সূরা রা’দ ৩২-৪৩ আয়াত

কুরআন অধ্যয়ন প্রতিযোগিতা ২০২৫

প্রস্তুতি সহায়ক তাফসীর নোট পর্বঃ

সূরা রা’দ ৩২-৪৩ আয়াত

আল্লাহ্ তা’আলা পূর্ববর্তী রাসূলদের সাথে তাদের উম্মতদের কর্মকাণ্ড এবং তাদের সাথে কৃত আল্লাহর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে তা থেকে শিক্ষাগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তারা তাদের বর্তমান ছাড় দেয়া অবস্থাকে যেন স্থায়ী মনে করে না নেয়। তিনি কাউকে পাকড়াও করলে তার আর রক্ষা নেই। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ অত্যাচারীকে ছাড় দিতে থাকেন তারপর যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তার আর পালানোর কোন পথ থাকে না।” [বুখারীঃ ৪৬৮৬, মুসলিমঃ ২৫৮৩]

এখানে এর জবাব ঊহ্য রয়েছে, অর্থাৎ মহান আল্লাহ এবং ঐ মিথ্যা দেবতারা কি সমান হতে পারে, এরা যাদের পূজা-অর্চনা করছে? যারা না কারো ইষ্টানিষ্ট করতে সক্ষম, না তারা দেখতে পায় আর না তারা বিবেক-বুদ্ধির অধিকারী।

 

এখানে শিরককে প্রতারণা বলার একটি কারণ হচ্ছে এই যে, আসলে যেসব নক্ষত্র, ফেরেশতা, আত্মা বা মহামানবকে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার অধিকারী গণ্য করা হয়েছে এবং যাদেরকে আল্লাহর বিশেষ অধিকারে শরীক করা হয়েছে, তাদের কেউই কখনো এসব গুণ, অধিকার ও ক্ষমতার দাবী করেনি এবং কখনো লোকদেরকে এ শিক্ষা দেয়নি যে, তোমরা আমাদের সামনে পূজা অর্চনার অনুষ্ঠানাদি পালন করো, আমরা তোমাদের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে দেবো। কিছু ধূর্ত লোক সাধারণ মানুষের ওপর নিজেদের প্রভুত্বের দাপট চালাবার এবং তাদের উপার্জনে অংশ নেবার উদ্দেশ্যে কিছু বানোয়াট ইলাহ তৈরী করে নিয়েছে। লোকদেরকে তাদের ভক্তশ্রেণীতে পরিণত করেছে এবং নিজেদেরকে কোন না কোনভাবে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে দাঁড় করিয়ে আপন আপন স্বার্থোদ্ধারের কাজ শুরু করে দিয়েছে।

 

শিরককে প্রতারণা বলার দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে এই যে, আসলে এটি একটি আত্মপ্রতারণা এবং এমন একটি গোপন দরজা যেখান দিয়ে মানুষ বৈষয়িক স্বার্থ-পূজা, নৈতিক বিধিনিষেধ থেকে বাঁচা এবং দায়িত্বহীন জীবন যাপন করার জন্য পলায়নের পথ বের করে।

 

তৃতীয় যে কারণটির ভিত্তিতে মুশরিকদের কর্মপদ্ধতিকে প্রতারণা বলা হয়েছে তা পরে আসছে।

