কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা ২০২২
প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ ৩
সূরা ক্বদর
কুরআনের ৯৭ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সূরার আয়াত সংখ্যা ৫টি এবং রুকু সংখ্যা ১ টি। ক্বদর শব্দের অর্থ মাহাত্ম্য, সম্মান।
নামকরণ :
প্রথম আয়াতের ‘আল কদর’ ( الۡقَدۡرِ) শব্দটির এর নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
নাযিলের সময়–কাল
এর মক্কী বা মাদানী হবার ব্যাপারে দ্বিমত রয়ে গেছে। আবু হাইয়ান বাহরুল মুহীত গ্রন্থে দাবী করেছেন, অধিকাংশ আলেমের মতে এটা মাদানী সূরা । আলী ইবনে আহমাদুল ওয়াহেদী তাঁর তাফসীরে বলেছেন, এটি মদীনায় নাযিলকৃত প্রথম সূরা। অন্যদিকে আল মাওয়ারদী বলেন, অধিকাংশ আলেমের মতে এটি মক্কী সূরা । ইমাম সুয়ূতী ইতকান গ্রন্থে একথাই লিখেছেন। ইবনে মারদুইয়া ইবনে আব্বাস (রা), ইবনে যুবাইর ( রা) ও হযরত আয়েশা ( রা) থেকে এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, সূরাটি মক্কায় নাযিল হয়েছিল। সূরার বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করলেও একথাই প্রতীয়মান হয় যে, এর মক্কায় নাযিল হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।
শানে নুযুল
একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) বনী ইসরাইলের জৈনক মুজাহিদের কথা আলোচনা করেন। যিনি একহাজার মাস যাবত দিনের বেলা রোজা রেখে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতেন। এ কথা শুনে সাহাবারা খুব নিরাশ হয়ে পড়লেন। তারা বললেন, আমাদের বয়স পূর্বের উম্মতদেরর তুলনায় খুবই কম। আমরা কীভাবে তাদের মতো নেকআমল করে সওয়াব অর্জন করব। এ প্রেক্ষিতে এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। যাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উম্মতদের মর্যাদার কথা আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন। ইবনে জারীর (র) অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনী ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি ইবাদতে মশগুল থাকত ও সকাল হতেই জিহাদের জন্য বের হয়ে যেত। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তা’য়ালা সূরা কদরে এ উম্মতের মর্যাদার কথা ঘোষণা করেন।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
লোকদেরকে কুরআন মজীদের মূল্য, মর্যাদা ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করাই এই সূরাটির বিষয়বস্তু। কুরআন মজীদের বিণ্যাসের ক্ষেত্রে একে সূরা আলাকের পরে রাখাই একথা প্রকাশ করে যে সূরা আলাকের প্রাথমিক পাঁচটি আয়াতের মাধ্যমে যেপবিত্র কিতাবটির নাযিল শুরু হয়েছিল তা কেমন ভাগ্য নির্ণয়কারী রাতে নাযিল হয়, কেমন মহান মর্যাদা সম্পন্ন কিতাব এবং তার এই নাযিল হওয়ার অর্থ কি এই সূরায় সেকথাই লোকদেরকে জানানো হয়েছে। এবং যে রাতে এই কোরআন নাযিল হয়েছে সে রাতের মর্যাদা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।
আগের ও পরের সূরার সাথে সম্পর্কঃ
আগের ৯৬ নং সূরা আল আলাক্বে এসেছে প্রথম ওহী যা নাযিল হয়েছিল তার বর্ননা। এই ৯৭ নং সূরায় ওহি কখন নাযিল হয়েছে তার বর্ননা এসেছে। সূরা আল আলাক্ব এবং সূরা আল ক্বদর; উভয়ই আল কুরআনের কথা দিয়ে শুরু হয়েছে। ৯৬ নং সূরায় পড়তে বলা হয়েছে, আর ৯৭ নং সূরায় কি পড়তে হবে তা বলা হয়েছে। পরের সূরা ৯৮ নং সূরায় আল বায়্যিনাহ-তে ওহিতে আসলে কি আছে? এর মূল বক্তব্য কি? এটি কি প্রভাব ফেলে? এই বিষয়গুলো এসেছে।
আল্লাহ নিজেকে বোঝাতে “আমরা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন কেন?
