Notes 24 Sura Kahf 32 to 49

কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা ২০২২

প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ ২৪

সূরা কাহাফ (৩২-৪৯)

এই সূরার প্রারন্তে পবিত্র কুরআনের অবতরণকে আল্লাহ তা’আলার নিয়ামত বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এরপর এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর আসহাবে কাহাফের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যারা এই ক্ষণতঙ্গুর জগত ও জীবনের যাবতীয় আনন্দ উল্লাসকে তুচ্ছ মনে করে সুদৃঢ়ভাবে ঈমানের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে তারা অবশেষে সফলকাম হয়, আর অহংকারী জালেম দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় গ্রহণ করে।

আসহাবে কাহাফের ঘটনার পর এখন আলোচ্য আয়াতে পুনরায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে কাফেরদের অনেক প্রশ্নের জবাবও রয়েছে এবং প্রিয়নবী -এর নবুয়তের দলিল প্রমাণ বর্ণিত হয়েছে। এরপর আসহাবে কাহাফের ন্যায় যে সাহাবায়ে কেরাম দুনিয়ার আনন্দ উল্লাস বর্জন করে এক আল্লাহ তা’আলার বন্দেগীতে মশগুল রয়েছেন, তাদের গুরতত্ব উপলব্ধি করার তাগিদ রয়েছে, যেমন হযরত আম্মার (রা.), হযরত বেলাল (রা.) এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম যারা ধৈর্য ও সংকল্পের দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে দীন ইসলামের প্রচার প্রসারে আত্মনিয়োগ করেছেন, তাদের প্রতি সুনজর রাখার তাগিদ হয়েছে। আর যারা নিজেদের অর্থ-সম্পদের জন্য গর্ব করে তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করার নির্দেশ রয়েছে।

 

এ উদারহরণটির প্রাসংগিক সম্পর্ক বুঝার জন্য পেছনের রুকূ ‘র বিশেষ আয়াতটি সামনে থাকা দরকার যাতে মক্কার অহংকারী সরদারদের কথার জবাব দেয়া হয়েছিল ৷ সরদাররা বলেছিল, আমরা গরীব মুসলমানদের সাথে বসতে পারি না, তাদেরকে সরিয়ে দিলে আমরা তোমার কাছে গিয়ে বসে তুমি কি বলতে চাও তা শুনতে পারি৷ সূরা আল কালামের ১৭ থেকে ৩৩ আয়াতে যে উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে তাও এখানে নজরে রাখা উচিত৷ তাছাড়া সূরা মারয়ামের ৭৩ -৭৪ আয়াত, আল ম’মিনুনের ৫৫ থেকে ৬১ আয়াত, সাবার ৩৪ – ৩৬ আয়াত এবং হা -মীম সাজাদার ৪৯ – ৫০ আয়াতের ওপরও একবার নজর বুলিয়ে নেয়া দরকার৷

ثمر শব্দের অর্থ বৃক্ষের ফল এবং সাধারণ ধন-সম্পদ। এখানে ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ ও কাতাদাহ থেকে দ্বিতীয় অৰ্থ বর্ণিত হয়েছে। কামুস গ্রন্থে আছে ثمر একটি বৃক্ষের ফল এবং নানা রকমের ধন-সম্পদের অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ থেকে জানা যায় যে, লোকটির কাছে শুধু ফলের বাগান ও শস্যক্ষেত্রই ছিল না, বরং স্বর্ণ-রৌপ্য ও বিলাস-ব্যসনের যাবতীয় সাজ-সরঞ্জামও বিদ্যমান ছিল।

