Notes 31- Sura Ibrahim 35 to 41

কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা ২০২২

প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ ৩১

সূরা ইব্রাহীম (৩৫-৪১)

আর স্মরণ করুন, যখন ইবরাহীম বলেছিলেন

সাধারণ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করার পর এবার আল্লাহ কুরাইশদের প্রতি যেসব বিশেষ অনুগ্রহ করেছিলেন সেগুলোর কথা বলছেন। এ সংগে একথাও বলা হচ্ছে যে, তোমাদের প্রপিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কোন ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে কোন ধরনের অনুগ্রহ বর্ষণ করেছিলাম এবং এখন তোমরা নিজেদের প্রপিতার প্রত্যাশা ও নিজেদের রবের অনুগ্রহের জবাবে কোন ধরনের ভ্রষ্টতা ও দুষ্কর্মের অবতারণা করে যাচ্ছো। তিনি তো এ ঘরকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য তৈরী করেছিলেন। এ ইবরাহীম যার জন্য এ এলাকা আবাদ হয়েছে তিনি তো প্রচণ্ডভাবেই আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদাতের বিরোধিতা করে গেছেন। তিনিই তো মক্কার জন্য নিরাপত্তার দোআ করেছেন।

হে আমার রব! এ শহরকে নিরাপদ করুন

এখানে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর দুটি দোআ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম দো’আঃ (رَبِّ اجْعَلْ هَٰذَا الْبَلَدَ آمِنًا) অৰ্থাৎ হে আমার রব! এ (মক্কা) নগরীকে শান্তির আলয় করে দাও। সূরা আল-বাকারায়ও [১২৬ নং আয়াতে] এ দোআর উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে بلد শব্দটি ألف ও لام ব্যতীত بلدا বলা হয়েছে। এর অর্থ অনির্দিষ্ট নগরী। এর কারণ হিসেবে কোন কোন মুফাসসির যা বলেন তা এই যে, এ দোআটি যখন করা হয়েছিল, তখন মক্কা নগরীর পত্তন হয়নি। তাই ব্যাপক অর্থবোধক ভাষায় দো’আ করেছিলেন যে, এ জায়গাকে একটি শান্তির নগরীতে পরিণত করে দিন। এরপর মক্কায় যখন জনবসতি স্থাপিত হয়ে যায়, তখন এ আয়াতে বর্ণিত দোআটি করেন। কারণ এর পরে তাঁর দু ছেলে ইসমাঈল ও ইসহাকের কথা উল্লেখ করেছেন। যা দ্বারা বোঝা যায় যে, দোআটি পরেই করা হয়েছে। কারণ ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ইসহাকের চেয়ে তের বছরের বড় ছিলেন। আর প্রথম যখন দোআ করেছিলেন তখন ইসমাঈল ও তাঁর মা-এ দু’জনই ছিলেন। আর ইসমাঈল তখন ছিলেন দুগ্ধপোষ্য শিশু।

কোন কোন মুফাসসির বলেন, সূরা বাকারার আয়াতে সে দেশ ও দেশের বাসিন্দা সবার নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে, পক্ষান্তরে এ সূরায় শুধু দেশের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মক্কাকে নির্দিষ্ট করে প্রথমে যে দোআ করেন তা হচ্ছে, একে শান্তির আবাসস্থল করে দিন। আল্লাহ তা’আলা নবীর এ দোআ কবুল করেছেন। তিনি অন্যত্র বলেন, “তারা কি দেখে না আমরা ‘হারামকে নিরাপদ স্থান করেছি, অথচ এর চারপাশে যেসব মানুষ আছে, তাদের উপর হামলা করা হয়।” [সূরা আল-আনকাবুত: ৬৭] এখানে লক্ষণীয় যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সবকিছুর আগে নিরাপত্তার জন্য দোআ করেছেন। কারণ, যদি কোন স্থানে নিরাপত্তার অভাব হয়, সেখানে দ্বীন-দুনিয়ার কোন কাজই সঠিকভাবে আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হয় না।