মানুষ যখন একটি জিনিসের মোকাবিলায় অন্য একটি জিনিস গ্রহণ করে তখন মানসিকভাবে নিজেকে নিশ্চিন্ত করার এবং নিজের নির্ভুলতা ও সঠিক পথ অবলম্বনের ব্যাপারে লোকদের কে নিশ্চয়তা দান করার জন্য নিজের গৃহীত জিনিসকে সকল প্রকার যু্‌ক্তি-প্রমাণ পেশ করে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে এবং নিজের প্রত্যাখ্যাত জিনিসটির বিরুদ্ধে সব রকম যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে থাকে। এটাই মানুষের প্রকৃতি। এ কারণে বলা হয়েছেঃ যখন তারা সত্যের আহবান মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তখন প্রকৃতির আইন অনুযায়ী তাদের জন্য তাদের পথভ্রষ্টতাকে এবং এ পথভ্রষ্টতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য তাদের প্রতারণাকে সুদৃশ্য ও সুসজ্জিত করে দেয়া হয়েছে এবং এ প্রাকৃতিক রীতি অনুযায়ী তাদের সত্য সঠিক পথে আসা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা কাফেরদের জন্য দুনিয়াতে যে শাস্তি রেখেছেন তার থেকে আখেরাতের শাস্তি যে কত ভয়াবহ এখানে সে কথাই তুলে ধরেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও লি’আনকারী পুরুষ ও মহিলাকে আখেরাতের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, “অবশ্যই দুনিয়ার আযাব আখেরাতের আযাবের চেয়ে অনেক সহজ।” [মুসলিমঃ ১৪৯৩] কারণ, দুনিয়ার আযাব যত দীর্ঘ সময়ই হোক না কেন তা তো লোকের মৃত্যুর সাথে সাথে বা দুনিয়ার শেষদিনটির সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে আখেরাতের আযাব কোন দিন শেষ হবার নয়, তা চিরস্থায়ী। আবার তার পরিমাণও অনেক বেশী। যার বর্ণনা আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনের অন্যত্র করেছেন। [দেখুন, সূরা আল-ফাজরঃ ২৫, ২৬, সূরা আল-ফুরকানঃ ১১–১৫]

 মুত্তাকীদের জন্য কি পুরষ্কার রেখেছেন এখানে তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। এ নহর সমূহের বিস্তারিত বর্ণনায় এসেছে যে, মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্তঃ তাতে আছে নির্মল পানির নহর, আছে দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর, আছে পরিশোধিত মধুর নহর এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে বিবিধ ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। মুত্তাকীরা কি তাদের ন্যায় যারা জাহান্নামের স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়ীভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে? [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৫] অন্যত্র বলা হয়েছে যে, “এমন একটি প্রস্রবণ যা হতে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে, তারা এ প্রস্রবণকে যথা ইচ্ছে প্রবাহিত করবে। [সূরা আল ইনসানঃ ৬]

জান্নাতের নে’আমতসমূহ সর্বদা থাকবে, তাতে কোন অভাব বা কমতি পরিলক্ষিত হবে না। একথাই এখানে বোঝানো হয়েছে। অন্যত্র বলা হয়েছে, “যা শেষ হবে না ও যা নিষিদ্ধও হবে না” [সূরা আল-ওয়াকি’আহঃ ৩৩] এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সালাত আদায়ের সময় এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা নিতে যাচ্ছিলেন তারপর আবার ফিরে আসলেন। পরে সাহাবায়ে কিরাম সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি জান্নাত দেখেছি, তার থেকে আঙ্গুরের একটি থোকা নিতে চাচ্ছিলাম। যদি তা নিয়ে নিতাম তবে যতদিন দুনিয়া থাকত ততদিন তোমরা তা খেতে পারতে।” [বুখারীঃ ১০৫২, মুসলিমঃ ৯০৭]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “তাতে কোন কমতি হতো না”। [মুসলিমঃ ৯০৪] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতবাসীগণ খাবে, পান করবে অথচ তাদের কোন কাশি, থুথু আসবে না, পায়খানা ও পেশাব করবে না। তাদের খাবারের ঢেকুর আসবে যার সুগন্ধ হবে মিসকের সুগন্ধির মতো, দুনিয়াতে যেভাবে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেয় তেমনি তাদেরকে সেখানে তাসবীহ ও পবিত্রতা ঘোষণার জন্য ইলহাম করা হবে।” [মুসলিমঃ ২৮৩৫]