যে বাগানগুলোকে সে নিজের জান্নাত মনে করছিল। সে মনে করেছিল এগুলো স্থায়ী সম্পদ। অর্বাচীন লোকেরা দুনিয়ায় কিছু ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শান-শওকতের অধিকারী হলেই সর্বদা এ বিভ্রান্তির শিকার হয় যে, তারা দুনিয়াতেই জান্নাত পেয়ে গেছে। এখন আর এমন কোন জান্নাত আছে যা অর্জন করার জন্য তাকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে? এভাবে সে ফল-ফলাদি, ক্ষেত-খামার, গাছ-গাছালি, নদী-নালা, ইত্যাদি দেখে ধোঁকাগ্ৰস্ত হবে এবং মনে করবে এগুলো কখনো ধ্বংস হবে না। ফলে সে দুনিয়ার মোহে পড়ে থাকবে এবং আখেরাত অস্বীকার করে বসবে।

যদি আখেরাত থেকেই থাকে তাহলে আমি সেখানে এখানকার চেয়েও বেশী সচ্ছল থাকবো। কারণ এখানে আমার সচ্ছল ও ধনাঢ্য হওয়া এ কথাই প্ৰমাণ করে যে, আমি আল্লাহর প্ৰিয়। অন্য আয়াতেও ধনবান কাফেরদের এধরনের কথা এসেছে, যেমন, “আর আমি যদি আমার রবের কাছে ফিরেও যাই তাঁর কাছে নিশ্চয় আমার জন্য কল্যাণই থাকবে।” [সূরা ফুসসিলাত: ৫০]

যে ব্যক্তি মনে করলো, আমিই সব, আমার ধন-সম্পদ ও শান শওকত কারোর দান নয় বরং আমার শক্তি ও যোগ্যতার ফল এবং আমার সম্পদের ক্ষয় নেই, আমার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেওয়ার কেউ নেই এবং কারোর কাছে আমাকে হিসেব দিতেও হবে না, সে আল্লাহকে মূলত: অস্বীকারই করল। যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন তাকে সে অস্বীকার করল। শুধু তাকে নয়, তিনি প্রথম মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তিনি হচ্ছেন আদম। তারপর নিকৃষ্ট পানি হতে তাদের বংশধারা বজায় রেখেছেন। অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা বলেছেন, “তোমরা কিভাবে আল্লাহর সাথে কুফরী করছ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে জীবিত করেছেন।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৮]

“আল্লাহ যা চান তাই হবে। আমাদের যদি কোন কিছু চলতে পারে তাহলে তা চলতে পারে একমাত্র আল্লাহরই সুযোগ ও সাহায্য -সহযোগিতা দানের মাধ্যমেই। এ আয়াত থেকে সালফে সালেহীনের কেউ কেউ বলেনঃ কোন পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি (مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ) বলে দেয়া হয়, তবে কোন বস্তু তার ক্ষতি করে না। অর্থাৎ পছন্দনীয় বস্তুটি নিরাপদ থাকে বা তাতে চোখ লাগার মত ক্ষতি হয় না। সহীহ হাদীসেও এ আয়াতের মত একটি হাদীস এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেনঃ “আমি কি তোমাকে জান্নাতের একটি মূল্যবান সম্পদের সন্ধান দেব না? সেটা হলো: “লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” [বুখারী: ৬৩৮৪, মুসলিম: ২৭০৪] আবার কোন কোন বর্ণনায় বলা হয়েছে, জান্নাতের সে মূল্যবান সম্পদ হলো: “লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৩৫]

ইবনে আব্বাস এর অর্থ নিয়েছেন আযাব। অপর কারও মতে, অগ্নি। আবার কেউ কেউ অর্থ নিয়েছেন প্রস্তর বর্ষণ। কোন কোন মুফাসসিরের মতে এর অর্থ, এমন বৃষ্টিপাত যাতে গাছ-গাছড়া উপড়ে যায়, ফসলাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যে আল্লাহর হুকুমে তুমি এসব কিছু লাভ করেছে তাঁরই হুকুমে এসব কিছু তোমার কাছ থেকে ছিনিয়েও নেয়া যেতে পারে। তুমি যদি এখন প্রচুর পানি পাওয়ার কারণে ক্ষেত-খামার করার সুবিধা লাভ করে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে কাফের হয়ে যাচ্ছ, তবে মনে রেখো তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের এ পানি পুনরায় ভূগর্ভে প্রোথিত করে দিতে পারেন, তারপর তুমি কোন ভাবেই তা আনতে সক্ষম হবে না। কুরআনের অন্যত্রও এ কথা বলে মহান আল্লাহ তাঁর এ বিরাট নেয়ামত পানি নিঃশেষ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেনঃ “বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছি কি যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্রবাহমান পানি?” [সূরা আল-মুলক: ৩০]

