কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা ২০২২
প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ ১৮
পূর্ববর্তী আয়াতের সাথে সম্পর্ক : পূর্ববর্তী আয়াতে হযরত ঈসা (আ.)-এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আর এ আয়াতে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। তিনি আল্লাহ তা’আলার প্রতি কত সুদৃঢ় ঈমানের অধিকারী ছিলেন আর কিভাবে তিনি তার পিতাকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছেন, আর কিভাবে শিরক ও মূর্তিপূজার বাতুলতা প্রকাশ করেছেন। তাওহীদের দাওয়াতের সময় কিভাবে পিতার প্রতি সম্মান বজায় রেখেছেন এবং করেছেন আর আল্লাহ তা“আলা তার মরতবা বুলন্দ করেছেন, তাকে নেককার সন্তান-সন্ততি দান করেছেন, এসব কিছুর বিবরণই শুরু হয়েছে আলোচ্য আয়াত থেকে ।
আল্লামা সৃযৃতী (র.) লিখেছেন, হযরত ইবরাহীম (আ.) ১৭৫ বছর জীবিত ছিলেন। উল্লেখ্য যে, হযরত আদম (আ.)-এর দুহাজার বছর পর এবং হযরত নৃহ (আ.)-এর এক হাজার বছর পর হযর্ত ইবরাহীম (আ.) আগমন করেন। এতদ্যতীত এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, হযরত মারইয়াম (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর ঘটনায় সেসব বিভ্রান্ত লোকদের ভ্রান্ত ধারণা নিরসন করা হয়েছে যারা কোনো জীবিত, জ্ঞানবান ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলার সাথে শরিক মনে করতো, আর হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর এ ঘটনায় সেই মুশরিকদের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করা হয়েছে যারা প্রাণহীন মূর্তির পূজাকরতো এবং সেই মূর্তিগুলোকে আল্লাহ তা’আলার সাথে শরিক করতো । কিয়ামতের দিন তারা সর্বাধিক আক্ষেপ করবে। [তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন]
ইমাম রাষী (র.) পূর্ববর্তী আয়াতের সাথে সম্পর্ক এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, এই সূরায় মূলত তিনটি বিষয়ের বর্ণনা স্থান
পেয়েছে। ১. তাওহীদ ২. নবুয়ত এবং ৩. হাশর। যারা তাওহীদকে অস্বীকার করে তারা দু’ভাবে বিভক্ত । একদল যারা আল্লাহতা’আলা ব্যতীত অন্য কোনো জীবিত বুদ্ধিমান মানুষকে মাবুদ বা উপাস্য মনে করে যেমন খ্রিস্টানরা । আর দ্বিতীয় দল হলো যারা আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত প্রাণহীন কোনো কিছুকে উপাস্য মনে করে। যেমন- যারা মূর্তিপূজা করে।
হযরত ঈসা (আ.) এবং হযরত মারইয়াম (আ.)-এর ঘটনায় মুশরিকদের প্রথম দলের উল্লেখ রয়েছে। আর হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ঘটনায় মুশরিকদের দ্বিতীয় দলের বিবরণ স্থান পেয়েছে।
এখানে উল্লিখিত ঘটনাটি আলোচ্য সূরার তৃতীয় ঘটনা। ইতিপূর্বে হযরত জাকারিয়া (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তাই আলোচ্য আয়াত শুরু করা হয়েছে এভাবে– অর্থাৎ হে রাসূল! যেভাবে হযরত জাকারিয়া (আ.) এবং হযরত ঈসা (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন সেভাবে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করুন। -[তাফসীরে কাবীর]
এখান থেকে মক্কাবাসীদেরকে সম্বোধন করে কথা বলা হচ্ছে। তারা তাদেরকে যুবক পুত্র, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদেরকে ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের অপরাধে গৃহত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল যেমন ইবরাহীমকে তার বাপ-ভাইয়েরা দেশ থেকে বের করে দিয়েছিল। কুরাইশ বংশের লোকেরা ইবরাহীমকে নিজেদের নেতা বলে মানতো এবং তাঁর আওলাদ হবার কারণে সারা আরবে গর্ব করে বেড়াতো, একারণে অন্য নবীদের কথা বাদ দিয়ে বিশেষ করে ইবরাহীমের কথা বলার জন্য এখানে নির্বাচিত করা হয়েছে।