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এক ইয়াহুদী এসে বলল, হে আবুল কাশেম! আপনি মনে করেন যে, জান্নাতবাসীগণ খানাপিনা করবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “অবশ্যই হ্যাঁ, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ! সেখানে জান্নাতবাসীদের প্রত্যেককে খানাপিনা ও কামবাসনার ক্ষেত্রে একশত জনের সমান ক্ষমতা দেয়া হবে।” লোকটি বললঃ যার খানাপিনা আছে তার তো আবার শৌচক্রিয়ারও প্রয়োজন পড়বে। অথচ জান্নাতে কোন ময়লা-আবর্জনা বা কষ্টের কিছু নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তাদের সে প্রয়োজনটুকু শুধুমাত্র একটু ঘামের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। যে ঘামের সুগন্ধ হবে মিসকের গন্ধের মত। আর এতেই তাদের পেট কৃশকায় হয়ে যাবে।” [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৩৬৭]

আর জান্নাতের ছায়ার ব্যাপারে আয়াতে বলা হয়েছে যে, তার ছায়াও চিরস্থায়ী। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে। [সূরা ইয়াসীনঃ ৫৬] আল্লাহ আরো বলেছেনঃ “মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে।” [সূরা আল-মুরসালাতঃ ৪১] আরো বলেনঃ “সন্নিহিত গাছের ছায়া তাদের উপর থাকবে এবং তার ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে। [সূরা আল-ইনসানঃ ১৪] আরো বলেছেনঃ “যারা ঈমান আনে এবং ভাল কাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, সেখানে তাদের জন্য পবিত্র স্ত্রী থাকবে এবং তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ছায়ায় প্রবেশ করাব। [সূরা আন-নিসাঃ ৫৭] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতে এমন গাছও আছে, যার ছায়ায় অত্যন্ত দ্রুতগামী অশ্বারোহী উন্নত ঘোড়া নিয়ে শত বছর সফর করলেও শেষ করতে পারবে না।” [বুখারীঃ ৩২৫১, ৩২৫২, ৬৫৫৩, মুসলিমঃ ২৮২৬, ২৮২৮]

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এভাবেই জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিফলের তুলনামূলক উল্লেখ থাকে। যাতে করে অনুসন্ধিৎসু মন কোনটা ভাল এবং কোনটা মন্দ তা সহজেই বুঝতে পারে। [যেমন, সূরা আল-হাশরঃ ২০, সূরা মুহাম্মাদঃ ১৫]

এখানে মু’মিনদের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা কুরআনের সত্যতার দলীল-প্রমাণ দেখে অধিক আনন্দিত হয়। তারা কুরআন সুন্দরভাবে পাঠ করে। আল্লাহ তা’আলার বাণী:‏ “আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি তা যারা সত্যভাবে বুঝবার মত পাঠ করে তারাই এর প্রতি ঈমান আনে আর যে এটা অবিশ্বাস করবে আসলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” (সূরা বাক্বারা ২:১২১)

এখানে ‘যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে’ বলে কি বোঝানো হয়েছে সে ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে। এক. কিতাবধারী বলে আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদী ও নাসারাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। তখন অর্থ হবে, কিতাবীদের মধ্যে যারা কিতাবের বিধানকে আঁকড়ে আছে, তার উপর প্রতিষ্ঠিত, তারা আপনার কাছে যা নাযিল হয়েছে অর্থাৎ কুরআন সেটা দেখলে খুশী হয়। কারণ, তাদের কিতাবে এ রাসূলের সত্যতা ও সুসংবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশিত আছে। [ইবন কাসীর] যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন সালাম, সালমান প্রমুখ। [কুরতুবী] দুই. কাতাদা বলেন, এখানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথী তথা সাহাবীদের কথা বলা হয়েছে। তারা কুরআনের আলো নাযিল হতে দেখলেই খুশী হত। [তাবারী; কুরতুবী]