আমাকে ও আমার পুত্রদেরকে মূর্তি পূজা হতে দূরে রাখুন।

দ্বিতীয় দোআ এই যে, আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। নবীগণ নিস্পাপ। কিন্তু এখানে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দোআ করতে গিয়ে নিজেকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। এর কারণ এই যে, স্বভাবজাত ভীতির প্রভাবে নবীগণ সর্বদা শংকা অনুভব করতেন। অথবা আসল উদ্দেশ্য ছিল সন্তান-সন্ততিকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচানোর দোআ করা। সন্তানদেরকে এর গুরুত্ব বোঝাবার জন্য নিজেকেও দোআয় শামিল করে নিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় বন্ধুর দো’আ কবুল করেছেন। ফলে তার সন্তানরা শির্ক ও মূর্তিপূজা থেকে নিরাপদ থাকে। তবে তার বংশধরদের মধ্যে মূর্তিপূজা হবে না এমনটি বলা হয়নি এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামও এমন দোআ করেননি। কারণ, মক্কাবাসীরা সাধারণভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এরই বংশধর। তাদের মধ্যে মূর্তিপূজা বিদ্যমান ছিল। প্রত্যেক দো’আকারীর উচিত তার নিজের ও পিতামাতা ও তার সন্তান-সন্তুতিদের জন্য এ দো’আ করা।

এখানে পূর্ব আয়াতে বর্ণিত দোআর কারণ বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, মূর্তিপূজা থেকে আমাদের অব্যাহতি কামনার কারণ এই যে, এ মূর্তি অনেক মানুষকে পথ ভ্রষ্টতায় লিপ্ত করেছে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম স্বীয় পিতা ও জাতির অভিজ্ঞতা থেকে একথা বলেছিলেন। মূর্তিপূজা তাদেরকে সর্বপ্রকার মঙ্গল ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছিল। অর্থাৎ মূর্তিগুলো মানুষকে আল্লাহর দিক থেকে ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের ভক্তে পরিণত করেছে। মূর্তি যেহেতু অনেকের পথভ্রষ্টতার কারণ হয়েছে তাই পথভ্রষ্ট করার কাজকে তার কৃতকর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার অনুসারী হবে তথা ঈমান ও সৎকর্ম সম্পাদনকারী হবে, সে তো আমারই। উদ্দেশ্য, তার প্রতি যে দয়া ও কৃপা করা হবে, তা বলাই বাহুল্য। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অবাধ্যতা করে, তার জন্য আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু। এখানে অবাধ্যতার অর্থ যদি কর্মগত অবাধ্যতা অর্থাৎ মন্দকৰ্ম নেয়া হয়, তবে আয়াতের অর্থ স্পষ্ট যে, আপনার কৃপায় তারও ক্ষমা আশা করা যায়। আর যদি অবাধ্যতার অর্থ কুফর ও অস্বীকৃতি নেয়া হয়, তবে কাফের ও মুশরিকের ক্ষমা না হওয়া নিশ্চিত ছিল এবং ওদের জন্য সুপারিশ না করার নির্দেশ ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম-কে পূর্বেই দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তাদের ক্ষমার আশা ব্যক্ত করার সঠিক অর্থ হলোঃ নবীসুলভ দয়া প্রকাশ করা। প্রত্যেক নবীর আন্তরিক বাসনা এটাই ছিল যে, প্রত্যেক কাফের ঈমান আনুক, তাই আল্লাহ তা’আলাকে “আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু” -একথা বলে তিনি এই স্বভাবসুলভ বাসনা প্রকাশ করে দিয়েছেন মাত্র। একথা বলেননি যে, এদের সাথে ক্ষমা ও দয়ার ব্যবহার করুন।

ঈসা আলাইহিস সালামও স্বীয় উম্মতের কাফেরদের সম্পর্কে এরূপ বলেছিলেনঃ (وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ) [আল-মায়েদাঃ ১১৮] অর্থাৎ “আপনি যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তবে আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।” আপনি সবই করতে পারেন। আপনার কাজে কেউ বাধাদানকারী নেই। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এ কথা হে রব! এ মুর্তিগুলো অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। এ আয়াতাংশ এবং ঈসা আলাইহিস সালামের ‘যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা’ আয়াতাংশ তেলাওয়াত করেন।

