ষ্য দেবে। [দেখুন- মুসলিমঃ ২৯৬৮, ২৯৬৯]
যে উদ্ধত অপরাধীরা তাদের অপরাধ মেনে নিতে অস্বীকার করবে, সাক্ষীদেরকে মিথ্যা বলবে এবং আমলনামার নির্ভুলতাও মেনে নেবে না, তাদের ব্যাপারে এ ফায়সালা দেয়া হবে৷ তখন আল্লাহ হুকুম দেবেন, ঠিক আছে তোমাদের বাজে কথা বন্ধ করো এবং এখন দেখো তোমাদের নিজেদের শরীরের অংগ-প্রতংগ তোমাদের কৃতকর্মের কি বর্ণনা দেয়৷ এ প্রসংগে এখানে কেবলমাত্র হাত ও পায়ের সাক্ষদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ কিন্তু অন্যান্য স্থানে বলা হয়েছে তাদের চোখ, কান জিহ্বা এবং শরীরের চর্মও তাদেরকে দিয়ে যেসব কাজ করানো হয়েছে সেগুলোর পূর্ণ বিবরণ শুনিয়ে দেবে।
কুরআন মজীদের নিম্ন বর্ণিত আয়াতগুলোও এ বিষয়ের উল্লেখ আছে- হা-মীম আস সাজদাহ ২০ থেকে ২২ আয়াত ইয়াসিন আয়াত নং ৬৫।
এখানে দ্বীন দ্বারা হিসাব বুঝানো হয়েছে। ঐ সময় মানুষ জানতে পারবে যে, আল্লাহর ওয়াদা অঙ্গীকার ও ভীতি-প্রদর্শন সবই সত্য। হিসাব গ্রহণে তিনি ন্যায়বান এবং যুলুম হতে তিনি বহুদূরে। হিসাব গ্রহণের ব্যাপারে তিনি বান্দার উপর তিল পরিমাণও যুলুম করবেন না।
এ আয়াতে একটি নীতিগত কথা বুঝানো হয়েছে৷ সেটি হচ্ছেঃ দুশ্চরিত্ররা দুশ্চরিত্রদের সাথেই জুটি বাঁধে এবং সচ্চরিত্র ও পাক-পবিত্র লোকেরা স্বাভাবিকভাবেই সচ্চরিত্র ও পাক-পবিত্র লোকদের সাথেই মানানসই৷ একজন দুষ্কৃতকারী শুধু একটিমাত্র দুষ্কৃতি করে না৷ সে আর সব দিক দিয়ে একদম ভালো এবং শুধুমাত্র একটি দুষ্কর্মে লিপ্ত-ব্যাপারটা মোটেই এ রকম নয়৷ তার চলাফেরা, আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র সবকিছুর মধ্যে নানান অসৎপ্রবণতা লুকিয়ে থাকে এগুলো তার একটি বড় অসৎপবণতা কোন অদৃশ্য গোলার মতো বিষ্ফোরিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে, অথচ এর কোন আলামত ইতিপূর্বে তার চালচলন ও আচার-আচরণে দেখা যায়নি, এটা কোনক্রমেই সম্ভব হতে পারে না৷ মানব জীবনে প্রতিনিয়ত এ মনস্তাত্বিক সত্যটির প্রদর্শনী হচ্ছে৷ একজন পাক-পবিত্র মানুষ, যার সমগ্র জীবন সবার সামনে সুষ্পষ্ট, সে একটি ব্যভিচারী নারীর সাথে ঘর সংসার করে এবং বছরের পর বছর তাদের মধ্যে গভীর প্রেম ও প্রীতি পূর্ণ সম্পর্ক থাকে, একথা কিভাবে বোধগম্য হয়? একথা কি চিন্তা করা যেতে পারে যে, কোন নারী এমনও হতে পারে যে ব্যভিচারিনী হবে এবং তারপর তার চলন-বলন, অংগভংগী, আচার-ব্যবহার কোন জিনিস থেকেও তার এসব অসৎবৃত্তির কোন লক্ষণই ফুটে উঠবে না? অথবা কোন ব্যক্তি পবিত্র হৃদয়বৃত্তর অধিকারী ও উন্নত চরিত্রবানও হবে আবার সে এমন নারীর প্রতি সন্তুষ্ট্ থাকবে যার মধ্যে এসব লক্ষণ দেখা যাবে? একথা এখানে বুঝাবার কারণ হচ্ছে এই যে, ভবিষ্যতে যদি কারোর প্রতি এ অপবাদ দেযা হয়, তাহলে লোকেরা যেন অন্ধের মতো