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যা এর ব্যাখ্যয় বলেছেন, “আরবি সাহিত্যের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, কোন ব্যক্তি নিজের সম্মান বা গৌরব বুঝাতে নিজেকে নাহনু (আমরা) সর্বনাম দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন। আবার তিনি একত্ব বুঝাতে আনা (আমি) অথবা তৃতীয় পুরুষ হুয়া (সে) সর্বনামগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। আল্লাহ আরবদের যখন তাদের ভাষাতেই সম্বোধন করছেন, তিনি কুরআনে এই তিন ধরনের স্টাইলই ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা নিজেকে কিংবা নিজের নাম এবং গুণসমূহ প্রকাশ করার জন্য কখনো একবচন আবার কখনো বহুবচন ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আল্লাহ কখনোই দ্বৈত বা দ্বিবচন ব্যবহার করেননি। কারণ বহুবচন যেখানে আল্লাহর মর্যাদা, তাঁর নাম এবং গুণসমূহের মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করে, দ্বিবচনাত্মক শব্দ সেখানে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাকেই (দুই) নির্দেশ করে, যা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে।
মূল শব্দ হচ্ছে আনযালনাহু ( اَنۡزَلۡنٰهُ) “আমরা একে নাযিল করেছি” কিন্তু আগে কুরআনের কোন উল্লেখ না করেই (হু) দ্বারা কুরআনের দিকে ইংগিত করা হয়েছে ৷ এর কারণ হচ্ছে, “নাযিল করা” শব্দের মধ্যেই কুরআনের অর্থ রয়ে গেছে ৷
এখানে أنزل এসেছে বাবে إفعال থেকে এর অর্থ একবারে বা একইসাথে নাযিল হওয়া। অন্য জায়গায় (৩য় সূরা আলে ইমরান এর ৩ নং আয়াতে) এসেছে نزّل হল বাবে تفعيل থেকে যার অর্থ বার বার নাযিল হওয়া।
কোরআন সম্পর্কে উল্লেখ আছে- “বরং এটা মহান কোরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।” (বুরুজ-২১,২২)। আলেমগণ যদিও এ ব্যাপারে একমত যে, পবিত্র কুরআন রমযান মাসের কদরের রাতে লাওহে মাহফুয থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, কিন্তু অবতীর্ণ হওয়ার ইতিহাস নিয়ে তাঁরা মতবিরোধ করেছেন। এ সম্পর্কিত তিনটি অভিমত উল্লেখযোগ্য-
* প্রথম অভিমত হল-পবিত্র কুরআন কদরের রাতে লাওহে মাহফুয থেকে দুনিয়ার আসমানে একত্রে অবতীর্ণ হয়। অতঃপর রাসূল (সঃ)-এর নবুয়তের সুদীর্ঘ তেইশ বছর জীবনে প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প অল্প করে নাযিল হয়।
* দ্বিতীয় অভিমতঃ পবিত্র কুরআন লাওহে-মাহফুয থেকে প্রথম আসমানে ক্বদরের রাতে নাযিল হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক বছর ক্বদরের রাতে ততটুকু পরিমাণ কুরআন নাযিল হত যতটুকু ঐ পূর্ণ বছরে প্রয়োজন। অতঃপর সারা বছরে অল্প অল্প করে প্রয়োজনমত প্রথম আসমান থেকে রাসূল (সঃ)-এর নিকট অবতীর্ণ হত।
* তৃতীয় অভিমতঃ কুরআন নাযিলের সূচনা হয় লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাতে। অতঃপর বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনের আলোকে সুদীর্ঘ তেইশ বছরে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ হয়।
লাইলাতুল ক্বদর
আরবিতে ‘লাইলাহ’ শব্দের মানে হল রাত।
মুফাসরিনগণ এখানে ক্বাদরের দুইটি অর্থ করেছেন।
- ক্বাদর মানে তকদীর। কেননা এই রাতে মহান আল্লাহ আগামী এক বছরের জন্য সৃষ্টির রুযী, মৃত্যু ও ঘটনা ঘটনের কথা লিপিবদ্ধ করে থাকেন।
- কদর অর্থ হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা ৷ অর্থাৎ এটি অত্যন্ত মর্যাদাশালী রাত ৷ এই অর্থ সমর্থন করে এই সূরার নিম্নোক্ত আয়াতটি ” কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম“৷
এখন প্রশ্ন হতে পারে দিন কি রাতের সাথে শামিল হবে? আরবী ভাষায় ‘রাত‘ শব্দটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে দিন ও রাতের সমষ্টিকে বলা হয়৷ হযরত শাবী বলেন– লাইলাতুল কদরের দিনটি রাতের মতোই মার্যাদাবান। যদিও কিছু আলেম দ্বিমত করেছেন।