তারপর তিনি তার দু’হাত উপরে উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মত, হে আল্লাহ! আমার উম্মত, হে আল্লাহ! আমার উম্মত। আর কাঁদতে থাকলেন। তখন আল্লাহ্ তাআলা জিবরীলকে বললেন, হে জিবরীল তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও, অথচ তোমার রব জানেন – তাকে জিজ্ঞেস কর, কেন তিনি কাঁদছেন? তখন জিবরীল এসে রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনিও জিবরীলকে প্রশ্নোত্তর জানালেন। তখন আল্লাহ বললেন, জিবরীল যাও, মুহাম্মাদের কাছে এবং তাকে বল, আমরা অবশ্যই আপনার উম্মতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করব এবং আপনার জন্য খারাপ কোন কিছু করব না। [মুসলিম: ২০২]

 

এখানে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কিভাবে তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে এ মরুপ্রান্তরে রেখে গেলেন সে ঘটনাটি সহীহ বর্ণনার উপর নির্ভর করে বর্ণনা করা প্রয়োজন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ নারী জাতি সর্বপ্রথম ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এর মাতা হাজেরা থেকেই কোমরবন্ধ বানানো শিখেছে। হাজেরা সারা থেকে আপন গর্ভের নিদর্শনাবলী গোপন করার উদ্দেশ্যেই কোমরবন্ধ লাগাতেন। অতঃপর উভয়ের মনোমালিণ্য চরমে পৌছলে আল্লাহর আদেশে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হাজেরা ও তার শিশুপুত্র ইসমাইলকে সাথে নিয়ে নির্বাসন দানের জন্য বের হলেন। পথে হাজেরা শিশুকে দুধ পান করাতেন। শেষ পর্যন্ত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের উভয়কে নিয়ে যেখানে কাবাঘর অবস্থিত সেখানে এসে উপস্থিত হলেন এবং মসজিদের উঁচু অংশে যমযমের উপরিস্থত এক বিরাট বৃক্ষতলে তাদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল কোন জনমানব, না ছিল পানির কোনরূপ ব্যবস্থা। অতঃপর সেখানেই তাদেরকে রেখে গেলেন এবং একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর আর একটি মশকে স্বল্প পরিমাণ পানি দিয়ে গেলেন। তারপর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজ গৃহ অভিমুখে ফিরে চললেন।

ইসমাঈলের মাতা তার পিছু পিছু ছুটে আসলেন এবং চিৎকার করে বলতে লাগলেন, হে ইবরাহীম! কোথায় চলে যাচ্ছেন? আর আমাদেরকে রেখে যাচ্ছেন এমন এক ময়দানে, যেখানে না আছে কোন সাহায্যকারী না আছে পানাহারের কোন বস্তু। তিনি বার বার এ কথা বলতে লাগলেন। কিন্ত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সেদিকে ফিরেও তাকালেন না। তখন হাজেরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এর আদেশ কি আপনাকে আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। হাজেরা বললেন, তাহলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস ও বরবাদ করবেন না। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। ইবরাহীমও সামনে চললেন। শেষ পর্যন্ত যখন তিনি গিরিপথের বাঁকে এসে পৌছলেন, যেখানে স্ত্রী-পুত্র আর তাকে দেখতে পাচ্ছিল না, তখন তিনি কাবা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং দু’হাত তুলে এ দোআ করলেনঃ “হে আমাদের রব! আমি আমার বংশধরদের কিছু সংখ্যককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের কাছে, হে আমাদের রব! এ জন্যে যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দিন এবং ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের রির্যকের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।”