 

এটা হল ধ্বংস ও বিনাশেরই আভাস। অর্থাৎ, তার পুরো বাগানটাই ধ্বংস করে দেওয়া হল। বাগান প্রস্তুত ও সংস্কারের কাজে এবং চাষাবাদে যে অর্থ ব্যয় সে করেছিল, তার জন্য আক্ষেপের হাত কচলাতে লাগল। হাত কচলানোর অর্থ, অনুতপ্ত হওয়া।

যে মাচান ও ছাদ-ছপ্পরের উপর আঙ্গুরের লতা রাখা ছিল, সেগুলো সব যমীনে পড়ে গেল এবং আঙ্গুরের সমস্ত ফসল ধ্বংস হয়ে গেল। এখন সে অনুভব করতে পেরেছে যে, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশী স্থাপন করা, তাঁর যাবতীয় নিয়ামত দ্বারা প্রতিপালিত ও উপকৃত হয়ে তাঁর বিধি-বিধানকে অস্বীকার করা ও তাঁর অবাধ্যতা করা কোনভাবেই কোন মানুষের জন্য উচিত নয়। তবে এখন আক্ষেপ ও অনুতাপ কোন ফল দেবে না। ধ্বংসের পর আফসোস করলে আর কি হবে?

আয়াতটির অর্থ নির্ধারণে দু’টি প্রসিদ্ধ মত এসেছে:

এক, আয়াতে উল্লেখিত هنالك শব্দটির অর্থ আগের বাক্যের সাথে করা হবে। আর الولاية থেকে নতুনভাবে অর্থ করা হবে। সে মতে পূর্বের আয়াতের অর্থ হবেঃ যেখানে আল্লাহর আযাব নাযিল হয়েছে সেখানে আল্লাহ ছাড়া তাকে সাহায্য করার কোন লোকজন ছিল না এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হলো না। দুই, আর যদি هنالك শব্দটিকে এ আয়াতের পরবর্তী বাক্য الولاية এর সাথে মিলিয়ে অর্থ করা হয় তখন আয়াতের দু’ধরনের অর্থ হয়।

যদি الولاية শব্দটির واو এর উপর فتحة দিয়ে পড়া হয় তখন শব্দটির অর্থ হয়, অভিভাবকত্ব, বন্ধুত্ব। আর আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়: যখন আযাব নাযিল হয় তখন কাফের বা মুমিন সবাই অভিভাবক ও বন্ধু হিসেবে একমাত্র আল্লাহর দিকেই ফিরবে, তাঁর আনুগত্য মেনে নিবে। এর বাইরে কোন কিছু চিন্তাও করবে না। যেমন কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, “তারপর তারা যখন আমার শাস্তি দেখতে পেল। তখন বলল, আমরা এক আল্লাহতেই ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম। [সূরা গাফের: ৮৪]

অনুরূপভাবে ফিরআউনের মুখ থেকেও বিপদকালে এ কথাই বের হয়েছিল, মহান আল্লাহ বলেনঃ “পরিশেষে যখন সে নিমজ্জামান হল তখন বলল, “আমি বিশ্বাস করলাম বনী ইসরাঈল যার উপর বিশ্বাস করে। নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আত্মসমৰ্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। ‘এখন! ইতিপূর্বে তো তুমি অমান্য করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে?” [সূরা ইউনুসঃ ৯০–৯১]

আর যদি الولاية শব্দটির واو এর নীচে كسرة দিয়ে পড়া হয়। যেমনটি কোন কোন قراءة তে আছে, তখন শব্দটির অর্থ হয় ক্ষমতা, নির্দেশ ও আইন। আর আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়: যখন আযাব নাযিল হবে তখন একমাত্র মহান আল্লাহর ক্ষমতা, আইন ও নির্দেশই কার্যকর হবে। অন্য কারো কোন কথা চলবে না। তিনি তাদের ধ্বংস করেই ছাড়বেন। [ইবন কাসীর]