এখানে প্রশ্নবাচক শব্দ ব্যবহার করে এই রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব অধিকরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে। যেন সৃষ্টি এর সুগভীর রহস্য পূর্ণরূপে জানতে সক্ষম নয়। একমাত্র আল্লাহই এ ব্যাপারে পূর্ণরূপ অবগত।
মুফাস্সিরগণ এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎকাজ কদরের রাত নেই এমন হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে ভালো। হাদীসে এসেছে, রামাদান আগমনকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমাদের নিকট রামাদান আসন্ন। মুবারক মাস। আল্লাহ্ এর সাওম ফরয করেছেন। এতে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়ে থাকে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানগুলোকে বেঁধে রাখা হয়। এতে এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাত্রির কল্যান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সে তো যাবতীয় কল্যান থেকে বঞ্চিত হলো।” [নাসায়ী: ৪/১২৯]
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রাত্রিতে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [বুখারী: ১০৯১]
এখানে বলা হয়েছে, “কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ৷” আর মাস বলতে একেবারে গুণে গুণে তিরাশি বছর চার মাস নয়৷ বরং আরববাসীদের কথার ধরনই রকম ছিল,কোন বিপুল সংখ্যার ধারণা দেবার জন্য তারা “হাজার” শব্দটি ব্যবহার করতো৷ তাই আয়াতের অর্থ হচ্ছে,এই একটি রাতে এত বড় নেকী ও কল্যাণের কাজ হয়েছে যা মানবতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে কোন দীর্ঘতম কালেও হয়নি৷
লাইলাতুল কদর রাত কোনটি? এ ব্যাপারে ব্যাপক মতবিরোধ দেখা যায়৷ এ সম্পর্কে প্রায় ৪০ টি মতের সন্ধান পাওয়া যায়৷ তবে আলেম সমাজের সংখ্যাগুরু অংশের মতে রমযানের শেষ দশ তারিখের কোন একটি বেজোড় রাত হচ্ছে এই কদরের রাত৷ আবার তাদের মধ্যেও বেশীরভাগ লোকের মত হচ্ছে সেটি সাতাশ তারিখের রাত৷ এ প্রসংগে বর্ণিত নির্ভরযোগ্য কয়েকটি হাদীসগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো৷
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তা শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর [ক্বদর]। (বুখারী ১৮৯২)
হযরত উবাদাহ ইবনে সামেত (রা) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রমযানের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাগুলোর যেমন একুশ, তেইশ,পঁচিশ, সাতাশ বা শেষ রাতের মধ্যে রয়েছে কদরের রাত৷ (মুসনাদে আহমাদ )
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমাযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে। (বুখারী ১৮৮৫)
‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর। (বুখারী ১৮৮৭)
‘উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দু’জন মুসলিম ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর। (বুখারী ১৮৯৩)
এ প্রসংগে হযরত মু‘আবীয়া (রা) হযরত ইবনে উমর, হযরত ইবনে আব্বাস (রা) এবং অন্যান্য সাহাবীগণ যে রেওয়ায়াত করেছেন তার ভিত্তিতে পূর্ববর্তী আলেমগণের বিরাট অংশ সাতাশ রমযানকেই কদরের রাত বলে মনে করেন৷ সম্ভবত কদরের রাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহাত্ম থেকে লাভবান হবার আগ্রহে যাতে লোকেরা অনেক বেশী রাত ইবাদাতে কাটাতে পারে এবং কোন একটি রাতকে যথেষ্ট মনে না করে সে জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে কোন একটি রাত নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি৷
ক্বাদরের রাত্রের জন্য নবী (সাঃ) খাস দু’আ বলে দিয়েছেনঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী)