তখন ইসমাঈলের মা ইসমাঈলকে দুধ খাওয়াতেন আর নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। পরিশেষে মশকে যা পানি ছিল তা ফুরিয়ে গেল। তখন তিনি নিজেও তৃষ্ণার্ত হলেন এবং তার শিশুপুত্রটিও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুর প্রতি দেখতে লাগলেন, শিশুর বুক ধড়ফড় করছে কিংবা বলেছেন, সে জমিনে ছটফট করছে। শিশুপুত্রের দিকে তাকানো তার পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠল। তিনি সরে পড়লেন এবং তাঁর অবস্থানের সংলগ্ন পর্বত সাফা’কেই একমাত্র নিকটতম পর্বত হিসেবে পেলেন তারপর তিনি এর উপর উঠে দাঁড়িয়ে ময়দানের দিকে মুখ করলেন, এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলেন কাউকে দেখা যায় কি না? কিন্তু না কাউকে তিনি দেখলেন না। তখন দ্রুত সাফা পর্বত থেকে নেমে পড়লেন। যখন তিনি নিচু ময়দানে পৌছলেন তখন আপন কামিজের এক দিক তুলে একজন শ্রান্ত-ক্লান্ত ব্যক্তির ন্যায় দৌড়ে চললেন। শেষে ময়দান অতিক্রম করলেন, মারওয়া পাহাড়ের নিকট এসে গেলেন এবং তার উপর উঠে দাঁড়ালেন। তারপর চারদিকে নজর করলেন, কাউকে দেখতে পান কি না?

কিন্তু কাউকে দেখলেন না তিনি অনুরূপভাবে সাতবার করলেন। … তারপর যখন তিনি শেষবার মারওয়ার পাহাড়ের উপর উঠলেন, একটি আওয়াজ শুনলেন। তখন নিজেকেই নিজে বললেন, একটু অপেক্ষা কর। তিনি কান দিলেন। আবারও শব্দ শুনলেন। তখন বললেন, তোমার আওয়াজ তো শুনছি। যদি তোমার কাছে উদ্ধার করার মত কিছু থাকে আমাকে উদ্ধার কর। অকস্মাৎ তিনি, যমযম যেখানে অবস্থিত সেখানে একজন ফেরেশতাকে দেখতে পেলেন। সে ফেরেশতা আপন পায়ের গোড়ালি দ্বারা আঘাত করলেন। কিংবা তিনি বলেছেন-আপন ডানা দ্বারা আঘাত হানলেন। ফলে (আঘাতের স্থান থেকে) পানি উপচে উঠতে লাগল। হাজেরা এর চার পাশে বাঁধ দিয়ে তাকে হাউযের আকার দান করলেন এবং অঞ্জলি ভরে তার মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। হাজেরার অঞ্জলি ভরার পরে পানি উছলে উঠতে লাগল। … তারপর হাজেরা পানি পান করলেন এবং শিশুপুত্রকেও দুধ পান করালেন। তখন ফেরেশতা তাকে বললেন, ধ্বংসের কোন আশংকা আপনি করবেন না। কেননা, এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে। এই শিশু তার পিতার সাথে মিলে এটি পুনঃ নিৰ্মাণ করবে এবং আল্লাহ তার পরিজনকে কখনও ধ্বংস করবেন না। ঐ সময় বায়তুল্লাহ জমিন থেকে টিলার ন্যায় উঁচু ছিল। বন্যার পানি আসতো এবং ডান বাম থেকে ভেঙ্গে নিয়ে যেতো।

হাজেরা এভাবেই দিন-যাপন করছিলেন। শেষ পর্যন্ত “জুরহুম” গোত্রের একদল লোক তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে গেল। কিংবা তিনি বলেছেন, ‘জুরহুম’ গোত্রের কিছু লোক ‘কাদা’ এর পথে এ দিক দিয়ে আসছিল। তারা মক্কার নিচুভূমিতে অবতরণ করল এবং দেখতে পেল কতগুলো পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয় এ পাখিগুলো পানির উপরই ঘুরছে। অথচ আমরা এ ময়দানে বহুকাল কাটিয়েছি। কিন্তু কোন পানি এখানে ছিল না। তারপর তারা একজন বা দু’জন লোক সেখানে পাঠাল। তারা গিয়েই পানি দেখতে পেল। ফিরে এসে সবাইকে পানির খবর দিল। সবাই সেদিকে অগ্রসর হলো। বর্ণনাকারী বলেনঃ ইসমাঈলের মাতা পানির কাছে বসা ছিলেন। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই; আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন কি?

তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ, তবে এ পানির উপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা হ্যাঁ বলে সম্মতি জানালো। ইবনে আব্বাস বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈলের মাতার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিল, তিনিও মানুষের সাহচর্য কামনা করছিলেন। ফলে আগন্তুক দলটি সেখানে বসতি স্থাপন করলো এবং পরিবার-পরিজনের কাছে খবর পাঠালো, তারাও এসে সেখানে বসবাস শুরু করল। শেষ পর্যন্ত সেখানে তাদের কয়েকটি খান্দান জন্ম নিল। ইসমাঈলও বড় হলেন, তাদের থেকে আরবী শিখলেন। জওয়ান হলে তিনি তাদের অধিক আগ্রহের বস্তু ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। যখন তিনি যৌবনপ্রাপ্ত হলেন, তখন তারা তাদেরই এক মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দিল। বিয়ের পরে ইসমাঈলের মাতা মারা গেলেন। … (ইতিমধ্যে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দু’বার এসে ইসমাঈল ও স্ত্রীর খোজ নিলেন এবং এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিলেন)

পুনরায় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু দিন এদের থেকে দূরে রইলেন। এরপর আবার তাদের কাছে আসলেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যমযমের কাছে একটি গাছের নীচে বসে নিজের তীর মেরামত করছিলেন। পিতাকে যখন আসতে দেখলেন, দাঁড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলেন। অতঃপর একজন পিতা-পুত্রের সঙ্গে সাক্ষাত হলে যা করে তারা তা-ই করলেন। তারপর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেনঃ হে ইসমাঈল! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের হুকুম দিয়েছেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম জবাব দিলেন, আপনার পরওয়ারদিগার আপনাকে যা আদেশ করেছেন তা করে ফেলুন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেনঃ তুমি আমাকে সাহায্য করবে কি? ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, হ্যাঁ। আমি অবশ্যই আপনার সাহায্য করব ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ আমাকে এখানে এর চারপাশ ঘেরাও করে একটি ঘর বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ বলে তিনি উঁচু টিলাটির দিকে ইশারা করলেন এবং স্থানটি দেখালেন।

তখনি তারা উভয়ে কাবা ঘরের দেয়াল উঠাতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম পাথর যোগান দিতেন এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালাম গাথুনি করতেন। যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম মাকামে ইবরাহীম নামক মশহুর পাথরটি আনলেন এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্য তা যথাস্থানে রাখলেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর উপর দাঁড়িয়ে ইমারত নির্মাণ করতে লাগলেন এবং ইসমাঈল তাকে পাথর যোগান দিতে লাগলেন। আর উভয়ে এ দো’আ করতে থাকলেনঃ “হে আমাদের রব! আমাদের থেকে (এ কাজটুকু) কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন।” আবার তারা উভয়ে ইমারত নির্মাণ করতে লাগলেন। তারা কাবা ঘরের চারদিকে ঘুরছিলেন এবং উভয়ে এ দোআ করছিলেনঃ হে আমাদের প্রভু! আমাদের এ শ্রমটুকু কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা আল-বাকারাহঃ ১২৭], [বুখারীঃ ৩৩৬৪]

অনুর্বর উপত্যকায় – ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ পান যে, দুগ্ধপোষ্য শিশু ও তার জননীকে শুষ্ক প্রান্তরে ছেড়ে আপনি শামে চলে যান, তখন তিনি আবেদন করেছিলেন যে, তাদেরকে ফলমূল দান করুন; যদিও তা অন্য জায়গা থেকে আনা হয়। এ কারণেই মক্কা মুকাররামায় আজ পর্যন্ত চাষাবাদের তেমন ব্যবস্থা না থাকলেও সারা বিশ্বের ফলমূল এত অধিক পরিমাণে সেখানে পৌছে থাকে যে, অন্যান্য অনেক শহরেই সেগুলো পাওয়া দুস্কর।