দলগুলো বলে এখানে কাদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে, এক. তারা মক্কার মুশরিক কুরাইশরা এবং ইয়াহুদী ও নাসারাদের মধ্যে যারা ঈমান আনেনি তারা। [কুরতুবী] দুই. অথবা এখানে শুধু ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকেই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [ইবন কাসীর] তিন. অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যারা জোট বেঁধেছিল তারা সবাই এখানে উদ্দেশ্য। [কুরতুবী]

অর্থাৎ যেভাবে আপনার পূর্বে আমরা অনেক নবী-রাসূল পাঠিয়েছি এবং আপনার পূর্বে যখনই প্রয়োজন মনে করেছি তখনই কিতাব পাঠিয়েছি সেভাবে আমরা আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছি এবং আমরা আপনাকে কুরআন নামক গ্রন্থখানি দিয়েছি, তাকে আরবী ভাষায় নাযিল করেছি। [ইবন কাসীর; মুয়াসসার] এ কিতাব আপনার উপর নাযিল করে আমি আপনাকে সম্মানিত করেছি এবং অন্যদের উপর আপনার শ্ৰেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছি। কারণ, এ কুরআনের বৈশিষ্ট্য অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। এটি এমন যে, “বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না-সামনে থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, স্বপ্রশংসিতের কাছ থেকে নাযিলকৃত [সূরা ফুসসিলাতঃ ৪২] [ইবন কাসীর] অথবা আয়াতের অর্থ যেভাবে প্রত্যেক নবী ও রাসূলকে তাদের নিজস্ব ভাষায় কিতাব দিয়েছি তেমনি আপনাকে আরবী ভাষায় এ কুরআন প্রদান করলাম। [কুরতুবী]

ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের কতিপয় খেয়াল-খুশী ও আকাঙ্ক্ষাকে বুঝানো হয়েছে, যার সম্বন্ধে তারা চেয়েছিল যে, শেষ নবী যেন তা পূরণ করেন, যেমন; বাইতুল মাকদিসকে সর্বদা কিবলা করে রাখা এবং তাদের আকীদা-বিশ্বাসের বিরোধিতা না করা প্রভৃতি।

আপনার কোন অভিভাবক ও রক্ষক থাকবে না- এটা বাস্তবে উম্মতের উলামাদের জন্য সতর্কবাণী যে, তারা যেন পার্থিব ক্ষণস্থায়ী সুখ-স্বার্থ লাভের জন্য কুরআন ও হাদীসের মোকাবিলায় লোকেদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার অনুসরণ না করে। যদি তারা এমনটি করে, তাহলে তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যেসব আপত্তি উত্থাপন করা হতো এটি তার মধ্য থেকে আর একটি আপত্তির জবাব। তারা বলতো, এ আবার কেমন নবী, যার স্ত্রী-সন্তানাদিও আছে। নবী-রাসূলদের যৌন কামনার সাথে কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না কি? এ রাসূলের কি হলো যে, তিনি বিয়ে করেন? [বাগভী; কুরতুবী] নবী-রাসূল সম্পর্কে কাফের ও মুশরিকদের একটি সাধারণ ধারণা ছিল এই যে, তাদের মানুষ না; বরং ফিরিশতা হওয়া দরকার। ফলে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে তাদের শ্ৰেষ্টত্ব বিতর্কের উর্ধ্বে থাকবে। কুরআন তাদের এ ভ্রান্ত ধারণার জবাব একাধিক আয়াতে দিয়েছে। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তো সিয়ামও পালন করি এবং সিয়াম ছাড়াও থাকি; আমি রাত্রিতে নিদ্ৰাও যাই এবং সালাতের জন্যও দণ্ডায়মান হই; এবং নারীদেরকে বিবাহও করি। যে ব্যক্তি আমার এ সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। [বুখারীঃ ৪৭৭৬, মুসলিমঃ ১৪০১]

আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের কাজ নয়- এটিও একটি আপত্তির জবাব। কাফের ও মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে নিদর্শনের দাবী করত। আগেও সেটার জবাব দেয়া হয়েছে। এখানে আবার সেটার জওয়াব দেয়া হচ্ছে। [কুরতুবী] অনুরূপভাবে তারা কুরআনের আয়াত পরিবর্তনের জন্যও প্রস্তাব করত। তারা বলতো আল্লাহর কিতাবে আমাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী বিধি-বিধান নাযিল হোক। তারা আব্দার করত যে, আপনি বর্তমান কুরআনের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ভিন্ন কুরআন নিয়ে আসুন, যাতে আমাদের প্রতিমাসমূহের উপাসনা নিষিদ্ধ করা না হয় অথবা আপনি নিজেই এর আনীত বিধি-বিধান পরিবর্তন করে দিন অথবা আযাবের জায়গায় রহমত এবং হারামের জায়গায় হালাল করে দিন। [দেখুন, সূরা ইউনুসঃ ১৫]

কুরআনুল কারীমের উপরোক্ত বাক্যে آية শব্দ দ্বারা উভয় অর্থই হতে পারে। কারণ, কুরআনের পরিভাষায় আয়াত কুরআনের আয়াতকেও আয়াত বলা হয় এবং মু’জিযাকেও। এ কারণেই এ ‘আয়াত’ শব্দের ব্যাখ্যায় কোন কোন তাফসীরবিদ কুরআনী আয়াতের অর্থ ধরে উদ্দেশ্য এরূপ ব্যক্ত করেছেন যে, কোন নবীর এরূপ ক্ষমতা নেই যে, তিনি নিজের পক্ষ থেকে কোন আয়াত তৈরী করে নেবেন। [কাশশাফ; আল-বাহরুল মুহীত, আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] তবে অধিকাংশ মুফাসসির এখানে আয়াতের অর্থ মু’জিযা ধরে ব্যাখ্যা করেছেন যে, কোন রাসূল ও নবীকে আল্লাহ্ তা’আলা এরূপ ক্ষমতা দেননি যে, তিনি যখন ইচ্ছা, যে ধরনের ইচ্ছা মু’জিযা প্রকাশ করতে পারবেন। [তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; সা’দী] আয়াতের সারবস্তু এই যে, আমার রাসূলের কাছে কুরআনী আয়াত পরিবর্তন করার দাবী অন্যায় ও ভ্রান্ত। আমি কোন রাসূলকে এরূপ ক্ষমতা দেইনি। এমনিভাবে কোন বিশেষ ধরনের মু’জিযা দাবী করাও নবুওয়াতের স্বরূপ সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক। সেটা তো আমার কাছে, আমি যখন ইচ্ছা সেটা দেখাই।

এখানে أجل শব্দের অর্থ নির্দিষ্ট সময় ও মেয়াদ। আর كتاب শব্দটির অর্থ গ্রন্থ অথবা লেখা। বাক্যের অর্থ নির্ধারনে কয়েকটি মত আছেঃ

এক. এখানে শরীআতের কথাই আলোচনা হয়েছে। তখন অর্থ হবে, প্রত্যেক সময়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কিতাব আছে। আল্লাহ্ তা’আলা জানেন কখন কোন কিতাবের প্রয়োজন। সে অনুসারে তিনি প্রত্যেক জাতির জন্য তাদের সময়ে তাদের উপযোগী কিতাব নাযিল করেছেন। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা যখন কুরআন নাযিল করলেন, তখন সেটা পূর্ববর্তী সবগুলোকে রহিত করে দিয়েছে। [দেখুন, ইবন আবিল ইয, শারহুত তাহাওয়ীয়্যা, ১/১০১-১০২ বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]