‘যিনি সত্য’ আয়াতের দুটি অর্থ করা যায়। এক, তখন একমাত্র হক্ক ও সত্য ইলাহ আল্লাহ তা’আলারই কর্তৃত্ব। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে, “তারপর তাদের হক্ক ও সত্য প্রতিপালক আল্লাহর দিকে তারা ফিরে আসে। দেখুন, কর্তৃত্ব তো তাঁরই এবং হিসেব গ্রহনে তিনিই সবচেয়ে তৎপর।” [সূরা আল-আন’আম: ৬২] দুই, তখন একমাত্র হক্ক ও সত্য কর্তৃত্ব ও অভিভাবকত্ব আল্লাহরই। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে, “সে দিন সত্য ও হক্ক কর্তৃত্ব ও অভিভাকত্ত্ব হবে কেবলমাত্র দয়াময়ের এবং কাফিরদের জন্য সে দিন হবে কঠিন।” [সূরা আল-ফুরকান: ২৬]

 

কুরআনের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহ দুনিয়ার জীবনকে আকাশ থেকে নাযিল হওয়া পানির সাথে তুলনা করেছেন। দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্বের উদাহরণ হলো আকাশ থেকে বৰ্ষিত পানির মত। যা প্রথমে যমীনে পতিত হওয়ার সাথে সাথে যমীনে অবস্থিত উদ্ভিদরাজিতে প্ৰাণের উন্মেষ ঘটে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সে পানি পুরিয়ে গেলে, পানির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে আবার সে প্রাণের নিঃশেষ ঘটে। দুনিয়ার জীবনও ঠিক তদ্রুপ; এখানে আসার পর জীবনের বিভিন্ন অংশের প্রাচুর্যে মানুষ মোহান্ধ হয়ে আখেরাতকে ভুলে বসে থাকে। কিন্তু অচিরেই তার জীবনের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে সে আবার হতাশ হয়ে পড়ে।

এ কথাটি মহান আল্লাহ কুরআনের অন্যত্র এভাবে বলেছেনঃ “বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এরূপ, যেমন আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, যা থেকে মানুষ ও জীব-জন্তু খেয়ে থাকে। তারপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং তার অধিকারীগণ মনে করে ওটা তাদের আয়ত্তাধীন, তখন দিনে বা রাতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে ও আমি ওটা এমনভাবে নির্মূল করে দেই, যেন গতকালও ওটার অস্তিত্ব ছিল না। এভাবে আমি নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বর্ণনা করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।” [সূরা ইউনুস: ২৪]

আরো বলেছেনঃ “আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ্ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, তারপর তা ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত করেন এবং তা দ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তোমরা তা পীত বর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তিনি ওটাকে খড়-কুটায় পরিণত করেন? এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য।”[সূরা আয-যুমার: ২১] আরও বলেছেনঃ “তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা, জাঁকজমক, পারস্পরিক শ্লাঘা, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছু নয়। এর উপমা বৃষ্টি, যা দ্বারা উৎপন্ন শস্য-সম্ভার কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, তারপর সেগুলো শুকিয়ে যায়, ফলে আপনি ওগুলো পীতবর্ণ দেখতে পান, অবশেষে সেগুলো খড়-কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সস্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার সামগ্ৰী ছাড়া কিছু নয়।” [সূরা আল-হাদীদ: ২০]

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বলেছেনঃ “দুনিয়া হলো সুমিষ্ট সবুজ-শ্যামল মনোমুগ্ধকর। সুতরাং তোমরা দুনিয়া থেকে বেঁচে থাক আর মহিলাদের থেকে নিরাপদ থাক।” [মুসলিম: ২৭৪২]

 