আপনার পবিত্র ঘরের কাছে – এ আয়াতাংশ থেকে কেউ কেউ প্রমাণ নিতে চেষ্টা করেছেন যে, বায়তুল্লাহর ভিত্তি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর পূর্বে স্থাপিত হয়েছিল। কোন কোন মুফাসসির এ আয়াতের এবং বিভিন্ন বর্ণনার ভিত্তিতে বলেনঃ সর্বপ্রথম আদম ‘আলাইহিস সালাম বায়তুল্লাহ নিৰ্মাণ করেন। নূহের মহাপ্লাবনের পর ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে এই ভিত্তির উপরেই বায়তুল্লাহ পূননির্মাণের আদেশ দেয়া হয়। জিবরীল আলাইহিস সালাম প্রাচীন ভিত্তি দেখিয়ে দেন। তবে সহীহ কোন দলীল সরাসরি এটা প্রমাণ করে না যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পূর্বে কেউ কা’বা ঘর বানিয়েছে। বিভিন্ন দুর্বল বর্ণনায় আদম আলাইহিস সালাম এবং পরবর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু জাতির মক্কায় আসার কথা এসেছে, কিন্তু সেগুলো সহীহ হাদীসের বিপরীতে টিকে না। যেখানে সরাসরি সহীহ হাদীসে এসেছে যে, “প্রথম মাসজিদ বাইতুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”। [দেখুনঃ মুসলিমঃ ৫২০]

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নির্মিত এই প্রাচীর জাহেলিয়াত যুগে বিধ্বস্ত হয়ে গেলে কুরাইশরা তা নতুনভাবে নির্মান করে। এ নির্মাণকাজে আবু তালেবের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নবুওয়তের পূর্বে অংশগ্রহণ করেন। [মুসলিমঃ ৩৪০] এতে বায়তুল্লাহর বিশেষণ محرم উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ সম্মানিতও হতে পারে এবং সুরক্ষিতও। বায়তুল্লাহর মধ্যে উভয় বিশেষণই বিদ্যমান। এটি যেমন চিরকাল সম্মানিত, তেমনি চিরকাল শক্রর কবল থেকে সুরক্ষিত।

হে আমাদের রব! এ জন্যে যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে- ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দো’আর প্রারম্ভে পুত্র ও তার জননীর অসহায়তা ও দুর্দশা উল্লেখ করার পর সর্বপ্রথম সালাত কায়েমকারী করার দোআ করেন। ইবন জারীর বলেন, এখানে বায়তুল্লাহকে কেন হারাম বা সম্মানিত/সুরক্ষিত করা হয়েছে তার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে আর সেটা হচ্ছে, যাতে মানুষ সেখানে সালাত আদায় করতে সমর্থ হয়। তাছাড়া সালাত সবচেয়ে উত্তম ইবাদাত। এর দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় মঙ্গল সাধিত হয়। যে এ সালাত ঠিকভাবে কায়েম রাখতে পারবে সে দ্বীন কায়েম রাখতে পারবে। এ থেকে বোঝা গেল যে, পিতা যদি সন্তানকে সালাতের অনুবর্তী করে দেয়, তবে এটাই সন্তানদের পক্ষে পিতার সর্ববৃহৎ সহানুভূতি ও হিতাকাংখা হবে।

অতএব আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দিন  أفئدة শব্দটি فؤاد এর বহুবচন। এর অর্থ অন্তর। এখানে أفئدة শব্দটি نكرة এবং তার সাথে من অব্যয় ব্যবহার করা হয়েছে, যা تبعيض ও تقليل এর অর্থে আসে। তাই অর্থ এই যে, কিছু সংখ্যক লোকের অন্তর তাদের দিকে আকৃষ্ট করে দিন। কোন কোন তাফসীরবিদ বলেনঃ যদি এ দোআয় কিছু সংখ্যক অর্থবোধক অব্যয় ব্যবহার করা না হত; তবে সারা বিশ্বের মুসলিম, অমুসলিম, ইয়াহুদী, নাসারা এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সব মানুষ মক্কায় ভীড় করত, যা তাদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াত। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দোআয় বলেছেনঃ কিছু সংখ্যক লোকের অন্তর তাদের দিকে আকৃষ্ট করে দিন। যাতে করে শুধু মুসলিমরাই এখানে আসে।