الروح – বলে জিবরীলকে বোঝানো হয়েছে। জিবরীল আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তার উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরীলের সাথে ফেরেশতারাও সে রাত্ৰিতে অবতরণ করে। হাদীসে আছে, “লাইলাতুল-কদরের রাত্রিতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এত বেশী অবতরণ করে যে, তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশী।” [মুসনাদে আহমাদ: ২/৫১৯, মুসনাদে তায়ালাসী: ২৫৪৫] কুরআনের আরো কয়েকটি জায়গায় জিবরীল (আঃ) কে রুহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে- । এছাড়াও সরাসরি জিবরীল (আঃ) এর নাম কুরআনে এসেছে তিনবার। রুহুল আমীন এবং রুহুল কুদুস নামেও কুরআনে জিবরীলকে বোঝানো হয়েছে।
بِإِذْنِ رَبِّهِمْ – ‘তাদের রবের অনুমতিক্রমে’ আয়াতের এই অংশ দ্বারা আল্লাহর প্রভুত্বকে আরো ফোকাস করা হয়েছে। ফেরেশতারা দুনিয়াতে নেমে আসা, মানুষের ভাগ্যলিপি বন্টন, এই কদরের এই শান্তিপূর্ণ রাত সবকিছুই আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় এবং অনুমতিক্রমেই হচ্ছে। তারা নিজেদের তরফ থেকে আসে না৷ কুরআনের বহু জাগায়
بِإِذْنِ رَبِّهِمْ বা بِإِذْنِ ٱللَّهِ শব্দের দ্বারা আল্লাহর প্রভুত্ব এবং সবকিছু যে তাঁর ইচ্ছায় ও অনুমতিক্রমে হচ্ছে সেটা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
مِّن كُلِّ أَمْرٍ – প্রত্যেক হুকুম নিয়ে বলতে “আমরে হাকীম” (বিজ্ঞতাপূর্ণ কাজ) [সূরা আদ-দোখান: ৪] বলতে যা বুঝানো হয়েছে তার কথাই এখানে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফেরেশতাগণ শবে-কদরে সারা বছরের অবধারিত ঘটনাবলী নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে।
سَلَامٌ – অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারাটা রাত শুধু শান্তিই শান্তি, মঙ্গলই মঙ্গল তথা কল্যাণে পরিপূর্ণ। সে রাত্র সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত। অথবা এই অর্থে ‘শান্তিময়’ যে, মু’মিন এই রাতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে। অথবা ‘সালাম’-এর অর্থ প্রচলিত ‘সালাম’ই। ইমাম শা’বী বলেন- এ রাতে সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ফেরেশতাগণ মু’মিনদের নিরাপত্তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলেন- আসসালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম।
লাইলাতুল-কদরের এই বরকত রাত্রির শুরু অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর হতে ফজরের উদয় পর্যন্ত বিস্তৃত।
|
- রামাদান মাসের শেষ দশদিনের বিজোড় রাতগুলোতে আমরা লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করবো।
- লাইলাতুল ক্বদর শব্দ তিনবার এই সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে।
- লাইলাতুল ক্বদরে আমাদের করনীয়-
- নামাজ পড়া (৫ ওয়াক্ত জামায়াতে পড়া, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি)
- বেশি করে কুরআন তেলাওয়াতে করা
- সুযোগ থাকলে ইতিক্বাফ করা
- বেশি বেশি দান সাদকা করা
- পরিবারকে সাথে নিয়ে ইবাদত করা
- বেশি করে দোয়া করা বিশেষ করে লাইলাতুল ক্বদরের দোয়াটি করা
- যিকির, দুরুদ ও ইস্তেগফার করা
- ক্বাদরের রাত্রের জন্য বিশেষ দোয়াঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
- এ সূরার আলোকে ক্বদরের রাতের মাহাত্ম্য, মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য-
- এ রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম
- এ রাতে ফেরাশতারা দুনিয়ায় অবতীর্ণ হন।
- এ রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে।
- এ রাতটি ফজর পর্যন্ত শান্তিময়
- রুহ বলতে জিবরাঈল আঃ কে বুঝানো হয়েছে। কুরআনে সরাসরি জিবরাঈল নাম এসেছে ৩বার। রুহুল আমীন এবং রুহুল কুদুস নামেও কুরআনে জিবরীলকে বোঝানো হয়েছে।
- ক্বদর শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে সম্মান। সম্মানিত গ্রন্থ আল-কুরআন, একজন সম্মানিত ফেরেশতার মাধ্যমে সবচেয়ে সম্মানিত রাসূলের কাছে সম্মানিত রামাদান মাসের সম্মানিত রাতে নাযিল হয়েছে।