صديق “সিদ্দীক” শব্দটি কুরআনের একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ সত্যবাদী বা সত্যনিষ্ঠ। শব্দটির সংজ্ঞা সম্পর্কে আলেমদের উক্তি বিভিন্নরূপ। কেউ বলেনঃ যে ব্যক্তি সারা জীবনে কখনও মিথ্যা কথা বলেননি, তিনি সিদ্দীক। কেউ বলেনঃ যে ব্যক্তি বিশ্বাস এবং কথা ও কর্মে সত্যবাদী, অর্থাৎ অন্তরে যেরূপ বিশ্বাস পোষণ করে, মুখে ঠিক তদ্রুপ প্রকাশ করে এবং তার প্রত্যেক কর্ম ও উঠা বসা এই বিশ্বাসেরই প্রতীক হয়, সে সিদ্দীক।
সিদ্দীকের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। নবী-রাসূলগণ সবাই সিদ্দীক। কিন্তু সমস্ত সিদ্দীকই নবী ও রাসূল হবেন এমনটি জরুরী নয়, বরং নবী নয়- এমন ব্যক্তি যদি নবী ও রাসূলের অনুসরণ করে সিদ্দীকের স্তর অর্জন করতে পারেন, তবে তিনিও সিদ্দীক বলে অভিহিত হবেন। মারইয়ামকে আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনে স্বয়ং সিদ্দীকাহ নামে অভিহিত করেছেন। তিনি নবী নন। কোন নারী নবী হতে পারেন না।
বলা হচ্ছে, “শয়তানের ইবাদাত করবেন না” যদিও ইবরাহীমের পিতা এবং তার জাতির অন্যান্য লোকেরা মূর্তি পূজা করতো কিন্তু যেহেতু তারা শয়তানের আনুগত্য করছিল তাই ইবরাহীম তাদের এ শয়তানের আনুগত্যকেও শয়তানের ইবাদাত গণ্য করেন। আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, আপনি এ মূর্তিগুলোর ইবাদত করার মাধ্যমে তার আনুগত্য করবেন না। কেননা, সেই তো এগুলোর ইবাদতের প্রতি মানুষদেরকে আহবান জানায় এবং এতে সে সন্তুষ্ট। বস্তুত: শয়তান কোন কালেও মানুষের মাবুদ (প্রচলিত অর্থে) ছিল না। বরং তার নামে প্রতি যুগে মানুষ অভিশাপ বর্ষণ করেছে। তবে বর্তমানে মিশর, ইরাক, সিরিয়া, লেবাননাসহ বিভিন্ন আরব ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রে শয়তানের ইবাদতকারী ‘ইয়াযীদিয়্যাহ’ ফের্কা নামে একটি দলের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা শয়তানের কাল্পনিক প্রতিকৃতি স্থাপন করে তার ইবাদাত করে।
যদি তোমার মৃত্যু এসে যায়, তাহলে আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। অথবা পৃথিবীতেই তোমার উপর আল্লাহর আযাব এসে পতিত হবে এবং শয়তানের সঙ্গী হয়ে চিরদিনের মত আল্লাহর রহমত হতে বিতাড়িত হয়ে যাবে। ইবরাহীম (আঃ) নিজ পিতার সম্মান-সম্ভ্রম সম্পূর্ণ খেয়াল রেখে অত্যদিক নম্রতা ও শ্রদ্ধার সাথে তাওহীদের (এক আল্লাহর ইবাদতের) নসীহত শোনালেন। কিন্তু তাওহীদের এই সবক (পাঠ) যতই নরম ভাষা ও মধুর ভঙ্গিমায় বলা হোক না কেন, মুশরিকদের কাছে তা অসহনীয়ই হবে। অতএব মূর্তিপূজক পিতা এই নম্রতা ও ভালবাসা-মাখা সম্বোধনের জবাবে অত্যন্ত কটু ও কঠোর বাক্য দ্বারা একেশ্বরবাদী পুত্রকে বলল, ‘যদি তুমি আমার দেবদেবী থেকে বিমুখ হওয়া হতে ফিরে না এসো, তাহলে আমি তোমাকে পাথরের আঘাতে শেষ করে ফেলব।’
যদি তোমার মৃত্যু এসে যায়, তাহলে আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। অথবা পৃথিবীতেই তোমার উপর আল্লাহর আযাব এসে পতিত হবে এবং শয়তানের সঙ্গী হয়ে চিরদিনের মত আল্লাহর রহমত হতে বিতাড়িত হয়ে যাবে। ইবরাহীম (আঃ) নিজ পিতার সম্মান-সম্ভ্রম সম্পূর্ণ খেয়াল রেখে অত্যদিক নম্রতা ও শ্রদ্ধার সাথে তাওহীদের (এক আল্লাহর ইবাদতের) নসীহত শোনালেন। কিন্তু তাওহীদের এই সবক (পাঠ) যতই নরম ভাষা ও মধুর ভঙ্গিমায় বলা হোক না কেন, মুশরিকদের কাছে তা অসহনীয়ই হবে। অতএব মূর্তিপূজক পিতা এই নম্রতা ও ভালবাসা-মাখা সম্বোধনের জবাবে অত্যন্ত কটু ও কঠোর বাক্য দ্বারা একেশ্বরবাদী পুত্রকে বলল, ‘যদি তুমি আমার দেবদেবী থেকে বিমুখ হওয়া হতে ফিরে না এসো, তাহলে আমি তোমাকে পাথরের আঘাতে শেষ করে ফেলব।’