এবং ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের রিযকের ব্যবস্থা করুন – যাতে করে তারা এ ফল-মুল খেয়ে আপনার ইবাদতের জন্য শক্তি লাভ করতে পারে। আল্লাহ তা’আলা এ দোআ কবুল করেছেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “আমরা কি তাদেরকে এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয় আমাদের দেয়া রিযকস্বরূপ।” [সূরা আল-কাসাসঃ ৭৫]এ দোআর প্রভাবেই মক্কা মুকাররামা কোন কৃষিপ্রধান অথবা শিল্পপ্রধান এলাকা না হওয়া সত্বেও সারা বিশ্বের দ্রব্যসামগ্রী এখানে প্রচুর পরিমাণে আমদানী হয়, যা বোধ হয় জগতের অন্য কোন বৃহত্তম শহরেও পাওয়া যায় না। এ দোআর বরকতেই সব যুগে সব ধরনের ফল, ফসল ও অন্যান্য জীবন ধারণ সামগ্রী সেখানে পৌছে থাকে।

যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে- এতে ইঙ্গিত করেছেন যে, সন্তানদের জন্য আর্থিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দোআ এ কারণে করা হয়েছে, যাতে তারা কৃতজ্ঞ হয়ে কৃতজ্ঞতার সওয়াবও অর্জন করে। এভাবে সালাতের অনুবর্তিতা দ্বারা দোআ শুরু করে কৃতজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে শেষ করা হয়েছে। মাঝখানে আর্থিক সুখ-শান্তির প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। এতে শিক্ষা রয়েছে যে, মুসলিমের এরূপই হওয়া উচিত। তার ক্রিয়াকর্ম, ধ্যান-ধারণার উপর আখেরাতের কল্যাণ চিন্তা প্রবল থাকা দরকার এবং সংসারের কাজ ততটুকুই করা উচিত, যতটুকু নেহায়েত প্রয়োজন।

এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার সর্বব্যাপী জ্ঞানের প্রসঙ্গ টেনে দো’আ সমাপ্ত করা হয়েছে। অর্থ এই যে, আপনি আমার আন্তরিক অবস্থা ও বাহ্যিক আবেদন নিবেদন সবকিছু সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। আপনি আমার এ দো’আর উদ্দেশ্য ভাল করেই জানেন। আপনি জানেন যে, আমি এ দোআ দ্বারা কেবল আপনার জন্য ইখলাস ও সন্তুষ্টিই কামনা করছি।  ‘আন্তরিক অবস্থা’ বলতে ঐ দুঃখ, মনোবেদনা ও চিন্তা-ভাবনা বোঝানো হয়েছে, যা একজন দুগ্ধপোষ্য শিশু ও তার জননীকে উন্মুক্ত প্রান্তরে নিঃসম্বল, ফরিয়াদরত অবস্থায় ছেড়ে আসা এবং তাদের বিচ্ছেদের কারণে স্বাভাবিকভাবে দেখা দিয়েছিল।  আর ‘বাহ্যিক আবেদন-নিবেদন’ বলে স্পষ্টত: ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর দোআই বোঝানো হয়েছে। আয়াতের শেষে আল্লাহ্ তা’আলার জ্ঞানের বিস্তৃতি বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, আমাদের বাহ্যিক ও আন্তরিক অবস্থাই কেন বলি, সমস্ত ভূ-মণ্ডল ও নভোমণ্ডলে কোন অবস্থাই তার অজ্ঞাত নয়। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি মুখে যা কিছু বলছি তা আপনি শুনছেন এবং যেসব আবেগ-অনুভূতি আমার হৃদয় অভ্যন্তরে লুকিয়ে আছে তাও আপনি জানেন।