তা শুনেই বিশ্বাস করে না নেয়, বরং তারা যেন চোখ খুলে দেখে নেয় কার বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া হচ্ছে, কি অপবাদ দেয়া হচ্ছে এবং তা কোনভাবে সেখানে খাপ খায় কি না? কথা যদি জুতসই হয়, তাহলে মানুষ এক পর্যায় পর্যন্ত তা বিশ্বাস করতে পারে অথবা কমপক্ষে সম্ভব মনে করতে পারে৷ কিন্তু উদ্ভট ও অপরিচিত কথা, যার সত্যতার স্বপক্ষে একটি চিহ্নও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না, তা শুধুমাত্র কোন নির্বোধ বা দুর্জনের মুখ দিয়ে বেরিয়েছে বলেই তাকে কেমন করে মেনে নেয়া যায়?
কোন কোন মুফাস্সির এ আয়াতের এ অর্থও করেছেন যে, খারাপ কথা খারাপ লোকদের জন্য (অর্থাৎ তারা এর হকদার) এবং ভালো কথা ভালো লোকদের জন্য, আর ভালো লোকদের সম্পর্কে দুর্মুখেরা যেসব কথা বলে তা তাদের প্রতি প্রযুক্ত হওয়া থেকে তারা মুক্ত ও পবিত্র৷ অন্য কিছু লোক এর অর্থ করেছেন এভাবে, খারাপ কাজ খারাপ লোকদের পক্ষেই সাজে এবং ভালো কাজ ভালো লোকদের জন্যই শোভনীয়, ভালো লোকেরা খারাপ কাজের অপবাদ বহন থেকে পবিত্র৷ ভিন্ন কিছু লোক এর অর্থ নিয়েছেন এভাবে, খারাপ কথা খারাপ লোকদেরই বলার মতো এবং ভালো লোকেরা ভালো কথা বলে থাকে, অপবাদদাতারা যে ধরনের কথা বলছে ভালো লোকেরা তেমনি ধরনের কথা বলা থেকে পবিত্র৷ এসবগুলো ব্যাখ্যার অবকাশ আয়াতের শব্দাবলী মধ্যে আছে৷ কিন্তু এ শব্দগুলো পড়ে প্রথমেই যে অর্থাৎ মনের মধ্যে বাসা বাঁধে তা হচ্ছে যা আমি প্রথমে বর্ণনা করে এসেছি এবং পরিবেশ পরিস্থিতির দিক দিয়েও তার মধ্যে যে তাৎপর্য রয়েছে, অন্য অর্থগুলোর মধ্যে তা নেই৷
ফুটনোট
* প্রিয়নবী ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পুরুষদেরকে সূরা মায়েদা শেখাও; আর তোমাদের স্ত্রী লোকদেরকে সূরা নূর শেখাও।
* যারা ঈমানদার নারীদের উপর অপবাদ আরোপ করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ায় ও আখেরাতে শাস্তি।
* কোন মানুষের ভুল আমাদের ক্ষমা করে দেওয়া উচিত তাহলে আল্লাহও আমাদের ক্ষমা করে দিবেন।
* কিয়ামতের দিন মানুষের জিহ্বা, হাত ও পা কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিবে।
* আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার এমন কতিপয় বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো অন্য কোন মহিলার ভাগ্যে জোটেনি। তিনি নিজেও আল্লাহর নেয়ামত প্ৰকাশার্থে এসব বিষয় গর্বভরে বর্ণনা করতেন। আট টি বৈশিষ্ট্য এ নোটের ২৩ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করা আছে।
* এ সূরার সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনা ইফকের ঘটনা নামে পরিচিত এবং এ সূরা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার পবিত্রতা বর্ণনা রয়েছে।