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম أَبَتِ বলে মিষ্ট ভাষায় পিতাকে সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু আযর তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করার হুমকি এবং বাড়ী থেকে বের হয়ে যাওয়ার আদেশ জারি করে দিল। তখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেনঃ سَلَامٌ عَلَيْكَ এখানে سلام শব্দটি অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, বয়কটের সালাম অর্থাৎ কারও সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ভদ্রজন্যোচিত পন্থা হচ্ছে কথার উত্তর না দিয়ে সালাম বলে পৃথক হয়ে যাওয়া। পবিত্র কুরআন আল্লাহর প্রিয় ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের প্রশংসায় বলেঃ “মূর্খরা যখন তাদের সাথে মূর্খীসুলভ তর্কবিতর্কে প্রবৃত্ত হয়, তখন তারা তাদের মোকাবেলা করার পরিবর্তে সালাম শব্দ বলে দেন।” [সূরা আল-ফুরকান: ৬৩] অথবা এর উদ্দেশ্য এই যে, বিরুদ্ধাচরণ সত্বেও আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না।
কোন কাফেরের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা শরীআতের আইনে নিষিদ্ধ ও নাজায়েয। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাচা আবু তালেবকে বলেছিলেনঃ “আল্লাহর কসম, আমি আপনার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকব, যে পর্যন্ত না আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে নিষেধ করে দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হয়: “নবী ও ঈমানদারদের পক্ষে মুশরেকদের জন্যে ইস্তেগফার করা বৈধ নয়।” [সূরা আত-তাওবাহঃ ১১৩] এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচার জন্যে ইস্তেগফার ত্যাগ করেন।
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কর্তৃক তার পিতার জন্য ক্ষমা চাওয়ার উত্তর এই যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওয়াদা “আপনার জন্যে আমার প্রভুর কাছে ইস্তেগফার করব।” এটা নিষেধাজ্ঞার পূর্বেকার ঘটনা। নিষেধ পরে করা হয়। তারপর তিনি তার পিতার জন্য সুপারিশ করা পরিত্যাগ করেছিলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “ইবরাহীম তার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল, তাকে এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে; তারপর যখন এটা তার কাছে সুস্পষ্ট হল যে, সে আল্লাহর শত্রু তখন ইবরাহীম তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। ইবরাহীম তো কোমল হৃদয় ও সহনশীল।” [সূরা আত-তাওবাহঃ ১১৪]
তারপরও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হাশরের মাঠে যখন তার পিতাকে কুৎসিত অবস্থায় দেখবেন তখন তার জন্য কোন দোআ বা সুপারিশ করবেন না। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “হাশরের মাঠে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার পিতাকে দেখে বলবেন, হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে আজকের দিনে অপমান থেকে রক্ষা করার ওয়াদা করেছেন। আমার পিতার অপমানের চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে? আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ “আমি কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম করেছি।” তারপর আল্লাহ তা’আলা তখন তাকে তার পায়ের নীচে তাকাবার নির্দেশ দিবেন। তিনি তাকিয়ে একটি মৃত দুৰ্গন্ধযুক্ত পঁচা জানোয়ার দেখতে পাবেন, ফলে তিনি তার জন্য সুপারিশ না করেই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। [বুখারীঃ ৩১৭২, ৪৪৯০, ৪৪৯১]