দুই. আয়াতের অর্থ বর্ণনায় প্রসিদ্ধ মত এই যে, এখানে তাকদীরের কথাই আলোচনা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর মেয়াদ ও পরিমাণ আল্লাহ তা’আলার কাছে লিখিত আছে। তিনি সৃষ্টির সূচনালগ্নে লিখে দিয়েছেন যে, অমুক ব্যক্তি অমুক সময়ে জন্মগ্রহণ করবে এবং এতদিন জীবিত থাকবে। কোথায় কোথায় যাবে, কি কি কাজ করবে এবং কখন ও কোথায় তার মৃত্যু হবে, তাও লিখিত আছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ “আপনি কি জানেন না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা জানেন। এ সবই আছে এক কিতাবে; নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর জন্য সহজ। [সূরা আল-হাজ্জঃ ৭০] [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]

অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা যা ইচ্ছে তা পরিবর্তন করে অন্য কিছু নাযিল করেন, আবার যা ইচ্ছে তা ঠিক রাখেন। এটা সম্পূর্ণই তার ইচ্ছাধীন। শরীআতের মধ্যে পরিবর্তন পরিবর্ধন করার সম্পূর্ণ ইখতিয়ার তাঁরই। তবে কোন জিনিস পরিবর্তন করবেন আর কোনটি পরিবর্তন করবেন না, কোন হুকুমকে অন্য হুকুমের পরিবর্তে নাযিল করবেন আর কোনটিকে পুরোপুরি রহিত করবেন সে সবই তাঁর কাছে যে মূল কিতাব আছে সে অনুসারেই হবে। সেখানে কোন পরিবর্তন নেই। [ইবন কাসীর, ইবন আব্বাস ও কাতাদা হতে]

এখানে (أُمُّ الْكِتَابِ) এর শাব্দিক অর্থ মূলগ্রন্থ। এর দ্বারা লওহে-মাহফুষ বুঝানো হয়েছে, যাতে কোনরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে পারে না। চাই সেটা শরীআত সম্পর্কিত হোক অথবা তাকদীর সম্পর্কিত হোক। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা তার শরীআতের মধ্য থেকে যা ইচ্ছা তা রহিত করেন। আর যা ইচ্ছে তা নাযিল করেন। কিন্তু মূলটি উম্মুল কিতাব তথা লাওহে মাহফুযে আছে। সেখানে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। অনরূপভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির তাকদীর সম্পর্কে লাওহে মাহফুজে যা লিখা আছে তাতে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। [ইবন কাসীর]

কাফেরদেরকে শাস্তি দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিয়েছেন উক্ত আয়াতে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তাদেরকে শাস্তি দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে সে ব্যাপারে তুমি তাড়াহুড়া করো না। তারা যদি তাদের অবাধ্যতার মাঝে অটল থাকে তাহলে তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই পাকড়াও করবে। হয়তো তুমি দুনিয়াতে তা প্রত্যক্ষ করে চক্ষু শীতল করতে পারবে অথবা তাদের শাস্তি আসার পূর্বে তোমার মৃত্যু হতে পারে। এটা নিয়ে তোমার ব্যস্ত থাকার কোন বিষয় নয়। তোমার দায়িত্ব তাবলীগের কাজ করা, তা করে যাও। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর; যদি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত প্রচার করলে না।” (সূরা মায়েদা ৫:৬৭)

 

সুতরাং রাসূলের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেয়া, কাউকে হেদায়েত করা নয়। হেদায়েত করা, শাস্তি দেয়া, রহমত করা, মানুষের হিসাব নিকাশ করা এ সমস্ত দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার অন্য কারো নয়। কারণ সকলকে একদিন আল্লাহ তা‘আলার কাছেই ফিরে যেতে হবে। সেদিন তিনি তাদের হিসাব গ্রহণ করবেন এবং তদানুযায়ী প্রতিদান দিবেন। তারা কি দেখে না যে, জমিনকে সংকুচিত করা হচ্ছে অর্থাৎ কাফিরদের থেকে জমিন মুসলিমদের দখলে চলে যাচ্ছে।