স্থায়ী সৎকাজ বলতে কুরআনে বর্ণিত বা হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অনুমোদিত যাবতীয় নেককাজই বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরামের বিভিন্ন উক্তির মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়েছে। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর দাস হারেস বলেন, উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদিন বসলে আমরা তার সাথে বসে পড়লাম। ইতিমধ্যে মুয়াজ্জিন আসল। তিনি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। সে পানির পরিমাণ সম্ভবত এক মুদ (৮১৫.৩৯ গ্রাম মতান্তরে ৫৪৩ গ্রাম) পরিমান হবে। (দেখুন, মুজামু লুগাতিল ফুকাহা) তারপর উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সে পানি দ্বারা অজু করলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এ অজুর মত অজু করতে দেখেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ আমার অজুর মত অজু করে জোহরের সালাত আদায় করে তবে এ সালাত ও ভোরের মাঝের সময়ের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। তারপর যদি আসরের সালাত আদায় করে তবে সে সালাত ও জোহরের সালাতের মধ্যকার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।

এরপর যদি মাগরিবের সালাত আদায় করে তবে সে সালাত ও আসরের সালাতের মধ্যে কৃত গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। তারপর এশার সালাত আদায় করলে সে সালাত এবং মাগরিবের সালাতের মধ্যে হওয়া সমূদয় গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এরপর সে হয়ত: রাতটি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবে। তারপর যখন ঘুম থেকে জেগে অজু করে এবং সকালের সালাত আদায় করে তখন সে সালাত এবং এশার সালাতের মধ্যকার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর এগুলোই হলো এমন সৎকাজ যেগুলো অপরাধ মিটিয়ে দেয়। লোকেরা এ হাদীস শোনার পর বলল, হে উসমান এগুলো হলো “হাসানাহ” বা নেক-কাজ। কিন্তু “আল-বাকিয়াতুস সালেহাত” কোনগুলো? তখন তিনি বললেন, তা হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ এবং লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। [মুসনাদে আহমাদ: ১/৭১]

“আল-বাকিয়াতুস-সালেহাত” এর তাফসীরে এ পাঁচটি বাক্য অন্যান্য অনেক সাহাবা, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনদের থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তবে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “আল বাকিয়াতুস-সালেহাত” দ্বারা আল্লাহর যাবতীয় যিকর বা স্মরণকে বুঝানো হয়েছে। সে মতে তিনি ‘তাবারাকাল্লাহ’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’, ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত পাঠ, সাওম, সালাত, হজ্জ, সাদাকাহ, দাসমুক্তি, জিহাদ, আত্মীয়তার সম্পর্ক সংরক্ষণ সহ যাবতীয় সৎকাজকেই এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বলেছেনঃ এর দ্বারা ঐ সমূদয় কাজই উদ্দেশ্য হবে যা জান্নাতবাসীদের জন্য যতদিন সেখানে আসমান ও যমীনের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন বাকী থাকবে অর্থাৎ চিরস্থায়ী হবে; কারণ জান্নাতের আসমান ও যমীন স্থায়ী ও অপরিবর্তনশীল।

অর্থাৎ যখন যমীনের বাঁধন আলগা হয়ে যাবে এবং পাহাড় ঠিক এমনভাবে চলতে শুরু করবে। যেমন আকাশে মেঘেরা ছুটে চলে। কুরআনের অন্য এক জায়গায় এ অবস্থাটিকে এভাবে বলা হয়েছেঃ “আর আপনি পাহাড়গুলো দেখছেন এবং মনে করছেন এগুলো অত্যন্ত জমাটবদ্ধ হয়ে আছে কিন্তু এগুলো চলবে ঠিক যেমন মেঘেরা চলে।” [সূরা আন-নামলঃ ৮৮] আরো বলা হয়েছেঃ “যেদিন আকাশ আন্দোলিত হবে প্রবলভাবে এবং পর্বত চলবে দ্রুত; [সূরা আত-তূর: ৯–১০] আরো এসেছেঃ “আর পর্বতসমূহ হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মত।” [সূরা আল-কারি’আ:৫]