এ আয়াতের বিষয়বস্তুও পূর্ববতী দো’আর পরিশিষ্ট। কেননা, দো’আর অন্যতম শিষ্টাচার হচ্ছে দো’আর সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এস্থলে বিশেষভাবে আল্লাহ তা’আলার একটি নেয়ামতের শোকর আদায় করেছেন, নেয়ামতটি এই যে, ঘোর বার্ধক্যের বয়সে আল্লাহ তা’আলা তার দো’আ কবুল করে তাকে সুসন্তান ইসমাঈল ও ইসহাক দান করেছেন। এ প্রশংসা বর্ণনায় এদিকেও ইঙ্গিত রয়েছে যে, নিঃসঙ্গ ও নিঃসহায় অবস্থায় জনশূন্য প্রান্তরে পরিত্যক্ত শিশুটি আপনারই দান। আপনিই তার হেফাযত করুন। অবশেষে (إِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ) বলে প্রশংসা বর্ণনা সমাপ্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ নিশ্চয় আমার রব দোআ শ্রবণকারী তথা কবুলকারী।

প্রশংসা বর্ণনার পর আবার দোআয় মশগুল হয়ে যানঃ (رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ) এতে নিজের জন্য ও সন্তানদের জন্য সালাত কায়েম রাখার দোআ করেন। অতঃপর কাকুতি-মিনতি সহকারে আবেদন করেন যে, হে আমার পালনকর্তা! আমার দোআ কবুল করুন। এখানে সালাতে কায়েম রাখার অর্থ, সালাতের হিফাযতকারী এবং এর সীমারেখা যথাযথভাবে কায়েম করা বুঝানো হয়েছে।

 

 

সবশেষে একটি ব্যাপক অর্থবোধক দোআ করলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন ঐদিন, যেদিন হাশরের ময়দানে সারাজীবনের কাজকর্মের হিসাব নেয়া হবে। এতে তিনি মাতা-পিতার জন্যও মাগফেরাতের দোআ করেছেন। অথচ পিতা অর্থাৎ আযর যে কাফের ছিল, তা কুরআনুল কারীমেই উল্লেখিত রয়েছে। সম্ভবতঃ এ দোআটি তখন করেছেন, যখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে কাফেরদের জন্য দোআ করতে নিষেধ করা হয়নি।

ফুটনোট 

* ইব্রাহীম আঃ এর দোয়াগুলোকে যদি আমরা একত্রে করি তাহলে দেখতে পাই। তিনি যেগুলো আল্লাহ্র কাছে চেয়েছেন। সেগুল হলো-

ক) শহরের নিরাপত্তা

খ) মূর্তিপুজা থেকে দূরে থাকার সাহায্য কামনা

গ) নিজে এবং বংশধররা যেন সালাত কায়েম করতে পারে সেই তাওফিক কামনা

ঘ) কিছু লোককে অন্তরকে তাদের অনুসারী হয়

ঙ) রিযকের ব্যবস্থা

চ) কৃতজ্ঞত বান্দা হওয়ার তাওফিক কামনা

ছ) পিতা-মাতা এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা চাওয়া

জ) আল্লাহ্‌ যেন এইদোয়াগুলো কবুল করেন সেটাও চেয়েছেন।

 

* ইব্রাহীম আঃ মুসলিম জাতির পিতা। একজন পিতা তাঁর নিজের জন্য এবং সন্তানদের জন্য যে দোয়াগুলো করে গেছেন এবং কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন আমাদের সেগুলো শিখিয়ে দিচ্ছেন কারণ আমাদের জন্য দোয়াগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয়। এই দোয়াতে ইহকালীন এবং পরকালীন উভয় বিষয়গুলো রয়েছে। নিরাপত্তা, মুর্তিপুজা মত বড় ফেতনা, রিযিকের ব্যবস্থার জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সালাত কায়েম কারী ও আল্লাহ্‌র কৃতজ্ঞ বান্দাহ হওয়ার তাওফিক কামনা করা হয়েছে।

 

* ইব্রাহীম আঃ এর এই দোয়াগুলো থেকে আমরা দোয়ার কিছু আদব শিখতে পাই-

১) নিজের জন্য এবং নিজের পরিবার, বংশধর এবং পুরো মুমিন উম্মাহর জন্য দোয়া করা

২) দোয়ার মাধ্যে আল্লাহ্‌র কৃতজ্ঞতা আদায় করা যে নিয়ামতগুলো আল্লাহ্‌ দিয়েছেন সেগুলোর জন্য

৩) ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণকর বিষয়গুলোর জন্য দোয়া করা