পূৰ্ববতী বাক্যে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর উক্তি বর্ণিত হয়েছে যে, আমি আশা করি, আমার পালনকতার কাছে দোআ করে আমি বঞ্চিত ও বিফল মনোরথ হব না। বাহ্যতঃ এখানে গৃহ ও পরিবারবর্গ ত্যাগ করার পর নিঃসঙ্গতার আতঙ্ক ইত্যাদি থেকে আত্মরক্ষার দোআ বোঝানো হয়েছিল। আলোচ্য বাক্যে এই দোআ কবুল করার কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর জন্য নিজ গৃহ, পরিবারবর্গ ও তাদের দেব-দেবীকে পরিহার করলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা। তাকে পুত্র ইসহাক দান করলেন। এই পুত্র যে দীর্ঘায়ু ও সন্তানের পিতা হয়েছিলেন তাও ইয়াকুব (পৌত্র) শব্দ যোগ করে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। পুত্ৰ দান থেকে বোঝা যায় যে, ইতিপূর্বে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বিবাহ করেছিলেন। কাজেই আয়াতের সারমর্ম এই দাঁড়াল যে আল্লাহ তা’আলা তাকে পিতার পরিবারের চাইতে উত্তম একটি স্বতন্ত্র পরিবার দান করলেন, যা নবী ও সৎকর্মপরায়ণ মহাপুরুষদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল।
নবুঅত ছাড়া আরো অনেক অনুগ্রহ তাকে দান করেছিলাম। যেমন ধন-মাল, অতিরিক্ত সন্তান-সন্ততি, অতঃপর তারই বংশে বহু কাল পর্যন্ত নবুঅতের পরম্পরা বজায় রাখা; যা ছিল সব থেকে বড় অনুগ্রহ যা আমি তার উপর করেছি। আর সেই কারণে ইবরাহীম (আঃ)-কে ‘আবুল আম্বিয়া’ (নবীদের পিতা) বলা হয়ে থাকে।
لِسَان صِدق অর্থঃ সুনাম ও সুখ্যাতি। لسان (জিহ্বা)র সম্বন্ধ صِدق (সত্য) এর দিকে জুড়ার পর তার বিশেষণ ‘সমুচ্চ’ উল্লেখের মাধ্যমে এই কথার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মানুষের মুখে তাঁদের যে সুনাম ও সুখ্যাতি আছে, বাস্তবেই তাঁরা তার যোগ্য অধিকারী। সুতরাং আসমানী ধর্মসমূহের সকল অনুসারীগণ এমন কি মুশরিকরা পর্যন্ত ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর সন্তানদের কথা উত্তম শব্দ দ্বারা ও অত্যধিক আদব ও সম্মানের সাথে আলোচনা করে থাকে। এটি নবুঅত ও সন্তান দানের পর অন্য একটি অনুগ্রহ, যা আল্লাহর পথে হিজরত করার জন্য তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন।
ফুটনোট
* তাঁর পিতা কে ইয়া আবাতি (হে আমার পিতা) বলে সম্বোধন করেছেন। শব্দটি দয়া ও ভালোবাসার প্রতীক। প্রত্যেক বাক্যের শুরুতে তিনি এই বাক্য ব্যবহার করেছেন। ইব্রাহীম আঃ পিতার প্রতি এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করেন নি যাতে পিতার অবমানবনা অথবা তিনি মনে কষ্ট পান।
* প্রথমত ইব্রহীম আঃ পয়গাম্বরসুলভ হিকমতের সাথে দেবদেবীর অক্ষমতা ও অচেতনতা ফুটিয়ে তুলেছেন যাতে তাঁর পিতা নিজের ভুল বুঝতে পারেন। দ্বিতীয় বাক্য তিনি আল্লাহ্ প্রদত্ত নবুয়তের জ্ঞান গরিমা প্রকাশ করেছেন। তৃতীয় ও চতুর্থ বাক্যে কুফুর ও শিরকের সম্ভাব্য কুপরিণতি সম্পর্কে পিতাকে সতর্ক করেছেন।
* ঈব্রাহীম আঃ এর পিতা যখন ইব্রাহীম আঃ-কে প্রস্তরাঘাতে হত্যার হুমকি এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার আদেশ জারি করে দিল অথন তিনি উত্তরে বলেন- সালামুন আলাইকা
এখানে সালামের ২টা অর্থ হতে পারে-
১. বয়কটের সালাম ( কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ভদ্রজনোচিত পন্থ)
২. প্রচলিত সালাম ( আগেরকার যুগে কাফের, মুশরিক, মুসলমানদের মধ্যে সালামের রেওয়াজের বর্ণনা কিছু হাদীসে পাওয়া যায়। যদিও খ্রিস্টান ও ইহুদীদের সালাম দেওয়া নিষেধ রয়েছে। )
* কোনো কাফের জন্য আল্লাহ্র কাছে মাগফিরাত চাওয়া নিষিদ্ধ।
* ইব্রাহীম আঃ গৃহ ত্যাগ ও পরিবার ত্যাগের পর দোয়া করেছিলেন- আমি আমার রবকে ডাকছি; আশা করি, আমার রবকে ডেকে আমি দূর্ভাগা হব না।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ইব্রাহীম আঃ-কে নিজের পিতা বা পরিবারের বদলে স্বতত্র আরেক পরিবার দান করলেন। ইসহাক আঃ ও ইয়াকুব আঃ কে। এবং এই পরিবারের অনেকে নবী বানালেন।
* ৫০ নং আয়াতে আরো বলা হয়েছে- এই তিনজন, ইব্রাহীম আঃ, ইয়াকুব আঃ, ইসহাক আঃ কে দান করা হয়েছে অনুগ্রাহ (সন্তান ও সম্পদ) এবং তাদের নাম যশ সমুচ্চ করা হয়েছে।