এর উপর কোন শ্যামলতা, বৃক্ষ তরুলতা এবং ঘরবাড়ি থাকবে না। সারাটা পৃথিবী হয়ে যাবে একটা ধুধু প্রান্তর। এ সূরার সূচনায় এ কথাটিই বলা হয়েছিল এভাবে যে, “এ পৃথিবী পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সেসবই আমি লোকদের পরীক্ষার জন্য একটি সাময়িক সাজসজ্জা হিসেবে তৈরী করেছি। এক সময় আসবে যখন এটি সম্পূর্ণ একটি পানি ও বৃক্ষ লতাহীন মরুপ্রান্তরে পরিণত হবে।”

সারিবদ্ধভাবে বলা দ্বারা এ অর্থ উদ্দেশ্য হতে পারে যে, সবাই এক কাতার হয়ে দাঁড়াবে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “সেদিন রূহ ও ফিরিশতাগণ এক কাতার হয়ে দাঁড়াবে; দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন। সে ছাড়া অন্যেরা কথা বলবে না এবং সে যথাৰ্থ বলবে।” [সূরা আন-নাবাঃ ৩৮] অথবা এর দ্বারা এটাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, তারা কাতারে কাতারে দাঁড়াবে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “এবং যখন আপনার প্রতিপালক উপস্থিত হবেন ও সারিবদ্ধভাবে ফিরিশতাগণও” [সূরা আল-ফাজার: ২২]

দুনিয়ার বুকে তারা যা যা করেছিল তা সবই লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। সে সব লিখিত গ্রন্থগুলো সেখানে তারা দেখতে পাবে। তাদের কারও আমলনামা ডান হাতে আবার কারও বাম হাতে দেয়া হবে। তারা সেখানে এটাও দেখবে যে, সেখানে ছোট-বড়, গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বহীন সবকিছুই লিখে রাখা হয়েছে। অন্যত্র মহান আল্লাহ তাদের আমলনামা সম্পর্কে বলেন, প্রত্যেক মানুষের কাজ আমি তার গ্রীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। “তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেবা-নিকেশের জন্য যথেষ্ঠ। [সুরা আল-ইসরা: ১৩]

অর্থাৎ হাশরবাসীরা তাদের কৃতকর্মকে উপস্থিত পাবে। অন্যান্য আয়াতে আরো স্পষ্ট ভাষায় তা বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে: “যে দিন প্রত্যেকে সে যা ভাল কাজ করেছে এবং সে যা মন্দ কাজ করেছে তা বিদ্যমান পাবে, সেদিন সে তার ও ওটার মধ্যে ব্যবধান কামনা করবে। আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করতেছেন। আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াদ্র।” [সূরা আলে-ইমরান: ৩০] আরও বলা হয়েছেঃ “সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে কী আগে পাঠিয়েছে ও কী পিছনে রেখে গেছে।” [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ১৩]

আরও বলা হয়েছেঃ “যে দিন গোপন ভেদসমূহ প্রকাশ করা হবে” [সূরা আত-ত্বরেক: ৯] মুফাসসিরগণ বিভিন্ন হাদীসের ভিত্তিতে এর অর্থ সাধারণভাবে এরূপ বর্ণনা করেন যে, এসব কৃতকর্মই প্রতিদান ও শাস্তির রূপ পরিগ্রহ করবে। তাদের আকার-আকৃতি সেখানে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। যেমন, কোন কোন হাদীসে আছে, যারা যাকাত দেয় না, তাদের মাল কবরে একটি বড় সাপের আকার ধারণ করে তাদেরকে দংশন করবে এবং বলবেঃ আমি তোমার সম্পদ ৷ [বুখারীঃ ১৩৩৮, তিরমিযীঃ ১১৯৫] সৎকর্ম সুশ্ৰী মানুষের আকারে কবরের নিঃসঙ্গ অবস্থায় আতঙ্ক দূর করার জন্য আগমন করবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২৮৭] মানুষের গোনাহ বোঝার আকারে প্রত্যেকের মাথায় চাপিয়ে দেয়া হবে। অনুরূপভাবে, কুরআন ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষনকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে- (إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا) [সূরা আন-নিসাঃ ১০]