অর্থাৎ আপনার বিরোধীরা কি দেখছে না ইসলামের প্রভাব আরব ভূখণ্ডের সর্বত্র দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে? চতুর্দিক থেকে তার বেষ্টনী সংকীর্ণতর হয়ে আসছে? এখানে যমীন সংকুচিত করার আরেক অর্থ এও করা হয় যে, যমীনের ফল-ফলাদি কমিয়ে দেয়া। আবার কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ করেছেন, ভাল লোকদের, আলেম ও ফকীহদের প্রস্থান করা। কারও কারও মতে, এর অর্থ কুফরকারীদের জন্য যমীন সংকুচিত হয়ে ঈমান ও তাওহীদবাদীদের জন্য যমীনকে প্রশস্ত করা হচ্ছে। বাস্তবিকই ধীরে ধীরে ইসলামের আলো আরব উপদ্বীপে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কুফর ও শির্কী শক্তির পতন হয়ে গেছে। অনুরূপ আয়াত আরও দেখুন, সুরা আল আহকাফ: ২৭ [দেখুন, ইবন কাসীর]

আল্লাহই আদেশ করেন, তার আদেশ রদ করার কেউ নেই – অর্থাৎ নির্দেশ আল্লাহর হাতেই। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে যা ইচ্ছা তা নির্দেশ দেন। তিনিই ফয়সালা করেন। যেভাবে ইচ্ছা ফয়সালা করেন। কাউকে মর্যাদায় উপরে উঠান আবার কাউকে নীচু করেন। কাউকে জীবিত করেন, কাউকে মারেন। কাউকে ধনী করেন, কাউকে ফকীর করেন। তিনি ফয়সালা দিচ্ছেন যে, ইসলাম সম্মানিত হবে এবং সমস্ত ধর্মের উপর বিজয়ী থাকবে। [ফাতহুল কাদীর] তার নির্দেশ খণ্ডনকারী কেউ নেই। তাঁর নির্দেশের পিছু নিয়ে কেউ সেটাকে রদ করতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। সেটা অনুসারে কাফেরদেরকে তিনি দ্রুত শাস্তি দিবেন আর মুমিনদেরকে দ্রুত সওয়াব দিবেন। [কুরতুবী]

নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে মক্কাবাসীরা চক্রান্ত করার পূর্বেও অন্যান্য জাতির নিকট যে সকল নাবী-রাসূলগণ এসেছিলেন তাদেরকে নিয়ে সেসব জাতির লোকেরা চক্রান্ত করেছিল। তারা আগত নাবী-রাসূলদেরকে হত্যা করতে চেয়েছিল, দেশ থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের কোন চক্রান্তই আল্লাহ তা‘আলার কৌশলের সম্মুখে টিকতে পারেনি। সুতরাং মক্কার মুশরিকরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বের করে দেয়ার জন্য যতই চক্রান্ত করুক না কেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “স্মরণ কর! যখন কাফিরগণ তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার বা হত্যা করার অথবা নির্বাসিত করার জন্য। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও কৌশল করেন; আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।” (সূরা আনফাল ৮:৩০)

আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষের অবস্থান ও কর্ম সম্পর্কে অবগত। কে ভাল কাজ করছে, কে খারাপ কাজ করছে সব তিনি জানেন, কোন কিছু তারঁ কাছে অস্পষ্ট নয়। এর উপর ভিত্তি করে তিনি প্রত্যেককে তাদের প্রতিদান দিবেন। তখন কাফিররা জানতে পারবে উত্তম পরিণাম কাদের। সুতরাং কুফরী, চক্রান্ত ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে কোনই লাভ নেই।

আর কাফিররা এ কথাও বলে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত নন। অথচ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলেছেন: “আমিই তোমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর এমন কোন উম্মত নেই, যাদের মধ্যে কোন সতর্ককারী আসেনি।” (সূরা ফাতির ৩৫:২৪)