অথবা, আয়াতের এ অর্থও করা যায় যে, তারা তাদের কৃতকর্মের বিবরণ সম্বলিত দপ্তর দেখতে পাবে, কোন কিছুই সে আমলনামা লিখায় বাদ পড়েনি। কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ এ আয়াত শুনিয়ে বলতেন: তোমরা যদি লক্ষ্য কর তবে দেখতে পাবে যে, লোকেরা ছোট-বড় সবকিছু গণনা হয়েছে বলবে কিন্তু কেউ এটা বলবে না যে, আমার উপর যুলুম করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা ছোট ছোট গুনাহর ব্যাপারে সাবধান হও; কেননা এগুলো একত্রিত হয়ে বিরাট আকার ধারণ করে ধ্বংস করে ছাড়বে। [তাবারী]

এক ব্যক্তি একটি অপরাধ করেনি। কিন্তু সেটি খামাখা তার নামে লিখে দেয়া হয়েছে, এমনটি কখনো হবে না। আবার কোন ব্যক্তিকে তার অপরাধের কারণে প্রাপ্য সাজার বেশী দেয়া হবে না এবং নিরপরাধ ব্যক্তিকে অযথা পাকড়াও করেও শাস্তি দেয়া হবে না। জাবের ইবন আব্দুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তা’আলা মানুষদেরকে অথবা বলেছেন বান্দাদেরকে নগ্ন, অখতনাকৃত এবং কপর্দকশূণ্য অবস্থায় একত্রিত করবেন। তারপর কাছের লোকেরা যেমন শুনবে দূরের লোকরাও তেমনি শুনতে পাবে এমনভাবে ডেকে বলবেনঃ আমিই বাদশাহ, আমিই বিচার-প্রতিদান প্রদানকারী, জান্নাতে প্রবেশকারী কারও উপর জাহান্নামের অধিবাসীদের কোন দাবী অনাদায়ী থাকতে পারবে না।

অনুরূপভাবে, জাহান্নামে প্রবেশকারী কারও উপর জান্নাতের অধিবাসীদের কারও দাবীও অনাদায়ী থাকতে পারবে না। এমনকি যদি তা একটি চপেটাঘাতও হয়। বর্ণনাকারী বললেনঃ কিভাবে তা সম্ভব হবে, অথচ আমরা তখন নগ্ন শরীর, অখতনাকৃত ও রিক্তহস্তে সেখানে আসব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নেককাজ ও বদকাজের মাধ্যমে সেটার প্রতিদান দেয়া হবে। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪৯৫] অন্য হাদীসে এসেছে, ‘শিংবিহীন প্রাণী সেদিন শিংওয়ালা প্রাণী থেকে তার উপর কৃত অন্যায়ের কেসাস নিবে।’ [মুসনাদে আহমাদ: ১/৪৯৪]

 

ফুটনোট

* এই গল্প থেকে একজন মুসলমানরা দুটি শিক্ষা নিতে পারে। প্রথম শিক্ষা হল, সমস্ত সম্পদও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। অতএব, তিনি যাকে দান করেন, তিনি আসলে তাদের পরীক্ষা করছেন যে তারা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে কি না। দ্বিতীয়ত, এই দুনিয়ার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী, অতএব যখন সেগুলি পাওয়া যায় তখন একজনকে অবশ্যই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং যাদের কাছে এই পার্থিব সুখগুলি উপলব্ধ নেই (গরীব) তাদের জন্য ব্যয় করতে হবে।

* মানুষের জীবনধারণের জন্য সম্পদের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কিন্তু অতিরিক্ত সম্পদ অনেক সময় আল্লাহর দ্বীন ও স্মরণ থেকে আমাদেরকে গাফেল করে ফেলতে পারে। সম্পদের লোভে অন্ধ মানুষের হাতে যখন সম্পদ এসে যায় তখন এই সম্পদ তাকে ইহকাল তো বটেই, পরকাল সম্পর্কেও গাফেল করে দিতে পারে।

* মানুষের পাপের ভার মানুষকেই বহন করতে হয়, হয় ইহকালে নয়তো পরকালে। পাপের কারণে একজন মানুষ অন্যের যে ক্ষতি করে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করে নিজের। একারণে পাপ মূলত নিজের উপরেই জুলুম।

* দুনিয়াবী ধন-সম্পদ ক্ষণস্থায়ী। স্থায়ী কেবল বান্দার আমল। আল্লাহ চাইলে নিমেষের মধ্যেই আমাদের সমস্ত ধন-সম্পদ কেড়ে নিতে পারেন। আলোচ্য ঘটনায় অহংকারী বন্ধুটি অহংকার করার কারণে আল্লাহ শাস্তিস্বরূপ তার স্বপ্নের বাগান ধংস করে দিয়েছিলেন।

* অহংকারী বন্ধুটি তার পার্থিব সম্পদকে অবিনশ্বর ভেবে শেষ পর্যন্ত পরকালকে অস্বীকার করার মাধ্যমে কুফরি করেছিলো। পরিণামে তার দ্বীনি বন্ধুটি তাকে প্রথমেই আল্লাহর অস্তিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো। সে চাইলে প্রথমে বোঝাতে পারতো কেন এই পার্থিব সম্পদ ধ্বংসশীল। কিন্তু তা না করে সে শুরুতেই আল্লাহর অস্তিত্বের কথা এবং মানুষ কত তুচ্ছ অবস্থা থেকে ধাপে ধাপে পরিপূর্ণ বয়সে উপনীত হয় (অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্যের কথা) স্মরণ করিয়ে দিলো।

 যদিও অহংকারী বন্ধুটি সরাসরি আল্লাহকে অস্বীকার করার কথা বলেনি বরং বিচার দিবসকে অস্বীকার করেছিলো, তথাপি দ্বীনি বন্ধুটির উপরোক্ত কথা থেকে বোঝা যায় বিচার দিবসকে অস্বীকার করা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার শামিল।

আল্লাহর অস্তিত্বের দাওয়াহ দেওয়ার পর সে আল্লাহর তাওহীদের দাওয়াহ দিলো।

 এভাবেই দ্বীনদার বন্ধুটি আল্লাহর তাওহীদের দাওয়াহ দেওয়ার পাশাপাশি শিরক থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করেছিলো। এছাড়াও আল্লাহর আযাবের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করতে হবে। এটাও দাওয়াহর অন্তর্ভুক্ত।

* প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হলো ঈমান ও সৎ আমল বজায় রাখার পাশাপাশি কিয়ামাতের দিন আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান আশা করা। আলোচ্য ঘটনার দ্বীনদার বন্ধুটি এর ব্যতিক্রম ছিলো না।

* পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি (مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ) বলা

* মহান আল্লাহ দুনিয়ার জীবনকে আকাশ থেকে নাযিল হওয়া পানির সাথে তুলনা করেছেন।

* মানুষের দ্বারা পাপ হতেই পারে। কিন্তু আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বোত্তম যে পাপ করে ফেলার পর দ্রুত অনুতপ্ত হয়, তাওবাহ করে এবং ভবিষ্যতে পাপ না করার দৃঢ় সংকল্প করে। তাওবাহর ফযীলত কুরআনের অসংখ্য আয়াত এবং অসংখ্য হাদীস থেকে প্রমাণিত। এই শিক্ষাটি আমরা দেখি সেই অহংকারী বন্ধুটির মাঝে যখন তার বাগান আল্লাহর আযাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো আর সে বলেছিলো-

“অতঃপর তার সব ফল ধ্বংস হয়ে গেলোএবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিলো, তার জন্য সকালে হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগলো। বাগনটি কাঠসহ পুড়ে গিয়েছিলো। সে বলতে লাগলো, হায়! আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম…” [সূরা কাহফ(১৮): ৪২]