অর্থাৎ যে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন তিনিই সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট এবং যাদের কাছে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের জ্ঞান আছে তারাও। কারণ তারা জানে আমি সত্য রাসূল। পূর্ববর্তী কিতাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সত্যতা বিদ্যমান।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মী নাবীর, যাকে তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত অবস্থায় পেয়েছে।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৫৭) সুতরাং কতক মানুষ রাসূলকে অস্বীকার করাতে কিছু আসে যায় না। আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সত্য বিষয়ে ফায়সালা করবেন।

ফুটনোট 

➤ আল্লাহ অত্যাচারীকে ছাড় দিতে থাকেন তারপর যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তার আর পালানোর কোন পথ থাকে না।

➤ রাসূল সাঃ-এর সাথে এবং তারও আগে অনেক রাসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্‌ কাফেরদের কিছুকাল অবকাশ দিলেও তাদেরকে পাকড়াও করা হয়েছে।

➤ আলোচ্য সূরাতে শিরককে প্রতারণা বলা হয়েছে। মুফাসসিরগণ শিরককে প্রতারণা বলা যে কারণ বলেছেন সেগুলো হলো-

১. যাদের পূজা, ইবাদত করা হচ্ছে যেমন নক্ষত্র, ফেরেশতা, আত্মা বা মহামানব তারা কেউ তো দাবী করেনি যে আল্লাহ্‌র গুণে গুণান্বিত, ক্ষমতাবান অথবা প্রভুত্বের দাপট, অধিকার বা দাবী করে নি। অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু ব্যক্তিরা এসব তৈরী করেছে।

২. এটা মানুষ বৈষয়িক স্বার্থ-পূজা, নৈতিক বিধিনিষেধ থেকে বাঁচা এবং দায়িত্বহীন জীবন যাপন করার জন্য পলায়নের পথ বের করে।

৩. মানুষের প্রকৃতি হলো- নিজের নির্ভুলতা ও সঠিক প্রমাণের জন্য সকল যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপন করে যদিও এটি বাস্তবে ভুল হয়ে থাকে। তেমনইভাবে প্রাকৃতিক রীতি অনুযায়ী মানুষকে সত্যের আহবান জানালেও তা না মেনে পথভ্রষ্টতাকে এবং এ পথভ্রষ্টতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার পক্ষে যুক্তি ও প্রমাণাদি উপস্থাপন করে। এই সত্য পথ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট প্রতারণা।

➤ আখিরাতের শাস্তি যেমন রয়েছে দুনিয়াও শাস্তি রয়েছে। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- অবশ্যই দুনিয়ার আযাব আখেরাতের আযাবের চেয়ে অনেক সহজ।

➤ জান্নাতের নে’আমতসমূহ সর্বদা থাকবে, তাতে কোন অভাব বা কমতি পরিলক্ষিত হবে না।

➤ জান্নাতের ছায়াও চিরস্থায়ী। মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে। জান্নাতে এমন গাছও আছে, যার ছায়ায় অত্যন্ত দ্রুতগামী অশ্বারোহী উন্নত ঘোড়া নিয়ে শত বছর সফর করলেও শেষ করতে পারবে না।

➤ কুরআন মানুষের জীবন-বিধান হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।

➤ সত্য জানার পর তা থেকে বিরত থাকা যাবে না।

➤ ভাল আমল না থাকলে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

➤ রাসূলগণ মাটির তৈরি, নূরের তৈরি নন।

➤ নাবীরা বিবাহ করেছেন, তাদের স্ত্রী সন্তান ছিল।

➤ মু‘জিযাহ নবী-রাসূলগণের নবুওয়াতের প্রমাণ বহন করে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন ।  রাসূলের দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেয়া।

➤ শরীয়ত প্রয়োগ করার অধিকার কেবল আল্লাহ তা‘আলার, অন্য কারো নয়।

➤ পৃথিবীর সব কিছু শেষ হওয়ার মাধ্যমে পৃথিবী সংকীর্ণ হয়ে যাবে।

➤ আখিরাতে মু’মিনদের জন্যই রয়েছে উত্তম পরিণতি।